নাভিন উল হক, আলোকিত কিংবা বিতর্কিত

আফগানিস্তানকে বলা হয় লেগস্পিনারদের স্বর্গরাজ্য। জোরে বল করা পেসার খুব বেশি উঠে আসেননি আফগান মূলুক থেকে। তবে এবারের আইপিএলে আলো ছড়াচ্ছেন আফগানিস্তানেরই পেসার নাভিন উল হক। 

ছোটবেলাতেই জীবনের নিষ্ঠুর রূপটা দেখতে হয়েছিল নাভিনকে। যুদ্ধ থেকে পালিয়ে বাঁচতেই পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে নিজ দেশ থেকে। শৈশবের বড় একটা সময় সময় নাভিন তাই কাটিয়েছেন পাকিস্তানে। জীবন বাঁচানো যেখানে দায়, ক্রিকেটের কথা ভাবা তো সেখানে বিলাসিতা। 

তবে ছোটবেলাতেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়া নাভিন যেন অন্য ধাতুতে গড়া। জীবনের সকল দু:খ কষ্ট তিনি ভুলে থাকেন বাইশ গজে নামলে। যুদ্ধ শেষে দেশে ফেরার পর তাই নাভিন সিদ্ধান্ত নেন তিনি ক্রিকেটারই হবেন। 

তবে শুরুতে তিনি ছিলেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। জোরে বল করার চাইতে বলকে সীমানার বাইরে পাঠাতেই বেশি ভালোবাসতেন এই তরুণ। তবে আফগানিস্তান ন্যাশনাল একাডেমিতে থাকাকালীন সময়ে এক কোচের পরামর্শে পেস বোলিং শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকানো নয়, নাভিন আলো ছড়াতে শুরু করেন আপন মহিমায়।

মাত্র ১৫ বছর বয়সেই আফগানিস্তানের হয়ে ছোটদের বিশ্বকাপে মাঠে নামেন এই তারকা। এমনকি মাত্র ১৬ বছর বয়সে থাকাকালীন তাঁর অধিনায়কত্বেই আফগানিস্তান অনুর্ধব-১৯ দল তাঁদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে পরাজিত করে। সেই ম্যাচ দিয়েই মূলত জাতীয় নায়কে পরিণত হন নাভিন

মাত্র ১৭ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে নাভিনের। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, নাভিন আলোচনায় এসেছেন মূলত বিশ্বব্যাপী ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট দিয়ে। আইপিএলের পাশাপাশি বিপিএল, সিপিএল কিংবা বিগব্যাশে নিয়মিত খেলে থাকেন এই তারকা।

ডানহাতি এই পেসারের মূল শক্তি তাঁর লাইন-লেংথ। নিয়মিত ভালো লাইনে বল করে ব্যাটসম্যানকে ভুল শট খেলতে বাধ্য করেন নাভিন। এছাড়া ইনিংসের শুরুতে সুইং আদায় করে নেবার পাশাপাশি ডেথ ওভারে টানা ইয়র্কার দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। 

২০২০ সালে আইপিএলে প্রথমবারের মতো ডাক পান নাভিন। সেবারে পাঞ্জাব কিংস দলে ভিড়িয়েছিল তাঁকে। কিন্তু গোটা মৌসুমটা বেঞ্চে কাটালেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তবে নাভিন হাল ছাড়েননি, পরের মৌসুমগুলোতে নেট বোলার হিসেবেই কাজ করে গেছেন। অবশেষে ২০২৩ আইপিএল নিলামে তাঁকে ৫০ লাখ রুপির বিনিময়ে দলে ভেড়ায় লখনৌ সুপার জায়ান্টস।

শুরুতেই অবশ্য লখনৌর একাদশে জায়গা পাননি নাভিন। মৌসুমের মাঝপথে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পেতেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম ম্যাচে কোনো উইকেট না পেলেও নাভিনের লাইন লেংথ প্রশংসিত হয়েছিল ভীষণ। এখনো পর্যন্ত আইপিএলে চার ম্যাচ খেলে মাত্র ৬.১৩ ইকোনমিতে সাত উইকেট শিকার করেছেন এই তারকা। 

সর্বশেষ ম্যাচেই লখনৌর মরা পিচে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে বল হাতে যেন আগুন ঝরিয়েছেন নাভিন। স্পিনারদের স্বর্গরাজ্যেও তাঁর বোলিংয়ের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি কোনো ব্যাটার। তাঁর ক্রমাগত ১৪০ কিমি গতির বলগুলোর কোনো জবাব ছিল না ব্যাঙ্গালুরুর ব্যাটারদের কাছে। কখনো ইয়র্কারে পরাস্ত করেছেন, আবার কখনো বাউন্সারে নাকাল করেছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। শেষপর্যন্ত চার ওভারে ৩০ রানের তিন উইকেট শিকার করেন এই তারকা। 

জীবনের যুদ্ধে তিনি আগেই জিতে গিয়েছেন। এবারে বাইশ গজের যুদ্ধে জেতার পালা নাভিন উল হকের। সেই যুদ্ধের একটা ধাপ জয়ের পথে স্বয়ং বিরাট কোহলির সাথেও মাঠে এক চোট হয়ে গেল তাঁর। ফলে, আলোকিত এই আফগান খানিকটা বিতর্কও ছড়িয়ে গেলেন মাঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link