সূর্যোদয় কি আর হবে না!

একেই বুঝি বলে মুদ্রার আরেক পিঠ দেখা! ২০২২ সাল জুড়ে রীতিমত উড়ছিলেন সুরিয়াকুমার যাদব। ক্রমেই ব্যাট হাতে বোলারদের সামনে হয়ে উঠছিলেন আতঙ্কের ধ্রুব এক নাম।

তাঁর ব্যাটিংয়ে এবি ডি ভিলিয়ার্সের নতুন এক ছাপ খুঁজে পেয়েছিল ক্রিকেট অনুরাগীরা। সুরিয়াকুমার যাদবও দুরন্ত গতিতে ছুটে চলছিলেন। বাবর, রিজওয়ানদের হটিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেরার ব্যাটারের জায়গাটা নিজের করে নিয়েছিলেন।

২০২২ এর সেই ফর্ম টেনে এনেছিলেন ২০২৩ এর শুরুতেও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পরপর দুই ম্যাচে অর্ধশতক আর সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দাপট দেখিয়ে লাল বলের ক্রিকেটের দলেও জায়গা পেতে কালক্ষেপণ হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতেই মিলল সুযোগ।

কিন্তু পা হড়কানোর শুরু সেখান থেকেই। অভিষেক টেস্টে মোটে ৮ টা রান যোগ করতে পারলেন নিজের নামের পাশে। এরপর আর দলেই জায়গা পেলেন না। তবে, অজিদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে আবারো ফিরলেন। কিন্তু এ ফেরায় যুক্ত হলো আরো বিব্রতকর চিত্র। ব্যাট হাতে উড়তে থাকা সুরিয়াকুমার যাদব হঠাৎই স্টার্কদের সামনে অসহায় হয়ে পড়লেন। শূন্যের সাথে তৈরি হলো তিক্ত এক সখ্যতা।

অস্ট্রেলিয়ার  বিপক্ষে সিরিজের তিন ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হলেন সুরিয়াকুমার যাদব। শুধু কী শূন্য, সব ম্যাচেই আউট হলেন প্রথম বলে! আর এখানেই সুরিয়াকুমার যাদবের পাশে লেখা হয়ে হয়ে গেল বিব্রতকর এক রেকর্ড। দ্বিপক্ষীয় তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের সব কটিতেই শূন্য রানে আউট—ওয়ানডে ক্রিকেটে ইতিহাসে এমন ঘটনা যে এই প্রথম।

ওয়ানডে ক্রিকেটটাই অবশ্য এখন পর্যন্ত সুরিয়াকুমার যাদবের জন্য কোনো পয়া ফরম্যাট নয়। পরিসংখ্যান অন্তত সেটিই ইঙ্গিত দেয়। এই ফরম্যাটে খেলা সর্বশেষ ১৫ ইনিংসে তাঁর সর্বোচ্চ রান ৩৪। সব মিলিয়ে ২১ ইনিংসে করেছেন মাত্র দুটি ফিফটি, গড় ২৪.০৫। যেখানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪৬ ইনিংসেই করেছেন ১৩ টা ফিফটি। আর গড়টা ৪৬.৫২। একই সাথে স্ট্রাইকরেটও দুর্দান্ত, ১৭৫.৭৬।

ওয়ানডে ক্রিকেটের সাথে তাল না মেলানো সুরিয়াকুমার যাদব টি-টোয়েন্টি দিয়ে আবারো ফর্মে ফিরবেন, এমনটাই ভাবনা ছিল সবার। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে তাঁর শুরুটা বলছে ভিন্ন কথা। বলা যেতে পারে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ব্যর্থতার বলয় থেকে এখনও ফিরতে পারেননি এ ব্যাটার।

এখন পর্যন্ত ২ ম্যাচে সব মিলিয়ে করেছেন ১৬ রান। এখনই ‘ব্যর্থ’ বলে রায় দিয়ে দেওয়া নিশ্চিতভাবেই অনুচিত। তবে সুরিয়ার ব্যাটিংয়ে এখন আগের আত্মবিশ্বাসী অ্যাপ্রোচটা অনেকাংশেই অনুপস্থিত। খুব সম্ভবত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাজে একটা সিরিজই তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরনে একটা রদবদল এনেছে। যেখান থেকে তিনি সহসায় বের হতে পারছেন না।

তবে, টি-টোয়েন্টির নাম্বার ওয়ান ব্যাটারকে ফর্ম হারিয়ে ফর্মে ফেরা মঞ্চটাও নিজেই প্রস্তুত করতে হবে। এজন্য সুরিয়াকুমার যাদব অনুপ্রেরণা নিতে পারেন স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারের। ক্যারিয়ারের এক বার টানা ৩ ইনিংসে শূন্য রানে ফিরেছিলেন শচীন। এমন টানা ব্যর্থতায় শচীনও সে সময় বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে গিয়েছিলেন।

কিন্তু লিটল মাস্টার ঠিকই প্রমাণ করেছিলেন পরবর্তীতে। টানা তিন শূন্যর পরের ৮ ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরিসহ ৬ টা পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন শচীন। সুরিয়াকুমার যাদবও এখান থেকেই ফেরার দীক্ষা নিতে পারেন।

সুরিয়া যে ধরনের ক্রিকেটার, তাতে তাঁর ফেরার পথ উন্মুক্ত করে দিতে পারে একটি দুর্দান্ত ইনিংস। খেই হারানোর বছরেই তিনি টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। তাই আইপিলের লম্বা সূচিতে যেকোনো দিনেই মঞ্চটা নিজের করে নিতে পারেন সুরিয়া। আর সেটি হলে পাদপ্রদীপের আলোয় আবারো ভাসবেন সুরিয়াকুমার যাদব। স্বস্তি ফেরাবে ভারতীয় স্কোয়াডেও।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link