তিনি যে পাত্রেই যান সে পাত্রেরই আকার ধারণ করেন

ধারাবাহিকতার একটা জলজ্যান্ত মূর্তিতে পরিণত হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শত বঞ্চনার জবাব তিনি ব্যাটে দিতে শুরু করেছেন বেশ কিছু দিন হল। তবে তিনি যেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নিজের সামর্থ্য আর দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে রাখলেন। বারে বারে তিনি মনে করিয়ে দিলেন একেবারেই ফেলনা নন, এতটাও নিন্দার পাত্র নন।

নাজমুল হোসেন শান্ত, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম কাণ্ডারি ভাবা হয় তাঁকে। বয়সভিত্তিক দল থেকেই যার পদচারণা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে। ব্যাটার শান্তর প্রশংসায় পঞ্চমুখ দেশী-বিদেশী সব কোচ। সেই যুব দল থেকেই তাঁকে পরিচর্যার বলয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সবার ধারণা ছিল একদিন তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অমূল্য সম্পদে পরিণত হবেন।

সেই ধারাটা যেন শুরু করে দিয়েছেন শান্ত। তিনি এখন তাঁর পেছনে ব্যয় করা সময় আর অর্থের যথাযথ প্রতিদান দিতে শুরু করেছেন। প্রতিনিয়ত হাসছে তাঁর ব্যাট। শান্তর ব্যাটে ভর করেই বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এগিয়ে গেছে প্রতিটা ম্যাচেই। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে পুরো সাদা বলের সিরিজ জুড়েই দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন শান্ত।

ওয়ানডে সিরিজে দুইটি কার্যকর হাফসেঞ্চুরি এসেছিল। টি-টোয়েন্টি সিরিজে অল্পের জন্য যেন তিনটি অর্ধশতক হয়ে গেল হাতছাড়া। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে শান্তকে থামতে হয় ৪৭ রানে অপরাজিত থেকে। এর আগের দুইটি ম্যাচের একটিতে অবশ্য প্রয়োজনীয় একটি অর্ধশতক করেছিলেন তিনি। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৫৩ রান। গুরুত্বপূর্ণ সেই ৫৩ রানের উপর দাঁড়িয়ে সেদিন ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ।

এরপর লো-স্কোরিং ম্যাচে মিরপুরে তিনি দলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন। ৪৬ রানের ইনিংসটি খানিকটা ধীর গতির ছিল। আগের দিন নিজের স্ট্রাইকরেট নিয়ে ওঠা সকল প্রশ্নের জবাব দিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। দলের প্রয়োজন মাফিক যেকোন রোলেই তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন। নিন্দুকের নিন্দা ঝেড়ে তিনি যেন নিজেকে তরলে পরিণত করেছেন। যে পাত্রেই স্থান, সেই পাত্রের আকার ধারণ।

সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে আবারও খানিকটা হাত চালিয়ে ব্যাট করলেন। শেষ অবধি নিজের অর্ধশতকটা তুলে নিতে পারেননি ঠিকই। কিন্তু রানের ধারা অব্যাহত রাখলেন। নিজের ভাল সময়টায় যতটুকু সম্ভব দলের প্রয়োজনে অবদান রেখে যাওয়ার চেষ্টাটাই করে যাচ্ছেন শান্ত। তিনি যেন টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সমর্থক সবাইকে ব্যাটেই জানাচ্ছেন ‘ধন্যবাদ’।

ব্যাটার শান্তর সামর্থ্য নিয়ে কোন ধরণের দ্বিধা ছিল না কারোই। তবে সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন খোদ শান্তও। সেই সময়টা এসে গেছে। এই সময়টা দীর্ঘায়িত নিশ্চয়ই করতে চাইবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্য শতভাগ লাভবান হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। অন্তত এই ইংল্যান্ড সিরিজে একটা দাগ কেটে রেখে গেলেন শান্ত। শেষ অবধি সিরিজ সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কারটা তো তারই প্রাপ্য। শান্তর এই রানের ধারার তারল্যতা অব্যাহত থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link