‘চ্যাম্পিয়ন’ হয়ে গতবার যেখানে শেষ হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু হলো গুজরাট টাইটান্সের এবারের আইপিএল যাত্রা। আইপিএলের ১৬ তম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে উত্তেজনার উত্তাপ ছড়িয়ে চার বারের চ্যাম্পিয়ন ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে হার্দিক পান্ডিয়ার গুজরাট টাইটান্স।
টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি চেন্নাই সুপার কিংসের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই মোহাম্মদ শামির দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ডেভন কনওয়ে। আর কনওয়েকে আউট করার মধ্য দিয়ে আইপিএল ক্যারিয়ারে শততম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন শামি।
অবশ্য শুরুতে উইকেট হারালেও চেন্নাইয়ের আরেক ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় ঠিকই দলের রানের চাকা সচল রাখেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন তিনে নামা মঈন আলী। দারুণ সাবলীল ব্যাট করতে থাকা ইংলিশ এ ব্যাটার অবশ্য নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। রশিদ খানের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত ২৩ রানে সাই কিশোরের হাতে ধরা দেন তিনি।
মঈন আলী ফিরে গেলে উইকেটে আসেন আসরের অন্যতম দামী ক্রিকেটার বেন স্টোকস। কিন্তু তিনিও রশিদ খানের স্পিনে পরাস্ত হয়ে ব্যক্তিগত ৭ রানে সাজঘরে ফিরে যান। একই পথ ধরেছেন আম্বাতি রাইডুও। বড় এক ছক্কা দিয়ে শুরু করলেও ইনিংস আর বড় করতে পারেননি তিনি। ১২ রানেই প্যাভিলিয়নে পথ ধরতে হয়েছে তাঁকে।
চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের এমন আসা যাওয়ার মিছিলে ব্যতিক্রম ছিলেন ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড়। দল নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও ঠিকই বোলার উপর চড়াও হয়েছেন বারবার। চারের চেয়ে ছক্কা মেরে বল গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের মাঝে ফেলার দিকেই যেন লক্ষ্য ছিল এ ব্যাটারের।
ব্যক্তিগত অর্ধ-শতক পূরণ করেন ২৩ বলে। এরপর সেই একই গতি ধরে রেখে হেঁটেছিলেন শতকের পথেও। কিন্তু আলজারি জোসেফের বলে আউট হয়ে শেষ পর্যন্ত ৪ চার আর ৯ ছক্কায় ৫০ বলে ৯২ রানের ইনিংসে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় এ ওপেনারকে।
গায়কোয়াড় আউট হওয়ার পর চেন্নাইয়ের রানের গতিও কিছুটা কমে যায়। এ দিন শিভাব দুবে, রবীন্দ্র জাদেজা- কেউই ব্যাট হাতে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি। শেষ দিকে ধোনির ১৪ রানের ক্যামিওতে ১৭৮ রানের সংগ্রহ পায় চেন্নাই সুপার কিংস।
চেন্নাইয়ের ইনিংস শেষ হওয়ার পরই দেখা মিলে আইপিএলে অভিনব নিয়মের প্রয়োগ। আইপিএল ইতিহাসের প্রথম ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে মাঠে নামেন তুষার দেশপান্ডে। অবশ্য আম্বাতি রাইডুর বদলে নেমে সুবিধা করে উঠতে পারেননি তুষার। নিজের প্রথম ওভারেই ১৫ রান হজম করেন এই বোলার। পরেও তেমন সফল হননি। সব মিলিয়ে ৩.২ ওভারে নিজের বোলিং ফিগার শেষ করেছেন ৫১ রানে। তাই যে ভাবনায় চেন্নাই তাঁকে মাঠে নামিয়েছিল তা এক প্রকার বিফলেই যায়।
অবশ্য এ দিনে চেন্নাইয়ের অন্য বোলাররাও তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেননি। ১৭৯ রানের লক্ষ্যে গুজরাট টাইটান্সকে শুরুতেই উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা আর শুভমান গিল। ঋদ্ধিমান সাহা ইনিংস তেমন বড় করতে না পারলেও অপর ওপেনার শুভমান গিল ঠিকই অর্ধ-শতক পূরণ করেন।
ঋদ্ধিমান সাহা ফিরে গেলে গুজরাট টাইটান্সের ইম্প্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে তিনে নেমে গিলকে ভালই সঙ্গ দিচ্ছিলেন সাঁই সুদর্শন। দুজনের জুটি থেকে আসে ৫৩ রান। তবে দারুণ শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি সাঁই সুদর্শন। রাজবর্ধনের বলে উইকেটরক্ষক ধোনির কাছে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ২২ রানে। সাঁই সুদর্শনের পরে উইকেটে এসে অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়াও বেশক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। জাদেজার বলে সুইপ শটের চেষ্টায় লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি।
আর এরপরেই কিছুটা চাপে পড়ে যায় গুজরাট টাইটান্স। অবশ্য তখনও উইকেটে টিকে ছিলেন শুভমান গিল। অর্ধ-শতক পূরণের পর এক প্রান্ত উইকেট আগলে রেখে চাপমুক্ত ব্যাটিংই করছিলেন তিনি। তবে চেন্নাইয়ের হয়ে বিকল্প নামা তুষার দেশপাণ্ডের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের কাছে ধরা দেন তিনি। ৩৬ বলে ৬৩ রানে শেষ হয় তাঁর ইনিংস।
গিল আউট হয়ে ফিরে গেলেও বিজয় শঙ্করের ব্যাটে চেপে ম্যাচ জয়ের পথে ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল গুজরাট টাইটান্স। কিন্তু ১৮ তম ওভারের শেষ বলে আউট শঙ্কর আউট হয়ে ফিরে গেলে ম্যাচ জমে ওঠে তখনই। দারুণ ভাবে ম্যাচে ফিরে আসে চেন্নাই সুপার কিংস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রশিদ খানের শেষ মুহূর্তের ক্যামিওতে আর জিততে পারেনি ধোনির দল। ৪ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় গত বারের চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্স।