যশস্বী জয়সওয়াল, আগামীর যশ

সবাই তাঁকে ভেবেই নিয়েছিল টেস্টের ক্রিকেটার হিসেবে। এবারের আইপিএল তাই যশস্বী জয়সওয়ালের জন্য ছিল নিজেকে চেনানোর আসর। আর সেই কাজে এখনো পর্যন্ত দারুণ সফল এই তারকা। 

ভারতীয় ক্রিকেট আঙ্গিনায় আগমণের পর থেকেই তাঁকে নিয়ে আলোচনা বিস্তর। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, রঞ্জি ট্রফি কিংবা রিজার্ভ দল, সবখানেই রীতিমতো রান বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। মাঝে ইনজুরির কারণে বেশ কয়েকদিন দলের বাইরে থাকলেও ফিরে এসেছেন প্রবলভাবে। 

তবে টি-টোয়েন্টিতে জয়সওয়াল কতটা সফল হবেন সে নিয়ে সন্দেহ ছিল অনেকের। কেননা লিকলিকে গড়নের জয়সওয়াল যে ছক্কা হাঁকাতে পারেন অবলীলায় সেটা কেউই বিশ্বাস করতে চাইবেন না। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসও তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল পাওয়ার প্লে স্পেশালিস্ট হিসেবেই। 

আইপিএলে নিজের প্রথম দুই মৌসুমে তাই বড্ড নড়বড়ে লাগছিল জয়সওয়ালকে। আশা জাগানিয়া দুয়েকটি ইনিংস বাদে বলার মতো কিছুই করতে পারেননি।

বরং সবাই ধরেই নিয়েছিল সমালোচকেরাই বোধহয় ঠিক, টি-টোয়েন্টিটা জয়সওয়ালের ফরম্যাট নয়। কিন্তু এবারের মৌসুমে একদম ভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়েছেন এই তারকা। সবচেয়ে কঠিন শটটাও তিনি খেলে ফেলেন কি অবলীলায়! 

আইপিএল শুরুর আগে আলাদা করে কাজ করেছেন নিজের কোচের সাথে। ব্যাটিংয়ে বৈচিত্র্য এনেছেন, শটের সংখ্যা বাড়িয়েছেন। জীবনের কঠিন সময়টা পেছনে ফেলে আসা জয়সওয়াল জানতেন পরিশ্রম করে গেলে সাফল্য মিলতে সময় লাগবে না। 

জয়সওয়ালের টাইমিং কিংবা উইকেটের চারপাশে শট খেলার প্রতিভা নিয়ে কারোরই সন্দেহ ছিল না। এবারের আইপিএলে নিজের শক্তিমত্তার সেই দিকেই যেন নজর দিয়েছেন এই তারকা। অতিরিক্ত কিছু করতে যাবার চেষ্টা নয়, নিখাদ টাইমিং আর ক্রিকেটীয় শটে তিনি মুগ্ধ করে যাচ্ছেন দর্শকদের।

তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সামনে কখনো কখনো ছায়ায় পড়ে যাচ্ছেন জস বাটলার, সাঞ্জু স্যামসনরা। কেবলমাত্র পাওয়ারপ্লে স্পেশালিস্ট নয়, বরং ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতেও এখন সমান কার্যকরী এই তারকা। 

তবে জয়সওয়াল যেন নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে। ওয়াংখেড়েতে আইপিএলের হাজারতম ম্যাচকে যেন আপন আলোয় রাঙিয়ে তোলার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন এই তারকা।

তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেননি কোনো বোলার। ইনিংসের শুরু থেকেই ছিলেন মারকুটে, ছাড় দেননি মুম্বাইয়ের কোনো বোলারকেই। কখনো জোফরা আর্চারকে লং অনের উপর দিয়ে গ্যালারীতে পাঠিয়েছেন, আবার কখনো পিযুষ চাওলাকে সুইপ করেছেন।

৩২ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর যেন ব্যাটে ধার বাড়ে জয়সওয়ালের, পরের ৩২ বলে করেছেন ৭৪ রান। শেষপর্যন্ত ১৬ চার এবং আট ছক্কায় ৬২ বলে ১২৪ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন এই তারকা। 

এবারের আইপিএলে এখনো পর্যন্ত নয় ম্যাচ খেলে ৪২৮ রান নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক এই তরুণ। স্ট্রাইকরেটটাও চোখ কপালে তোলার মতো, ১৫৯!

ভারত জাতীয় দল যেখানে একজন মারকুটে ওপেনারের জন্য মাথা কুটে মরছে, সেই দলে জয়সওয়াল হতে পারেন দারুণ এক সংযোজন। কে জানে ফর্মটা ধরে রাখতে পারলে হয়তো আইপিএল শেষেই জাতীয় দলের দরজা খুলবে জয়সওয়ালের জন্য। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link