এটাই যেন পৃথিবীর নিয়ম। নদীর একপাশে যখন ভাঙ্গন, ঠিক অপর পাশে নতুন করে গড়ে উঠে জনপদ। সেই রুপকের বাস্তবিক চিত্রায়ন করল ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ। ইমরুল কায়েসের ব্যাটে রান এসেছে অন্যদিকে সৌম্য সরকার ধারাবাহিক নিজের রান খরায়।
ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার, দু’জন বাংলাদেশের ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ। জাতীয় দল থেকে দু’জনই ব্রাত্য। তবে পেছনের কারণ দুই জনের ক্ষেত্রেই ভিন্ন। সৌম্য প্রবল সম্ভাবনার দুয়ার খুলেই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। তবে ব্যর্থতার বেড়াজাল ছিড়ে তিনি বেরিয়ে আসতে পারেননি।
বহু চেষ্টা করেও তিনি নিজেকে আর মেলে ধরতে পারেননি। ইমরুলের ঘটনা আবার ভিন্ন। কোন এক অজানা কারণে তিনি জাতীয় দলে প্রাপ্য সুযোগটুকু পাননি। এই দু’জনের গল্প ভিন্ন হলেও তাঁরা দুইজন মিলেছেন এক বিন্দুতে। এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ইমরুল ও সৌম্যর ঠিকানা মোহামেডান।
বুধবার হাই ভোল্টেজ ম্যাচে, মিরপুরে মুখোমুখি আবহানী ও মোহামেডান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইমরুল কায়েস ও মাহিদুল অঙ্কনের বড় জুটিতে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছিল মোহামেডান। সেই যাত্রায় মন্থর গতিতে ব্যাটিং করেছেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। ওপেনিং করতে নেমে তিনি ৬৮ রান করেছেন। খরচা করেছেন ৯৬টি বল। অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতিতে রান তুলেছেন অঙ্কন।
তবে মিরপুরের উইকেটে এদিন স্লথ গতিতে ইমরুলের ব্যাটে রান এলেও সৌম্য যথারীতি ফিরেছেন বলতে গেলে খালি হাতেই। ছয় বল খেলে মাত্র এক রানে আউট হয়েছেন সৌম্য। নিজেকে হারিয়ে খোঁজার প্রয়াসটায় কোনভাবেই যেন সমীকরণ মেলাতে পারছেন না তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয় দলে পরিবর্তনের সুর বেশ প্রবল। জাতীয় দলের ওয়ানডে ও টেস্ট ওপেনার তামিম ইকবালের ক্যারিয়ার আরও খানিকটা বিস্তৃতি লাভ করবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীন। সেদিক বিবেচনায় জাতীয় দল নতুন কাওকে থিতু করতে চাইবে লিটন দাসের সঙ্গী হিসেবে। সে দৌড়ে একটা সময় সৌম্য সরকার ছিলের সবার চাইতে এগিয়ে। তবে ক্রমশ অন্ধকার এক পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন সৌম্য।
অন্যদিকে বয়স বিবেচনায় ইমরুলের জাতীয় দলের অধ্যায় প্রায় শেষ। প্রাপ্য সুযোগটুকু তিনি পাননি সে কথা ঠিক। তবে এখন নতুন করে সুযোগ পাওয়ার পথটা বেশ সংকীর্ণ। তবুও এই দুই ব্যাটারই নিশ্চয়ই নিজেদের প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিতে চেয়েছেন এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগকে।
তবে কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের দেখা কি আদৌ তাঁরা পাচ্ছেন? বিশ্ব ক্রিকেটের ধাবমান বিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেরদেরকে ছাপিয়ে যেতে যেন পারছেন না এদের কেউই। ইমরুল তাও বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে সৌম্য হাটছেন উল্টো পথে। নিজের সমস্যার কোন সমাধান এখন অবধি খুঁজে পাননি বাম-হাতি এই ব্যাটার।
সৌম্যের ব্যাটিং ব্যাকরণ নিয়ে প্রশ্ন নেই। সন্দেহ নেই তাঁর সম্ভাবনা নিয়েও। তিনি জাতীয় দলের বিবেচনায় আছেন নিশ্চয়ই। তবে তাঁর পারফরম করাটা বড্ড বেশি জরুরী। সেই কাজটাই যেন করতে পারছেন না সৌম্য সরকার।
সৌম্য নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশনে ঠিক কতদূর এগিয়ে যাবেন সেটা না হয় সময়ই বলে দেবে। তবে ইমরুল ঘরোয়া ক্রিকেটের একজন কিংবদন্তি হয়ে শেষ করবেন নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ার, সে কথা বলে দেওয়াই যায়।