বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ট্রলের শিকার হওয়া ক্রিকেটারদের তালিকায় উপরের দিকেই থাকবে নাজমুল হোসেন শান্তর নাম। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে বদলেছে সে দৃশ্য। নিয়মিত রান করে জাতীয় দলের অন্যতম ভরসার পাত্রে পরিণত হয়েছেন এই তারকা।
বয়সভিত্তিক দলে থাকতেই তাঁর মাঝে ভবিষ্যতের তারকা হওয়ার সমস্ত গুণাবলী দেখেছিলেন সকলে। ছোটদের ক্রিকেটে রীতিমতো রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। ব্যাটিং টেকনিক ভালো, শট খেলতে জানেন উইকেটের চারপাশেই। সব মিলিয়ে শান্তকে ঘিরে আশাবাদী না হবার কোনো কারণই ছিল না।
কিন্তু ছোটদের ক্রিকেট পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখতেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন পুরনো শান্ত। ব্যাটে রান পাচ্ছিলেন না, আউট হচ্ছিলেন হাস্যকর সব ভঙ্গিমায়। সাধারণ মানের বোলাররাও হয়ে উঠেছিলেন শান্তর জন্য দুর্বোধ্য।
জাতীয় দলে প্রথম ছয় বছরে নিজের সামর্থ্যের ছিটেফোঁটাও মাঠে দেখাতে পারেননি এই তারকা। লাল বলের ক্রিকেটে মাত্র ২৫ গড়ের পাশাপাশি সাদা বলের ক্রিকেটেও ছিলেন ব্যর্থ। প্রথম ১৫ ওয়ানডে শেষে তাঁর গড় ছিল মাত্র ১৪! মাঝে মধ্যে হয়তো আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে কখনোই রান করতে পারেননি।
সব মিলিয়ে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন এই তারকা। সমর্থকরা তো বাতিলের খাতাতেই ছুঁড়ে ফেলেছিলেন এই তরুণকে, অন্যায়ভাবে শান্তকে জাতীয় দলে খেলানো হচ্ছে এমন দাবিও উঠেছিল বেশ কয়েক বার।
তবে শান্তর উপর ভরসা হারায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। কঠিন সময়েও তাঁর কাঁধে আস্থার হাত রেখেছেন অধিনায়ক, একাদশে সুযোগ দিয়েছেন নিয়মিত। শান্তও হাল ছাড়েননি, ফেরার লড়াইটা চালিয়ে গেছেন প্রতিনিয়ত। ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে কাজ করেছেন, শটের সংখ্যা বাড়িয়েছেন। রক্ষণাত্নক ব্যাটিংয়ের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আক্রমণাত্নক ব্যাটিংই এখন শান্তর ধ্যানজ্ঞান।
টিম ম্যানেজমেন্টের সেই আস্থার প্রতিদান কি দারুণভাবেই না দিচ্ছেন এই তরুণ। গত বছর থেকে ব্যাট হাতে আছেন দারুণ ফর্মে, বিপিএলে জিতেছিলেন সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের খেতাব। ফর্মটা টেনে এনেছেন জাতীয় দলেও, টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের অন্যতম রূপকার শান্ত। ইনিংসের শুরুতে নেমে তাঁর মারমুখী ব্যাটিং জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের জন্য।
ফর্মটা তিনি ধরে রেখেছেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও। প্রথম ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। সেই হতাশা থেকেই কিনা দ্বিতীয় ম্যাচের শুরু থেকেই ইনিংস বড় করায় মনোযোগী শান্ত। ৪৫ ওভারে ৩২০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অপরপ্রান্তের তিন টপ অর্ডার ব্যাটার দ্রুত ফিরলেও শান্ত ছিলেন অবিচল।
ভালো বলকে যেমন সম্মান করেছেন, তেমনি বাজে বলকে সীমানা ছাড়া করতে দুবার ভাবেননি। আস্কিং রানরেট কখনোই নাগালের বাইরে যেতে দেননি। বরং বাউন্ডারির পাশাপাশি সিংগেল-ডাবলসে রানের চাকা সচল রেখেছেন প্রতিনিয়ত। ১২ চার এবং তিন ছয়ে ৯৩ বলে ১১৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে যখন সাজঘরে ফিরছেন ততক্ষণে জয়ের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে বহুদূর।
কয়েক মাস পেরোলেই ভারতের মাটিতে বসবে বিশ্বকাপের আসর। শান্ত চাইবেন ফর্মটা ধরে রেখে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের প্রতিভার জানান দিতে, বুঝিয়ে দিতে এভাবেও ফিরে আসা যায়।