একারণেই সাকিব বাংলাদেশের ‘গ্রেটেস্ট’

বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয় সাকিব আল হাসান। দারুণ সব পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে একা হাতে জিতিয়েছেন বহু ম্যাচ। তবে কেবল মাঠের পারফরম্যান্স নয়, মাঠের বাইরের নানা কর্মকাণ্ডেও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন সাকিব। এবারে সাকিবের ৩৬ তম জন্মদিনে তেমনই এক ঘটনার কথা জানালেন আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের তৎকালীন টিম ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য। 

২০১১ সালে প্রথমবারের মতো আইপিএলে দল পান সাকিব আল হাসান। সেবারে ভিত্তিমূল্য ১ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে তাঁকে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। তাঁদের হয়ে ২০১২ এবং ২০১৪ মৌসুমে আইপিএলে শিরোপার স্বাদ পান সাকিব। ২০১৮ সালে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ তাঁকে দলে ভেড়ানোর আগ পর্যন্ত ছিলেন কলকাতার ডেরাতে। তবে এবারের মৌসুমে তাঁকে আবারো দেখা যাবে কলকাতার জার্সিতে।

ঘটনাটা হলো ২০১২ সালের। সেবার সাকিব খেলছিলেন কলকাতার হয়ে। সেবারে ভারতে খেলার ফাঁকে পুরো দল মিলে একবার কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড ‘রিবক’ এর শো রুমে। ঘটনাটা ঘটে সেখানেই, জয় লক্ষ্য করেন দলের বেশিরভাগ সদস্যই মন খুলে কেনাকাটা করলেও সাকিবের হাতে মাত্র একটা ব্যাগ। অথচ দলের বাকি সদস্যরা প্রায় ৬-৭ ব্যাগভর্তি করে জুতা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম কিনেছেন। 

সেই সময়ে সাকিবের মিতব্যয়ীতা দেখে প্রশংসা করতে যান জয়। তখন তাঁকে অবাক করে দিয়ে সেখানে আবির্ভাব ঘটে শো রুমের এক স্টাফের যিনি কিনা এক ট্রলি ভর্তি জিনিসপত্র নিয়ে সাকিবের পেছনে হাঁটছেন। জয়ের আর ঘটনা বুঝতে বাকি থাকে না, অট্টহাসিতে ফেটেন পড়েন কলকাতার টিম ডিরেক্টর। 

তবে, কিছুদিন পরেই জয় পরিচয় পান সাকিবের উদার মনের। জানতে পারেন সেদিনের আসল ঘটনা। সাকিবের জন্মদিনে টুইটারে সেই ঘটনা স্মৃতিচারণ করে জয় লিখেন, ‘কয়েকদিন বাদেই আমি জানতে পারি সেদিনের সরঞ্জাম আসলে সাকিবের নিজের জন্য নয়। সে মূলত বাংলাদেশ জাতীয় দলের তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের জন্য কিনেছে। তখনকার সময় ফ্যাঞ্চাইজি লিগের এতটা উত্থান ঘটেনি এবং সাকিব যেখানেই খেলতে যেতো, সতীর্থদের জন্য কেনাকাটা করতো।’ 

এছাড়াও সাকিবের শুরুর দিকের ঘটনাও স্মরণ করেন জয়। টুইটে লিখেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ক্রিকেটারদের একজন সাকিব। ২০০৭ বিশ্বকাপের কথাই ভাবুন না, বোর্ড পরীক্ষার মাত্র মাত্র ১৭ দিন আগে এক তরুণ বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে কি অবলীলায় ম্যাচজয়ী এক ইনিংস খেলে ফেললো। এরপর দিনে প্রায় ১৮ ঘন্টা পড়াশোনা করে পরীক্ষাতেও সম্মানজনক এক ফলাফল করলো।’

এখানেই তো সাকিব সবার থেকে আলাদা। যা করেন, সেটাতেই দেন সবটুকু মনোযোগ। যাই করেন সেখানেই তিনি সেরা। তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত সেরা এমনি এমনি হননি।

সতীর্থদের প্রয়োজনে এরপরও অবশ্য সাকিব এগিয়ে এসেছেন বারবার। জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটারদের নানা সমস্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বারবার। তা সত্ত্বেও মাঠের পারফরম্যান্সে কখনো ভাটা পড়েনি তাঁর, দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে খেললেও কখনোই পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেননি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাকিবকে কেবল মাঠের পারফরম্যান্স নয়, বরং মনে রাখবে গোটা এক প্রজন্মকে ক্রিকেটে অনুপ্রাণিত করার জন্য। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link