‘এফইসি’ – সেই শৈশব থেকেই সতীর্থরা তাঁকে ডাকেন এই নামে। বড় বেলায় অবশ্য সেই নামে আর ডাকার সুযোগ ছিল না। কারণ, সেদিনের ‘ফিউচার ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন’ মানে জো রুট আজ ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ জয়ী নেতা।
আর তিনি যে ইংল্যান্ডের নেতা হতে যাচ্ছেন, সেটা বয়স যখন ২৩ তখন থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে। তাই, ২০১৬-১৭ মৌসুমে ভারত সফরের পর অ্যালিস্টেয়ার কুক যখন ইতি টানলেন তখন, নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা করতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি)। রুট হলেন সেই গুটিকয়েক ইংলিশ ক্রিকেটারদের একজন যারা খুব অল্প বয়সেই পরিপক্বতা অর্জন করেছেন – হোক সেটা ব্যাটিংয়ে কিংবা অধিনায়কত্বে।
নীল চোখ, নিষ্পাপ চাহনী, শান্ত নির্ভার শারীরিক ভঙ্গি – কোনো কিছুই জোসেফ এডওয়ার্ড রুটের ক্ষুরধার ব্যাটিংয়ের সাথে যায় না। ব্যাট হাতে তিনি বরাবরই বাইশ গজের সময়ের সেরা। কেন উইলিয়ামসন, বিরাট কোহলি, স্টিভেন স্মিথদের সাথে ‘ফ্যাবুলাস ফোর’ হিসেবে তাঁর নাম উচ্চারিত হয় অনেকদিন হল।
ক্রিকেটটা তাঁর রক্তের সাথেই মিশে আছে। রুটের দাদা জিওফ ইয়র্কশায়ার লিগে রটারডাম দলের অধিনায়ক ছিলেন। জিওফের ছেলে ম্যাট মানে রুটের বাবা খেলেছেন শেফিল্ড কলেজিয়েট দলে। ম্যাট আর হেলেন দম্পতির বড় ছেলে রুট। ছোট ভাই বিলি রুট কাউন্টি খেলেন ইয়র্কশায়ারের হয়ে।
পরিবারের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন রুট। বাবার মত যোগ দেন শেফিল্ড কলেজিয়েটে। সেখান থেকে রুটের মতই ক্রিকেটের সূচনা হয়েছিল সাবেক ইয়র্কশায়ার ব্যাটসম্যান ও ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভনের। মাত্র ১৫ বছর বয়সে স্কলারশিপ নিয়ে ওয়ার্কশিপ কলেজে খেলতে যান রুট। পরবর্তী সময়ে এই ভনকেই আদর্শ মেনেছেন রুট। যদিও, কীর্তিতে তিনি নিজের মেন্টরকে ছাড়িয়ে গেছেন বহু আগেই।
ইয়র্কশায়ারের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে ২০০৭ সালের ১৮ জুলাই তাঁর অভিষেক হয়। ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ৫৭ রান, ওপেনিং জুটিতে অ্যাডাম লিথের সাথে ১৩৩ রানের জুটি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি তাঁকে।
কাউন্টি ক্রিকেটে নিয়মিত পারফরম করার সুবাদে সালের ডিসেম্বরে হয়ে যায় টেস্ট অভিষেক। অভিষেক টেস্টেই নাগপুরের বিরুদ্ধে কন্ডিশনে ২২৯ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে জানিয়ে দেন – আমি এসেছি চূড়ায় উঠতে!
২০১০ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেন জো রুট। সেই দলে ছিলেন তাঁর বর্তমান সময়ের সতীর্থ বেন স্টোকস ও জশ বাটলার। বলা যায়, এই তিন জনের হাত ধরেই এখন এগিয়ে যাচ্ছে ইংলিশ ক্রিকেট। সেই বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে ১৩৮ রান করেন রুট। টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড হয় অষ্টম।
যদিও, যুব পর্যায়ের আক্ষেপ রুট মিটিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। টানা ১১ টেস্ট ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলার বিরল কীর্তি তাঁর আছে, আছে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাত হাজার রানের মাইলফলক। ২০২১ সালে অল্পের জন্য এক পঞ্জিকাবর্ষে টেস্টের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা ছুঁতে গিয়ে পারেননি। কে জানে, ক্যারিয়ার শেষ করার সময় হয়তো সাদা পোশাকে ইংল্যান্ডের সব রকম রেকর্ডই নিজের করে নিতে পারবেন।
রুট কখনোই পাওয়ার হিটার নন, কিংবা খুব বেশি অ্যাথলেটিকও নন। কিন্তু, তাঁর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচটা খুবই সিস্টেমেটিক। তাই, একদম ইনিংসের প্রথম বল থেকেই তিনি চেপে বসতে পারেন বোলারের ঘাড়ে। শুধু শুধু তো আর স্বয়ং জিওফ্রে বয়কট রুটের মাঝে নিজের তারুণ্যকে খুঁজে পান না!