শিরোপা জিতেও স্বস্তি নেই রিয়ালের

‘ফাইনাল খেলে না, জেতে’। একবিংশ শতাব্দীতে অন্তত এই কথাটা একেবারেই মিথ্যে নয় রিয়াল মাদ্রিদের ক্ষেত্রে। তাইতো রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কিংবদন্তি অধিনায়ক সার্জিও রামোস এমন আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য করেছিলেন। সেই মন্তব্যের বাস্তবতা আরও একবার চোখের সামনে তুলে ধরলো রিয়াল মাদ্রিদ।

দীর্ঘ নয় বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে কোপা ডেল রে শিরোপা ধরা দিয়েছেন শুভ্রদের শিবিরে। আনন্দের একটা হরকাবান হওয়ার কথা নিশ্চয়ই। তবে স্বস্তির যেন কোন অবকাশ নেই। দীর্ঘ অপেক্ষার ফলাফল পাওয়ার পরও রিয়াল বেশ চিন্তিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালকে ঘিরে।

ধারণা করা হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের আগেই ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ। কেননা প্রতিপক্ষ তো উড়তে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি। গেল আসরে স্বপ্নের মত এক সময় পার করেছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। এই ম্যানচেস্টার সিটিকেই হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কেটেছিল রিয়াল মাদ্রিদ।

তবে সেই সিটি আর এই সিটির মধ্যে তফাৎ-টা প্রকট। সেই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে আর্লিং হাল্যান্ডের সাথে হুলিয়ান আলভারেজের সংযোজন। গেল মৌসুমে সিটিজেনরা ভুগেছে একজন প্রকৃত স্ট্রাইকারের অভাবে। আর সেই স্ট্রাইকারের সংযুক্তি যে পেপ গার্দিওলার কৌশলকে নতুন মাত্রা যুক্ত করে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছে ক্লাবটি। কেভিন ডি ব্রুইনের সাথে হাল্যান্ডের জুটিটা যেন যে কোন দলের স্বপ্ন। তাছাড়া একেবারে গোলবারের নিচ থেকে শুরু করে আক্রমণভাগ, প্রতিটা ডিপার্টমেন্টের টপনচ বর্তমান ম্যানচেস্টার সিটি। এই দলটি যে কোন প্রতিপক্ষের জন্যেই আতঙ্ক। রিয়াল মাদ্রিদও ব্যতিক্রম নয়।

হ্যা, একথা সত্য যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে রিয়াল মাদ্রিদ সর্বদাই ফেভারিট। এবারও হয়ত অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে থাকবে ক্লাবটি। তবুও রিয়াল মাদ্রিদ দলে রয়েছে বেশ কিছু ইনজুরি সমস্যা। তাছাড়া আত্মবিশ্বাসের অভাবটাও কোথাও একটা উঁকি দিচ্ছে। কেননা লা লিগা জেতা হচ্ছে না লস ব্ল্যাঙ্কোসদের। তার থেকেও পীড়াদায়ক বিষয় বার্সেলোনার থেকে ১৪ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে কার্লো আনচেলত্তির দলকে।

তাছাড়া ওসাসুনার বিপক্ষে কোপা ডেল রে এর ম্যাচটায় খালি চোখেই রিয়ালের ছন্দপতনের একটা আভাস পাওয়া যায়। শুরুর ৩০ মিনিট রীতিমত আধিপত্য বিস্তার করেছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। তবে এরপরই খেই হারিয়ে ফেলে করিম বেনজেমার দল।

অবশ্য ম্যাচের শেষদিকে আবারও নিজেদের টেম্পারমেন্টটা খুঁজে পায় মাদ্রিদ। শেষ অবধি জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ২-১ ব্যবধানে। তবে এই মাঝের মনোযোগ হারিয়ে ফেলার সময়টায় ম্যানচেস্টার সিটি ব্যবধানটা বাড়িয়ে নিতে পারে বহুগুণে। সেটা বাড়তি চাপ বাড়াবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অন্যদিকে ক্লান্তির বিষয়টিও এড়ীয়ে যেতে পারছে না ফেদে ভালভার্দে, ভিনিসিয়াস জুনিয়ররা। ঘরোয়া লিগ থেকে শুরু করে তিন ভিন্ন প্রতিযোগিতায় লড়াই করে যাওয়াটা বেশ ক্লান্তিকরই বটে। বিশ্রামের পর্যাপ্ত সময়টাও পাচ্ছে না দলগুলো। কোপা দেল রে জেতার তিন দিনের মাথায় ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে খেলতে নামছে রিয়াল মাদ্রিদ।

শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শারীরিক ও মানসিক শক্তিক্ষয় হয় সবচেয়ে বেশি। সেদিক থেকে হয়ত রিয়াল মাদ্রিদ এবার একটু পেছনেই পড়ে যেতে পারে। আর সিটিজেনরা সেই সুযোগ লুফে নিয়ে প্রথম লেগেই ছিটকে দিতে পারে ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দলকে।

তবে টূর্নামেন্টটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বলেই আশায় বুক বাঁধছে মাদ্রিদ সমর্থকরা। গেল আসরেই তো কতসব বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে ক্লাবটি। রুপকথার এক পৃথিবীর ভ্রমণ করিয়েছে সমর্থকদের। সেখান থেকেই যেন বিশ্বাস আরও খানিকটা পোক্ত হয়েছে। ইস্পাত কঠিন হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link