ঈশান কোনে ঝড় উঠেছে…

ভারত জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ ভাবা হয় তাঁকে। ইনিংসের শুরুতে নেমে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এবারের আইপিএলের শুরুটা ভালো না হলেও প্রয়োজনের মূহুর্তে ফর্মে ফিরে এসেছেন ঈশান কিষাণ।  

ধোনির শহর ঝাড়খন্ড থেকেই উঠে আসা কিষাণের। ধোনির মতোই উইকেটের পেছনে দাঁড়াতে ভালোবাসেন, ব্যাটিংটাও করেন ধোনির মতো বিধ্বংসী স্টাইলে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই প্রতিভাবান তকমা নামের সাথে লেগে আছে কিষাণের। ছোটদের বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাতীয় দলকে। যদিও সেবারে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিলো ভারতকে। 

প্রতিভাবান তরুণের সিনিয়র ক্রিকেট থেকে ঝরে পড়ার রেকর্ড ভারতীয় ক্রিকেটে অহরহ। পা হড়াকানোর সম্ভাবনা ছিল কিষাণেরও, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের শুরুর দুই মৌসুম মোটেই ভালো কাটেনি। বয়সভিত্তিক দলের সতীর্থ ঋষাভ পান্থ ততদিনে বনে গেছেন জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য, অন্যদিকে কিষাণ তখনো পায়ের নিচে শক্ত মাটি খুঁজতে ব্যস্ত। 

তবে কিষাণ হাল ছাড়েননি। বরং প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছেন নিজের দুর্বলতা খুঁজে বের করার, ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনার। কিষাণের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন তাঁর ভয়ডরহীন মানসিকতা।

প্রতিপক্ষ বোলার যিনিই হোক না কেন, কিষাণ ইনিংসের শুরু থেকেই সমান সাবলীল। পাওয়ার প্লেতে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষকে বোলিংকে এলোমেলো করে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। 

ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ এক মৌসুম কাটানোর পর জাতীয় দলে সুযোগ মিলেছে দ্রুতই। আলো ছড়িয়েছেন টি টোয়েন্টিতে অভিষেকেই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ৪২ বলে ৫৯ রানের দারুণ এক ইনিংস।

কিন্তু ভারতের তারকাবহুল টপ অর্ডারে একাদশে জায়গা পাওয়া কঠিন। ওয়ানডেতে তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েও বেঞ্চে বসতে হয়েছে কিষাণকে। এই তারকা অবশ্য সেসব নিয়ে ভাবেন না, বরং যখনই সুযোগই পেয়েছেন নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন। 

আইপিএল ক্যারিয়ারের শুরুটা গুজরাট লায়ন্সের হয়ে হলেও কিষাণকে সবাই চেনেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ঘরের ছেলে হিসেবেই। মুম্বাইকে তিনবার আইপিএলের শিরোপা জেতাতে ভূমিকা রেখেছেন সামনে থেকে।

মুম্বাইও তাঁর  উপর ভরসা রেখে বড় অংকের রুপি খরচ করতে দুবার ভাবেনি। ২০২২ আইপিএল নিলামে তাঁকে নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়েছিল দলগুলোর মাঝে। তবে ১৫.২৫ কোটি রুপির বিনিময়ে শেষপর্যন্ত তিনি থেকে গেছেন মুম্বাইয়ের ডেরাতেই। 

দলের আস্থার প্রতিদানটা অবশ্য ব্যাট হাতেই দিয়েছেন এই তারকা। গত মৌসুমেও ১৪ ম্যাচে করেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১৮ রান। এবারের মৌসুমে অবশ্য শুরুটা মনমতো হয়নি। তবে টুর্নামেন্টে যত শেষের দিকে গড়াচ্ছে, কিষাণকে যেন ফিরছেন পুরনো ছন্দে। 

টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না মুম্বাইয়ের। ২১৪ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে তাই ইনিংসের শুরুতে কিষাণ ম্যাজিকেরই প্রয়োজন ছিল দলটির। দলের দরকারে কি দুর্দান্ত ব্যাটিং-ই না করলেন এই তরুণ তারকা!

তাঁর ৪১ বলে ৭৫ রানের ইনিংসের কোনো জবাব ছিল না প্রতিপক্ষের বোলারদের কাছে। আর্শদ্বীপ সিং কিংবা স্যাম কুরানরা কেউই একবারের জন্যেও বিপাকে ফেলতে পারেননি কিষাণকে। তাঁর সাত চার এবং চার ছক্কায় সাজানো ইনিংসই জয়ের ভিত্তিটা গড়ে দেয় মুম্বাইকে। 

বছরের শেষদিকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলবে ভারত। কিষাণ তাই চাইবেন ফর্মটা ধরে রেখে জাতীয় দলের একাদশে জায়গাটা নিশ্চিত করতে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link