বাংলাদেশ এখন মাঠে নামলেই যেন গড়ে নতুন সব রেকর্ড। হয় বিশ্ব ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ের ধুলো জমা পাতায় আবার কালির আঁচড় পড়ে। না হয় দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসটা আরও খানিকটা সমৃদ্ধ হয়। ঠিক তেমনই এক রেকর্ডের ম্যাচ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি।
এদিন চট্টগ্রামের আকাশে মেঘের আনাগোনা ছিল সকাল থেকেই। একটা সময় মেঘ কেটে যায়। সূর্য তাঁর প্রতাপ আবার দেখাতে শুরু করে। পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের তাপ কমে, কিন্তু এর আগে থেকেই নিজেদের একটা আলাদা আলোকরশ্মি ছড়িয়ে দিতে থাকে টাইগাররা। আরও একটি দিন নিজেদের একান্ত করে নেয় সাকিব-লিটনরা।
টসে হেরে ব্যাটিং পায় বাংলাদেশ। ব্যাস! রেকর্ডের সূত্রপাত। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের একটা মন্ত্র খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই নিজেদের আগ্রাসনের প্রকাশ ঘটাতে একটুও পিছপা হচ্ছেন না লিটন দাস ও রনি তালুকদার। এই দুই ব্যাটারের উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ডের ফুলঝুরি। প্রথমত টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে ছুঁয়ে ফেলে ৫০ রানের মাইলফলক।
মাত্র ২১ বলে রেকর্ডটি নতুন করে লেখে টাইগার দুই ওপেনার। আগের রেকর্ডের প্রতিপক্ষও ছিল আয়ারল্যান্ড। ২০১৬ সালে আইরিশদের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার জুটি ২৪ বলে রেকর্ডটি গড়েছিল। দীর্ঘ একটা সময় পর সেই রেকর্ডটি নিজেদের করে নিয়েছে লিটন আর রনি জুটি। সেখানেই থেমে যাবে এই জুটি সেটা ভাবা যেন নিতান্তই বোকার স্বর্গে বাস করা।
তাঁরা থামলেন না। এই জুটি এগিয়ে গেল দ্রুততম দলীয় শতরান গড়ার লক্ষ্যে। সফলতা এসে ধরাও দেয় ৪৩ তম বলে। আগের রেকর্ডটিও এই সিরিজেই গড়েছিল বাংলাদেশ, রনি ও লিটন দাসের কল্যাণে। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫৩ বলে শতরানের গণ্ডি পেরিয়ে যায় টাইগাররা। এখানেই শেষ লিটন-রনির জুটির কীর্তি?
না মশাই, আরেকটু বাকি। এই দুই ব্যাটার মিলে আইরিশ বোলারদের উপর তাণ্ডবনৃত্য করেছেন। দিশেহারা বানিয়েছেন গোটা আইরিশ বোলিং ইউনিটকে। ১২৪ রানের দুর্ধর্ষ এক পার্টনারশিপের শেষটাও রেকর্ড গড়েই হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বাধিক রান এসেছে এদিন। আগের রেকর্ডের মালিক নাঈম শেখ আর সৌম্য সরকার। ১০২ রান এসেছিল এই দুইজনের উদ্বোধনী জুটি থেকে। ২০২১ সালের সে ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল আট উইকেটের ব্যবধানে।
না, এই অদম্য জুটিটা খুব অল্পতেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে নারাজ। অন্তত ২৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের গতি লিটন-রনির দখলে। প্রায় ১৩.২৮ রেটে রান তুলেছে লিটন ও রনি। এর আগে ১৩.০৭ রানরেটে রান এসেছিল তামিম-সৌম্য ও তামিম-লিটন জুটি থেকে। স্রেফ একটা ধ্বংসজজ্ঞ চালিয়েছে লিটন ও রনির এই জুটি।
এই ধ্বংসলীলায় একটি ব্যক্তিগত রেকর্ড নিজের দখলে নিয়েছেন লিটন দাস। প্রায় ১৬ বছর আগের এক রেকর্ড ভেঙে ফেলেছেন তিনি। ২০০৭ সালে ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ডটা এখন লিটন নিয়েছেন নিজের দখলে। তিনি মাত্র ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছেন।
তাঁর সেই দ্রুতগতির ইনিংসের সাথে মানানসই ভঙ্গিতেই ব্যাট করেছেন রনি তালুকদারও। তাইতো দুইজনের মেলবন্ধনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়া হয়ে যায় অনায়াসে। তাছাড়া শুরুতেই এমন দ্রুতগতির মারকুটে ব্যাটিংয়ের বদৌলতে টানা দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২০০ রানের গণ্ডি পেরিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদিকে টপকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক এখন সাকিব আল হাসান।
চারিদিকে কেবল রেকর্ডের ফুলঝুরি। সঞ্জিবনী এক সুধা পান করেছেন গোটা বাংলাদেশ দল। নিজেদের স্লথ গতির ক্রিকেটকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর দিকে। বিবর্তনের সাথে একটু দেরিতে যোগ দিয়েছে টাইগাররা। তবে এখনও তো ফুরিয়ে যায়নি সময়।