পিএসজি সাজবে নতুন রূপে

একের পর এক ব্যর্থতা। শেষ ৫ চ্যাম্পিয়নস লীগে ৪ বারই রাউন্ড অফ সিক্সটিন থেকে বিদায়। অথচ এই অধরা চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতার জন্যই কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করেছিল ফ্রেঞ্চ ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)।

দলের আক্রমণভাগে মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে ট্রায়ো নিয়ে সেই স্বপ্নও দেখেছিল প্যারিসের ক্লাবটা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই স্বপ্নের পথে ব্যর্থতার অধ্যায়েই আটকে আছে পিএসজি। শোনা যাচ্ছে, আগামী মৌসুম থেকে দলকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। সামনের সামার ট্রান্সফার উইন্ডোতে তাই আটঘাট বেধেই নামবে পিএসজি।

এখন পর্যন্ত পিএসজি’র পছন্দের তালিকায় আছেন বহু তরুণ ফুটবলার। বুঝাই যাচ্ছে, ভবিষ্যতের দল গঠন করতেই এবারের দলবদলের বাজারে তরুণ ফুটবলারদের উপরে নজরে রাখছে পিএসজি।

সেই লক্ষ্যে,  এসি মিলানের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম পার করা ২৩ বছর বয়সী রাফায়েল লিয়াওকে দলে পেতে চায় পিএসজি। তবে লিয়াওকে দলে ভেড়াতে চায় ইংলিশ ক্লাব চেলসিও। তাই লিয়াওকে দলে টানতে হলে চেলসির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামতে হবে প্যারিসিয়ানদের।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে দুর্দান্ত এক মৌসুম পার করছেন মার্কাস রাশফোর্ড। এই মৌসুমেই রেড ডেভিলদের সাথে তাঁর চুক্তি শেষ হতে যাচ্ছে। তবে চুক্তি নবায়নের আগেই ফর্মে থাকা এ লেফট উইংগারকে বাগিয়ে নিতে চাইছে ইউরোপের অনেক ক্লাব। সেই তালিকায় আছে পিএসজিও। অবশ্য এসব কিছুই হবে না, যদি ম্যানইউ আবারো রাশফোর্ডের সাথে চুক্তি নবায়ন করে। ম্যানইউ কোচ এরিক টেন হ্যাগ তো বহু আগেই রাশফোর্ডের চুক্তি নবায়নের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি।

রাশফোর্ডকে না পেলে পিএসজি চোখ রাখতে পারে বার্সার আনসু ফাতির উপর। শোনা যাচ্ছে, এই মৌসুম শেষেই ফাতিকে ছেড়ে দিতে পারে বার্সেলোনা। ২০ বছর বয়সী এ লেফট উইংগারকে তাই ভবিষ্যৎ বিবেচনায় দলে ঢোকাতেই পারে পিএসজি। অবশ্য তার জন্য বেশ বেগ পেতে হবে প্যারিসিয়ানদের। কারণ এর মধ্যেই ফাতিকে দলে নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বেশ কিছু ইংলিশ ক্লাব।

একজন পুরোদস্তুর নাম্বার নাইন হিসেবে পিএসজির রাডারে আছেন নাপোলির ভিক্টর অসিমহেন। চলতি মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন এ নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড। তবে অসিমহেনকে দলে টানতে এরই মধ্যে কথাবার্তা এগিয়ে রাখছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তাই পিএসজি’র জন্য অসিমহেনকে দলে ভেড়ানোর দৌড়টা মোটেই সহজ হচ্ছে না। টাকার খেল দেখাতে হবে রেড ডেভিলদের সাথে।

বরাবরই ফ্রেঞ্চ তরুণদের দলে ভেড়াতে উদগ্রীব হয়ে থাকে পিএসজি। এবারের ট্রান্সফার উইন্ডোতেও খোলা থাকছে সেই সুযোগ। ফ্রাঙ্কফুটের হয়ে খেলা ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার রান্ডাল কোলো মাউনিকে তাই দলে টানতে পারে পিএসজি। কোলো মাউনির বিশেষত্ব হলো, তিনি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, উইঙ্গার, স্ট্রাইকার- তিন রোলের খেলতে পারেন। বুন্দেসলিগার চলতি মৌসুমে দারুণ ফর্মে রয়েছেন এ ফুটবলার। প্যারিসিয়ানরা তাই ফ্রেঞ্চ এ স্ট্রাইকারের উপর নজর রাখতেই পারে।

এই মুহূর্তে পিএসজিকে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে মিডফিল্ডের দুর্বলতা। আর এ দুর্বলতা কাটাতেই অলিম্পিক লিওর অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার রায়ান ছেরকির সাথে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে পিএসজি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মৌসুমেই পিএসজির জার্সি গায়ে মাঠে নামতে পারেন ফ্রেঞ্চ এ মিডফিল্ডার। একই সাথে আরেক ফ্রেঞ্চ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কৌদিও কোনেকে দলে ভেড়াতে পারে পিএসজি। বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখের এই মৌসুমেই তাঁর চুক্তি শেষ হচ্ছে।

২০২২ বিশ্বকাপে রক্ষণভাগে নজর কেড়েছিলেন ক্রোয়াট ফুটবলার জোস্কো গ্যাভির্দিওল। লিপজিগের হয়ে খেলা এ ফুটবলারকে এবার দলে ভেড়ানোর দলে রয়েছে বেশ কটি দল। সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারে পিএসজিও। কারণ এই মুহূর্তে পিএসজির রক্ষণভাগে এমন ডিফেন্ডারকেই প্রয়োজন। তাছাড়া পিএসজির সেন্টার ব্যাকে খেলা মার্কিনিওসের বয়সটাও বাড়ছে। তাই দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনায় গ্যাভির্দিওলকে দলে ভেড়াতে পারে পিএসজি। এজন্য অবশ্য তাদের টাকার খেলায় নামতে হবে আরো বেশ কয়েকটা বড় ক্লাবের সাথে।

আগামী জুন থেকে শুরু হবে গ্রীষ্ককালীন দলবদলের বাজার। চলবে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যেই দল গোছানোর কাজ শেষ করতে হবে দলগুলোকে। বেশ কয়েকটা ক্লাবের জন্য এ আগামীর ট্রান্সফার উইন্ডো বেশ গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। সেই তালিকায় পিএসজিও অন্যতম। এখন দেখার পালা, দল কতটা গুছিয়ে উঠতে পারে প্যারিসিয়ানরা। দল ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় অবশ্য তাদের সামনে প্রতিকূলতায় রয়েছেও অনেক। কারণ পছন্দের খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে তাদের প্রতিযোগিতায় নামতে হবে অন্য ক্লাবগুলোর সাথেও।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link