মোহাম্মদ রিজওয়ান, দ্য রান মেশিন

বাবর আজম কিংবা শাহীন আফ্রিদির ন্যায় আলোড়ন তুলে জাতীয় দলে আবির্ভাব ঘটেনি তাঁর। বরং খানিকটা নীরবে নিভৃতেই যেন পাকিস্তান ড্রেসিংরুমে প্রথম এসেছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। শুরুতে একাদশে জায়গা মেলেনি, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই সুযোগ মিলেছে প্রথম এগারোতে।

কিন্তু, পরিশ্রমের সাথে আপোষ করেননি, শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান থেকে ক্রমেই পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপের ভরসা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। 

রিজওয়ানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমণের সময়টাতে পাকিস্তান ক্রিকেটে চলছে সরফরাজ আহমেদের যুগ। উইকেটকিপিং থেকে খোদ অধিনায়ককে সরিয়ে জায়গা করে নেবেন এমনটা ছিল দুরাশা। রিজওয়ান নিজেও আশা করেননি সেটা, তবে হাল ছাড়েননি। কালেভদ্রে হয়তো শেষদিকে নেমে দুয়েক বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু নিজের সামর্থ্যের জানান দিতে সেটা যথেষ্ট ছিল না। 

শুরুতে তাঁকে লাল বলের ক্রিকেটের জন্যই ভেবেছিলেন সবাই। রিজওয়ান নিজেও খানিকটা ধীরস্থির ক্রিকেট খেলতেই বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করতেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যেন নিজেকে ভেঙে চুড়ে গড়েছেন এই তারকা। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামার পর যেন আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়। রান করাটাকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছেন, বাবর আজমকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন অপ্রতিরোধ্য এক জুটি। 

বিশেষ করে ২০২১ সালের পর থেকেই ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণে জীবনের সেরা ফর্মে আছেন এই তারকা। যেন পণ করেই মাঠে নামেন সকল রেকর্ড নিজের করে নেবার, এক বছরে সর্বোচ্চ রান করার পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম দুই হাজার রানের রেকর্ডে পেছনে ফেলেন বিরাট কোহলিকে।

এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিপিএল কিংবা পিএসএলেও রিজওয়ানের ব্যাটে রানবন্যা থামেনি। পিএসএলে তো সর্বোচ্চ রানসংগ্রহের পাশাপাশি দারুণ অধিনায়কত্বে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে নিয়ে গেছেন মুলতান সুলতান্সকে। 

তবে নিয়মিত রান করলেও রিজওয়ানের স্ট্রাইক রেট নিয়ে সন্দিহান ছিলেন অনেকেই। সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকের মতে, রিজওয়ানের খানিকটা ধীর শুরু অনেক ম্যাচেই বিপদে ফেলেছে পাকিস্তান দলকে। তাছাড়া ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে খানিকটা ছন্দহীন লাগছিল রিজওয়ানকে। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন এই তারকার মধুচন্দ্রিমা এবারে ফুরোলো বলে!

কিন্তু রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের শেষ ম্যাচেই যেন সব সমালোচনার জবাব দিলেই এই তারকা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই ছিলেন মারকুটে, কিউইদের বোলারদের সুযোগ দেননি একটিবারের জন্যও। অপরপ্রান্তে কেউ বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও রিজওয়ান ছিলেন অবিচল।

যদিও, শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকতে হয়েছে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র দুই রান দূরে থেকে। ৬২ বলে সাত চার এবং চার ছক্কায় ১৫৮ স্ট্রাইক রেটে ৯৮ রান করেন এই তারকা। ম্যাচের শেষদিকে খানিকটা ক্লান্ত হয়ে না পড়লে স্ট্রাইকরেট ছুঁতে পারতো দুশোর কোঠা।

এশিয়া কাপ কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, দুই টুর্নামেন্টেই রিজওয়ানের ব্যাট হাসলেও পাকিস্তানকে ফিরতে হয়েছে শিরোপা থেকে হাত ছোঁয়া দূরত্বে থাকতেই। আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রিজওয়ান তাই চাইবনে ফর্মটা ধরে রেখে দলকে শিরোপা এনে দিতে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link