পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেয়েছেন মুশফিক!

পায়ের তলায় একটু একটু করে মাটি সরে যাচ্ছিল। সময়ের ব্যবধানে, একরকম খাদের কিনারাতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। এর উপর আবার তারুণ্যের জয়গান আর ডাগআউটে কড়া হেড মাস্টারের প্রত্যাবর্তন। যার সিলেবাসে পারফর্ম্যান্স ব্যতিত নামের ভারে দলে টিকে থাকার কোনো তত্ত্ব নেই। 

সে তত্ত্বের বেড়াজালেই ক্যারিয়ারের শেষটা দেখে ফেলেছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। চারদিকে সমালোচনার স্রোত। সেই স্রোতের প্রতিকূলে ‘বয়স’ নামক সংখ্যার ধাক্কার ঘেরাটোপে আবারো সবুজ ঘাসগালিচায় নান্দনিক সব ইনিংসে গ্যালারির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায়— দুর্দান্ত ভাবে নিজের ফেরার বার্তাটা পৌঁছে দেওয়া কঠিনই ছিল।

মুশফিক সেই কাঠিন্যকে টপকেই আবারো ফিরেছেন দুরন্ত ছন্দে। এক নিমিষেই কোচ কিংবা ক্রিকেট সমালোচকদের তাঁকে বাদ দেওয়ার অভিপ্রায়ের তীক্ষ্ণদৃষ্টি সরিয়ে দিয়েছেন।

সময়টা খারাপই ছিল বটে। ২০২২ সালে এসে থমকে গেলেন। না। শুরুতে নয়। শুরুটা দুর্দান্তই হলো। টেস্টে ১৭৫ রানের একটি ইনিংস খেললেন। কিন্তু এরপরই, ছন্দপতনের দু:সহ সময়ের শুরু। 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ফিফটির পর ৭ টা ওয়ানডে খেললেন। কিন্তু প্রতিটা ম্যাচেই হতশ্রী ব্যাটিংয়ে মুশফিকের প্রস্থান। কোনো ফিফটি নেই, সেঞ্চুরিও নেই। এমনকি কার্যকরী কোনো ইনিংসেরও দেখা পাচ্ছিলেন না। ৭ ম্যাচের ছোট সময়কালের ব্যর্থতায় আশঙ্কা হয়তো তখনো তীব্র হয়ে ওঠেনি।

কিন্তু, যখনই এর সাথে টেস্টও জুড়ে গেল, আবার টানা অফফর্মে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেন— তখনই শঙ্কার শুরু, মুশফিকের পথচলার শেষের শুরু কি তবে এখান থেকেই হলো?

না। মুশফিক সেই শঙ্কা কাটিয়ে ক্যারিয়ারে আবার নতুন করে মোড় ঘুরিয়েছেন। তবে যেভাবে নিজেকে পাল্টে ফেললেন, তা অনবদ্য। কারণ অফফর্মের চাপ তো ছিলই, এর সাথে যুক্ত হয়েছিল চান্দিকা হাতুরুসিংহের ‘ছাড় না দেওয়ার’ অনানুষ্ঠানিক ঘোষণা। 

রিয়াদকে বাদ দেওয়া হয়েছিল ‘বিশ্রাম’ নামক চিত্রনাট্য সাজিয়ে। ঠিক তেমন কিছুই অপেক্ষা করছিল মুশফিকের জন্যও। নয়তো, নিজের ব্যাটিংয়ের জায়গা হারিয়ে রিয়াদের জায়গাতেই কেন ঠাঁই হবে তাঁর?

আয়ারল্যান্ড সিরিজ তাই মুশফিকের জন্য হয়ে উঠেছিল একটা লাইফ লাইন, ক্যারিয়ার বাঁচানোর সিরিজ। এমন বহু প্রতিকূলতা টের পেয়েও মুশফিক দিনশেষে উৎরে গেলেন দুর্দান্তভাবে। 

প্রথম ম্যাচে ২৪ বলে ৪৬। তাতেই মন্থর গতির ব্যাটিংয়ের সব দুর্নামের অবসান। পরের ম্যাচে আরও বিধ্বংসী। এবার ৬০ বলে ১০০। ব্যাস। তাতেই ক্যারিয়ারের সকল ঝুঁকি কাটিয়ে সুমসৃণ পথে চলার শক্তি পেয়ে গেলেন মুশফিক। 

ওয়ানডেতে না হয় ফেরা হলো, কিন্তু টেস্ট? লাল বলের ক্রিকেটেও তো শেষ এক বছরে মুশফিক ছিলেন নিজের ছায়ার মতো হয়ে। আইরিশদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে সকলের সেই চাওয়াও পূরণ করলেন মুশফিক। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি, পরের ইনিংসে অপরাজিত হাফসেঞ্চুরি। মুশফিকের ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশও পায় জয়ের দেখা। 

ওয়ানডে সিরিজে ম্যান অব দ্য সিরিজের পর একমাত্র টেস্টে আবার ম্যাচ সেরা! মুশফিকের ফেরার গল্পটা হলো দারুণ। খাদের কিনারায় থাকা ক্যারিয়ার হঠাতই মোড় নিল নতুন সম্ভাবনার উৎস হিসেবে।

মুশফিক নিশ্চয়ই সেই সম্ভাবনার গল্পটাকে আরেকটু সমৃদ্ধ করবেন, ‘ক্রিকেট ক্যারিয়ার’ নামক গল্পে আরো কলেবর বাড়াবেন৷ পায়ের তলায় হারিয়ে যেতে বসা শক্ত মাটিটা আবারো ফিরে পেয়েছেন। এবার নিশ্চয় সে অবস্থান আরেকটু সংহত করার দিকেই চোখ থাকবে মিস্টার ডিপেন্ডেবলের।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link