এমন বড় লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে সাধারণত তাসের ঘরের মতই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। ৩২০ রান তাড়া করতে নেমে ১০১ রানে তিন উইকেট হারানোর পর সেই শংকাটাই উঁকি দিচ্ছিলো বেশি করে। তবে সেটা আর হতে দেননি নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। নতুন দিনের বাংলাদেশের প্রতিফলন দেখিয়ে দুর্দান্ত এক পার্টনারশিপে বাংলাদেশকে স্মরণীয় এক জয়ের পথ রচনা করে দিলে তারা।
শেষদিকে মুশফিকুর রহিমের দারুন ফিনিশিংয়ে জয় নিশ্চিত হলেও বাংলাদেশের জয় মূলত অনেকটাই নিশ্চিত করে দিয়ে যান শান্ত ও হৃদয়। অধিনায়ক তামিম ইকবালও ম্যাচ শেষে প্রশংসায় ভাসালেন তাঁর দলের তরুণ দুই যোদ্ধাকে। শান্ত আর হৃদয় পার্টনারশিপে এদিন এমন একটি বিষয় দেখা গেছে যা সাধারণত বাংলাদেশের রান তাড়ায় দেখা যায় না।
পার্টনারশিপের পুরোটা সময় রানরেটকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন এই দুই ব্যাটার। আটের ওপর যেতে দেননি রিকোয়ার্ড রান রেট। নিয়মিত বাউন্ডারির পাশাপাশি ভালো বল গুলো থেকেও সিংগেলস ডাবলস বের করেছেন শান্ত ও হৃদয়। চাপ আসতে দেননি নিজেদের ওপর।
ম্যাচ শেষে তামিম বলেন, ‘এই রান করা সম্ভব মনে হচ্ছিল। কারণ মাঠের আকৃতি ছোট। আর উইকেট খুবই ভালো। আমার মনে হয়েছে আজকের উইকেট প্রথম ম্যাচের থেকেও ভালো। আমাদের ম্যাচটাকে গভীরে নিতে হতো। কিন্তু আজ শুরুটা ভালো হয়নি। তবে আমি শান্ত ও হৃদয়ের ব্যাটিংয়ে খুবই খুশি। এই ধরনের মাঠে সাধারণত বাউন্ডারির খোঁজ করতে হয় না। মাঠের আকৃতির কারণে বাউন্ডারি এমনিতেই আসে।’
এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ওয়ানডে সিরিজ খেলছেন হৃদয়। কিন্তু তাঁর ব্যাটিংয়ে তা বোঝার উপায় কই! ২২ বছর বয়সী এই তরুণের টেম্পারমেন্টেও তাই মুগ্ধ অধিনায়ক তামিম। তিনি বলেন, ‘তরুণদের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। বিশেষ করে হৃদয়। শুধু এই সিরিজে নয়, ঘরের মাঠেও সে ভালো খেলেছে। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা খুবই ভালো হয়েছে। আশা করি সে অনেক দূর যাবে। সে যেভাবে খেলছে, সেটা যদি ধরে রাখতে পারে, তাহলে দলের জন্য খুবই ভালো হবে।’
চারদিক থেকে সমালোচনায় বিদ্ধ হয়ে একসময় নিজের উপলব্ধির কথা বলতে গিয়ে শান্ত তো বলেই ফেলেছিলেন মাঝে মাঝে তাঁর মনে হয় দেশের বিরুদ্ধে খেলছেন তিনি। সেই শান্ত গত তিন সিরিজ ধরে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার। গ্যালারি শান্ত শান্ত’ ধ্বনিতে মুখোরিত হয়।
টেস্ট ক্রিকেটে এর আগেও দুটো সেঞ্চুরি থাকলে ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা যেন পাওয়াই হচ্ছিলো না শান্তর। সেই প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা এমন সময়ে পেলেন যখন দলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাকে। তিনশোর বেশি রান তাড়া করতে নেমে এমন দাপুটে ইনিংস বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই হয়তো দুই-একটি আছে। শান্ত তাই নিজের পারফরম্যান্সে বেশ খুশি।
ম্যাচসেরা পুরষ্কার নেবার পর শান্ত বলেন, ‘খুবই খুশি। আমার প্রথম সেঞ্চুরি।’ তবে ইনিংস লম্বা করার ক্ষেত্রে হৃদয়ের ভূমিকার কথাও বলেছেন তিনি, ‘ও আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে। ও যে গতিতে রান করেছে, আমার ব্যাটিংটা সহজ হয়েছে।’