সিলেটের বদ্ধ দুয়ারে ইংলিশ স্বপ্ন বাংলাদেশের

পেস বোলিং অলরাউন্ডার যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে সোনার হরিণ। মাশরাফি বিন মোর্তজার মাধ্যমে যে স্বপ্ন দেখার শুরু হয়েছিল, জিয়াউর রহমান, মুক্তার আলীদের পর হালের সাইফউদ্দিনরাও সেই আশা পূরণ করতে পারেননি। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সর্বশেষ সংযোজন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। এবারই প্রথম ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। জাতীয় দলের সাথে বেশ কিছু সময় ধরে থাকলেও স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে এবারই প্রথম দলের সাথে অনুশীলন করলেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।

‘ক্লোজডোর’ প্র্যাকটিস সেশন ধারণাটা খুব একটা পরিচিত নয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। দলীয় অনুশীলনে শত শত ক্যামেরার লেন্স ঘিরে ধরে থাকে মাঠের চারপাশে। অনুশীলনে খেলোয়াড়দের ভুল ত্রুটি বা নতুন কিছু করার চেষ্টার ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মূহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।

সেগুলো নিয়ে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। খেলোয়াড়রাও তাই অনুশীলন নতুন কিছু চেষ্টা করতে ভোগেন দ্বিধা দ্বন্দে। এমন পরিস্থিতি দূর কর‍তে অনুশীলনে গণমাধ্যম কর্মীরা প্রবেশাধিকার পাবেন মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য, এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

মূলত কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের পরিকল্পনাতেই এমন সিদ্ধান্ত। কোচের ইচ্ছাতেই সিলেটে অনুশীলন ক্যাম্প করছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজকে সামনে রেখে প্রথমদিন অনুশীলন করলো বাংলাদেশ। প্রথমদিনের অনুশীলনেই খেলোয়াড়দের ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী বাজিয়ে দেখেছেন হাতুরু। এই সিরিজেই প্রথমবার দলে ডাক পাওয়া মৃত্যুঞ্জয়ও বেশ উচ্ছ্বসিত দলের সাথে প্রথম অনুশীলনের পর।

অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘এটা আমার জন্য দারুণ একটা মুহূর্ত। কারণ এর আগে দলের সাথে অনুশীলন করা হয়েছে কিন্তু দলের ভিতরে থেকে এভাবে অনুশীলন করা হয়নি। তাই আজকে বেশ ভালো লাগাও ছিল আমার। নতুন অনেক কিছু শিখতে পারছি। সেই হিসেবেও আজকের দিনটি খুবই ভালো ছিল।’

সচারাচর কোনো সিরিজের আগে মিরপুরের হোম অফ ক্রিকেটেই অনুশীলন করে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পরই সিলেটের উইকেট ও কন্ডিশন পছন্দ হয় কোচ হাতুরুসিংহের। তাই ইংল্যান্ডে এওয়ে সিরিজ সামনে রেখে সিলেটেই ঘাটি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পেস বোলার হিসেবে সিলেটের উইকেট ও কন্ডিশন বেশ উপভোগ করছেন মৃত্যুঞ্জয়ও।

তিনি বলেন, ‘সিলেটের উইকেটের একটা সুনাম আছে আগে থেকেই। আজকে আমরা অনুশীলন করলাম। উইকেটে বাউন্স ছিল অনেকটাই যেটা আমাদের ইংল্যান্ডের মাটিতে খেলার ক্ষেত্রে একটু হলেও প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে।’

জাতীয় দলে এর আগে যারাই পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে খেলেছেন প্রত্যেকের আশার বেলুনই অল্পতেই চুপসে গেছে। জাতীয় দলে সুযোগ পাবার পর কেউই নিজেকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে পারেননি। সে বিষয়টি জানা আছে মৃত্যুঞ্জয়েরও। তবে এসব না ভেবে শুধু নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই ভাবতে চান তিনি।

মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘আমি আমার সেরাটা দেবার চেষ্টা করব। আমি যদি আমার সেরাটা দিতে পারি তবেই হয়তো ভালো কিছু আসবে। সবকিছু একজন খেলোয়াড়ের হাতে থাকে না। পরিশ্রম আর আগ্রহটা আমার হাতে। বাদ বাকিটা আল্লাহ লিখে থাকলে ভালো কিছুই হবে।’

বাঁ-হাতি পেস বোলার হিসেবে প্রথমে আলোচনায় এলেও মৃত্যুঞ্জয় ব্যাটটা ভালোই চালাতে পারেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে দলের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাটিংটা যে মৃত্যুঞ্জয় করতে পারেন তার প্রমাণ রেখেছেন বেশ কয়েকবার। তাই শুধু পেস বোলিং নয়, মৃত্যুঞ্জয় নিজের নামকে বড় করতে চান একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে।

সাংবাদিকদের এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যাটিং নিয়ে অবশ্যই পরিকল্পনা আছে। ছোটবেলা থেকে যখনই খেলা শুরু করেছি তখন থেকেই আমার ভালো অলরাউন্ডার হবার ইচ্ছা ছিল। হয়তো বোলিংটা ওভাবে ক্লিক করায় সবাই বোলার হিসেবেই বেশি চেনে। ব্যাটিংটাও ভালোই আছে। যেদিন সেটা ক্লিক করবে, ইনশাআল্লাহ ভালো কিছুই হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link