দুর্বোধ্য এক রাজপুত্র

বয়সে অবশ্য বেশ কিছুটা বড় তিনি শচীনের থেকে, মেজাজটাও একেবারেই আধুনিক ডনের মত কমনীয় নয়। বরং বলা যায় স্যার গ্যারি সোবার্সের যোগ্য উত্তরসূরী বলে মনে করা ব্রায়ান চার্লস লারার চালচলন, জীবনদর্শন।

এসবই যেন সারাজীবনই এক প্রহেলিকা। তিনি ক্রিকেট খেলেছেন নিজের মর্জিতে, ত্রিনিদাদের সেই অক্লান্ত ঢেউগুলোর আর তাদের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া হাজার হাজার ক্যারিবিয়ান আমজনতার মত – যারা বিশ্বাস করে জীবনটা উপভোগের জায়গা, আদর্শের বুলি আউড়ে তাকে বিস্বাদ করার কোন মানেই হয় না, তাই ‘খুদ জিও, আউর জিনে দো’ এই আপ্তবাক্য মেনেই তাদের জীবন সমুদ্রের ঢেউয়ের ছন্দেই যেন চলে!

স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস্ একবার বলেছিলেন লারা হলেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের মোজেস, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটকে অবনতির অন্ধকার থেকে উদ্ধার করতেই এসেছেন! কিন্তু বাস্তবে লারার জীবনদর্শনও বহুলাংশে ত্রিনিদাদিয়ান আমজনতার মতই..তাঁকে বা তাঁর কিংবদন্তী অগ্রজ স্যার গ্যারিকে যে কখনোই কোন নির্দিষ্ট ফ্রেমওয়ার্কের আন্ডারে আনা যায় নি, যাবেও না।

বহুদিন আগে অ্যালান বর্ডার একবার তাঁর বিরুদ্ধে খেলা সেরা বিদেশীদের দলে শচীনকে রাখেন নি, রেখেছিলেন লারাকে। যুক্তি দিয়েছিলেন, লারার অসামান্য প্রতিভার ঝলকানী তিনি ৪০বছর বয়সী হলেও স্ট্রোকপ্লেতে ক্রীজ়ে মুগ্ধ করে রাখবে। উল্টোদিকে ফিটনেসে আর শর্টপীচড্ বলে নাকী সামান্য ভঙ্গুর লেগেছিল তাঁর শচীনকে – তাই তাঁকে রাখতে পারেন নি দলে। বাস্তবে দেখা গিয়েছে ফিটনেসজনিত সমস্যা আর ফর্মের ওঠাপড়া লারাকে সরিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।

উল্টে টেস্ট আর একদিনের আন্তর্জাতিকের সর্বোচ্চ মোট রানের আর ১০০টি আন্তর্জাতিক শতরানের বিরল কৃতিত্ব নিয়ে সফল কেরিয়ার শেষ করেছেন ৪০ ছুঁইছুঁই শচীনই। নিজের শেষ বিশ্বকাপও জিতেছেন দলের হয়ে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ রান করে। বিপ্রতীপে সেই ১৯৯২ সালে দলে এসেই হইচই ফেলে দেওয়ার পর, আর ১৯৯৬ সালের পর থেকে ২০০৭ সালে অবসরের দিন পর্যন্ত আরেক মেজাজী কার্ল হুপার আর চিরবিশ্বস্ত শিউনারায়ণ চান্দেরপাল ব্যতীত অবশিষ্ট ভঙ্গুর ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ের জোয়াল প্রায় নিজের একার কাঁধে বইতে থাকা ক্লান্ত লারা শেষ অবধি কখনোই পান নি বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ।

বস্তুত তাঁর মত কিংবদন্তীর গোটা কেরিয়ারের সময়সীমায় আশ্চর্যজনকভাবে ক্যারিবিয়ানরা নেহাতই একবার (বিশ্বকাপ ১৯৯৬) ছাড়া কখনও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট পর্যন্ত হয় নি। ওয়ালশ-অ্যামব্রোজ় জুটি সরে যাওয়ার পর তরুণ পেসারদ্বয় রিওন কিং-মার্ভিন ডিলনকে নিয়েও অধিনায়ক হিসাবে তিনি চরম আশাবাদী ছিলেন, কিন্তু লারাকে হতাশ করেন তাঁরাও!

বস্তুত তাঁর সময়ে ক্যারিবিয়ানদের একমাত্র উল্লেখযোগ্য ‘দুর্ধর্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ’ সুলভ পারফরম্যান্স বলতে ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০০৪ সালে অভাবিতভাবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ২ উইকেটে জয়। লারাই অধিনায়ক সেইসময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের। অবিচ্ছিন্ন নবম উইকেট জুটিতে কোর্টনি ব্রাউন আর বোলার ইয়ান ব্র্যাডশ যখন ক্যারিবিয়ানদের জয় নিশ্চিত করলেন, মনে হয়েছিল এ যেন ফিনিক্স পাখির নতুন করে ডানা মেলার মতই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের পুনর্জন্ম ঘটে গেল আবার!! স্বভাবতই আবেগে ভেসে গিয়েছিলেন লারা, চন্দরপলেরা।

ঘটে নি জানেন! সেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতাটাকে ফ্লুক প্রমাণ করে লারার অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপ সমেত পরের পর আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে এরপরেও লজ্জাজনকভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে ক্যারিবিয়ানরা। দেশের মাটিতে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ত্রিনিদাদের রাজপুত্র পারেন নি ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে কাপ জেতাতে। এর বহুদিন পর ২০১২ আর ২০১৬ সালের কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপ অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ় জিতলেও লারা যে তখন নিশ্চিন্ত অবসরে!

আগেই বলেছি লারাকে আর তাঁর ব্যাটিংকে বোঝার চেষ্টা এক প্রহেলিকা! ত্রিনিদাদের এক হতদরিদ্র পরিবার থেকে তাঁর উঠে আসার ঘটনাটা কোন একটা লেখায় পড়েছিলাম এরকম, ‘লারা আর শচীনের তুলনা না করতে যাওয়াই শ্রেয়, কারণ তুলনাটাই হয় না। শচীনের বেলা যেটা এক মধ্যবিত্ত ভারতীয় পরিবারের অত্যাশ্চর্য প্রতিভাসম্পন্ন সন্তানের উত্থান, লারার বেলা সেটাই হাড়হিম করা দারিদ্রের সঙ্গে লড়তে থাকা আর আগামীকাল খাওয়া জুটবে কি না সেই সন্দেহের সীমানায় দোদুল্যমান এক ক্ষণজন্মা জিনিয়াসের উপরে উঠে আসার চমকপ্রদ আখ্যান!’

কথাটা যে কতখানি ঠিক, সেটা ক্রিকেটবোদ্ধা মাত্রই জানেন। উচ্চশিক্ষিত অধ্যাপক পিতার সন্তান শচীন নিজে পড়াশোনার সুযোগ তেমন না পেলেও তাঁর মধ্যে মরাঠি তথা ভারতীয় মূল্যবোধের ধারা সতত প্রবহমান! এর ছোঁয়া আমরা দেখেছি ক্রিকেটার শচীনের ব্যাটিংয়ে, আচরণে, সহজতায়, বিনয়ে। বিপ্রতীপে লারার বাল্যকালের জীবনসংগ্রামের ছায়া পরতে পরতে যেন ফুটে উঠতে দেখা গিয়েছে কখনও তাঁর অভাবনীয় ব্যাটিংয়ে, অথবা হঠাৎ করা দায়িত্বজ্ঞানহীন স্ট্রোকে..কখনও বা আলস্যের আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছে তাঁর আচরণের ঔদ্ধত্ব..আবার কখনও বা নিজেকে চেনাজানার দুনিয়া থেকে সরিয়ে লারা লুকিয়ে পড়েছেন নিজের মধ্যেই! অসমবয়সী বন্ধু স্যার গ্যারি ছাড়া তাঁকে যে আর কেউ তেমন বোঝে নি!

কেমন ক্রিকেটার ছিলেন ব্রায়ান লারা? সোবার্স অনেকবার বলেছেন লারার ব্যাটিংয়ে তিনি নিজেকে ফিরে পান এই বয়সেও! অত্যুক্তি নয়..ফর্মে থাকা লারার ব্যাটিংয়ের মেজাজ দেখলে বোঝা যায় পৃথিবীর সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার সোবার্স কোন পর্যায়ের ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন নিজের সময়ে!

যাই হোক, সোবার্সের করা টেস্টে ৩৬৫ রানের রেকর্ড ভাঙেন লারা ১৯৯৪ সালে..করেন ৩৭৫! প্রায় ৯ বছর অক্ষুণ্ণ ছিল এই বিশ্বরেকর্ড। মাঝে দুইএকবার কারোর কারোর কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা দেখা দিলেও (১৯৯৭ সালে জয়সূর্য আর ১৯৯৮ সালে মার্ক টেলর) শেষমেষ অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথিউ হেডেন জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ৩৮০ রানের ম্যারাথন ইনিংস খেলে নিজের দখলে আনেন বিশ্বরেকর্ড।

সমবেত ক্যারিবিয়ান জনতার দীর্ঘনিশ্বাস পড়ার দিন লারা নিজের কাছে কিছু শপথ নিয়েছিলেন কি না জানা নেই। কারণ এর মাত্র কয়েকমাসের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ানদের মুখের হাসি মুছে দিয়ে সদম্ভে বিশ্বরেকর্ডটি আবার নিজের দখলে নিয়ে আসার দিন লারার নামের পাশে লেখা ছিল ৪০০*। একই ব্যাটার নিজের ক্রিকেটজীবনে ৩৭৫ ও ৪০০* করছেন, স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে ধরেও বলছি, এই দৃষ্টান্ত গোটা ক্রিকেটগ্রহে একটিই। ব্যাপারটা আরো অবিশ্বাস্য শোনাবে যখন মনে পড়বে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও এসেছিল সেই লারার ব্যাটেই, অপরাজিত ৫০১! মনে রাখবেন, বয়সে তখন তিনি নিতান্তই তরুণ!

বৈপরীত্য আর অহমিকায় ভরা রাজপুত্রের জীবন। তাঁর বিশ্বরেকর্ডের পার্টিতে ওয়ালশ নেচেছিলেন..তিনি কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে যান নি ওয়ালশের বিশ্বরেকর্ডের উৎযাপনে। হুপারের অধিনায়কত্বে ২০০২ সালে যখন ভারতের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সিরিজ় জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়, সেই সিরিজ়ে লারার ব্যাটিং ছিল অত্যন্ত সাদামাটা। সেই লারা এক অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে ২০০৩ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচে জেতান নিজের দলকে।

একটা সময় বলা হত লোকে নিজের জামাকাপড় অতবার পাল্টায় না, যতবার লারা তাঁর বান্ধবী পরিবর্তন করেন। নিজে স্বীকারও করেছিলেন অল্পবয়সে করে ফেলা পরের পর বিশ্বরেকর্ড আর তার পরে আসা খ্যাতি আর অপরিমিত অর্থ ক্রিকেট থেকে তাঁর ফোকাস অনেকখানি কেড়ে নিয়েছিল। নাহলে যিনি টেস্টে ৩৭৫, ৪০০* আর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৫০১ করতে পারেন। যিনি তরুণ অবস্থায় সিডনিতে ২৭৭ রানের কালজয়ী ইনিংস খেলে স্বয়ং ব্র্যাডম্যানের অকুন্ঠ প্রশংসা জিতে নেন, একদিনের ম্যাচে ১৬৯ করে বিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেন, বলতে পারেন টানা তিন তিনটে বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেন তাঁর ব্যাটে রানের খরা চলে?

আবার যাঁর ধারাবাহিকতা নিয়ে এত প্রশ্ন ওঠে, তিনি প্রায় বুড়ো বয়সে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে মুরলীথরণকে পিটিয়ে তিন টেস্টে করেন ৬৮৮ রান!! তাঁর ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমালোচকদের কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, ‘আসলে আমি ধারাবাহিক নই, কারণ আমাকে তো পৃথিবীর উইকেটে খেলতে হয়। মঙ্গলগ্রহের উইকেটে খেললে হয়ত যথার্থই ধারাবাহিক বলা হবে!’

একটা সময় শচীনের পাশাপাশি লারাকেও খুব বেগ দিতেন ম্যাকগ্রা। তা ১৫৩* রানের ইনিংস খেলে তাঁকে কড়া জবাব দিয়েছিলেন লারা ১৯৯৯ সালে। সবাই ভেবেছিল আসন্ন বিশ্বকাপেও লারার ব্যাট চলবে আর এবার ম্যাকগ্রার কালঘাম ছুটবে! কোথায় কি! বরং গোটা বিশ্বকাপেই চরম নিষ্প্রভ রইলেন লারা, টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ডেলিভারীতে তাঁর অফস্টাম্প উড়িয়ে দিয়ে সেই গ্লেন ম্যাকগ্রাই হয়েছিলেন হিরো! ২০০০-২০০১ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরেও বিপর্যয় ঘটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের। টেস্টে হ্যাটট্রিক করেন ম্যাকগ্রা (লারার উইকেট সমেত)।

অজ়িদের বাক্যবাণে জর্জরিত লারা মাথা নীচু করে ক্রীজ় ছেড়েছিলেন। আবার ২০০৫ সালের পাকিস্তান সফরে দারুণ ফর্মে থাকা পাক স্পিনার দানিশ কানেরিয়া একটা বলে লারাকে পরাস্ত করার পরেই কিছু বলেছিলেন, যাতে লারার মুখচোখ তখনই কঠিন হয়ে উঠেছিল। ফলশ্রুতিতে কানেরিয়ার ভালো লেংথের পরের তিনটি বলই লারা স্টেপআউট করে উড়িয়ে দেন মাঠের বাইরে, এবং নিরাসক্ত মুখে ফিরে যান অন্য প্রান্তে..দানিশ সমেত গোটা পাকিস্তান দল কিছুক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিল। দর্শকরাও!

এখন ক্রিকেটারের তকমা ঝেড়ে ফেলে কোচের বা মেন্টরের জার্সী পড়েছেন ঠিকই..কিন্তু বৈপরীত্যের বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ার নয়! ২০০৭ সালে নিষিদ্ধ আইসিএল খেলতে এসে যখন বিসিসিআই এবং ক্যারিবিয়ান বোর্ডেরও বিরাগভাজন হন, তখন বলেছিলেন আর কখনও ভারতীয় উপমহাদেশের লীগ ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্রব রাখবেন না। আজ তিনি আইপিএল এ সানরাইজ়ার্স হায়দ্রাবাদের সঙ্গে যুক্ত!! যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করা বৃথা!

শচীনের সঙ্গে তাঁর টক্কর নিয়ে কত মুখরোচক আলোচনা/কাহিনী! কিন্তু বাস্তবে দুই কিংবদন্তী আজীবন মাঠে ও মাঠের বাইরে নিজের নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে গিয়েছেন। লারার বিশ্বরেকর্ড নিয়ে একবার শচীনকে উষ্কানী দেওয়ার চেষ্টা করা হলে অভিমানী শচীন বলেছিলেন, ‘ব্রায়ানকে আমার অভিনন্দন, কিন্তু আমি কারোর কথা ভেবে নিজের ক্রিকেট খেলি না!’

কাগজে পড়ে লারার সহাস্য প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘ধন্যবাদ বন্ধু। কখনও অন্যের কথা ভেবে খেলো না..অপরিমিত প্রতিভা যে তোমার সহজাত!’ পরে একে অপরের পরম বন্ধু হয়ে উঠেছেন আধুনিক যুগের সেরা দুই ব্যাটার। একসঙ্গে অংশ নিয়েছেন কার রেসিংএ। খেলেছেন অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটারদের লিগেও!

১৯৯৮ সালের উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপের কথা মনে পড়ছে..দুর্ধর্ষ ফর্মে থাকা শচীনকে প্রথমেই টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচে ফেরান কার্ল হুপার। তারপর দ্রুতই ফেরেন অধিনায়ক আজ়হারউদ্দীন, অজয় জাডেজা আর ক্রীজ়ে জমে গিয়েও বহু বল নষ্ট করা রাহুল দ্রাবিড়। বিপর্যয়ের মুখে একদিক আটকে রেখে সৌরভ ৮৩ আর পরে নেমে রবিন ঝোড়ো ৭৩ রান করলেও ভারতের রান ২৪২ এর উপরে ওঠে নি।

দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবিয়ানরা বেশ ভালোই ব্যাট করছিল, জিততে তখন তাদের আরো কিছু রান বাকী। এইসময় শচীন বেশ ভালো বল করে পরপর দুটো উইকেট তুলে নেন। লারা নেমে নিজের চরিত্রবিরোধী একটি অপেক্ষাকৃত স্লো ইনিংস খেলে টিমের জয় নিশ্চিত করেছিলেন। বোলার শচীনকে যোগ্য সম্মান দিয়েছিলেন তিনি উইকেটে থাকাকালীন। ম্যাচ শেষে সেটা স্বীকারও করে নেন। সৌরভেরও ব্যাটিংয়ের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল সেদিন তাঁর মুখে, অনেক পরে তাঁর অধিনায়কত্বেরও।

পরবর্তীতেও দেখা গিয়েছে সর্বোচ্চস্তরের প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকলেও লারার ঘনিষ্টমহলের বৃত্তে এসে গিয়েছিলেন আরেক চিরবিতর্কিত ফ্ল্যামবয়েন্ট জিনিয়াস শ্যেন কিথ ওয়ার্ন। ২০০৬ সালে দীর্ঘসময় পর যখন দ্রাবিড়ের চওড়া ব্যাটে ভর দিয়ে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ে টেস্ট সিরিজ় জিতল, লারা মাথা ঝুঁকিয়েছিলেন রাহুলের ব্যাটিং দক্ষতার সামনে। আসলে লারারা যে এরকমই হন..নাহলে শচীনের সম্পর্কে বলতে পারেন যে তাঁর মত খেলতে পারলে তিনি নিজে গর্বিত হতেন?

৩৪টি সেঞ্চুরি সমেত টেস্টে ১১,৯৫৩ আর ১৯টি সেঞ্চুরী সহ একদিনের আন্তর্জাতিকে ১০,৪০৫ রানের মালিক তিনি। তিনি আধুনিক ক্রিকেটের রাজপুত্র! সাধারণের কাছে দুর্বোধ্য হয়েই থাকুন আপনি বা স্যার গারফিল্ড সোবার্সরা। জানেন তো, দূরগত আকাশের তারারা চিরকাল জাজ্বল্যমানই থাকে..আর উল্কারাই কাছে এসে আলো ছড়িয়েও পুড়ে খাক হয়ে যায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link