ক্যারিবিয়ান শৌর্যের ‘পুরানিক’ প্রলয়োল্লাস

সাত বছর আগের গাড়ি দুর্ঘটনায় জীবনটাই হারাতে বসেছিলেন নিকোলাস পুরান। বাইশ গজে আর কখনো ফিরতে পারবেন না এই তারকা এমনটাই আশংকা করেছিল সকলে। তবে পুরান ফিরেছেন, বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ করছেন গোটা বিশ্বকে। 

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভাবা হয় তাঁকে। ২০১৪ সালে ছোটদের বিশ্বকাপেই দেখিয়েছিলেন প্রতিভার ঝলক। তাঁর পরিণত ব্যাটিং চমকে দিয়েছিল সবাইকে। দেখতে মাঝারি গড়নের হলেও বিশাল সব ছক্কা হাঁকাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

ফলে অল্প বয়সেই বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোর মূল আকর্ষণে পরিণত হয়েছেন এই তারকা। আইপিএল, বিপিএল, পিএসএল কিংবা সিপিএল, সব খানেই সরব উপস্থিতি এই তারকার। মজার ব্যাপার হলো কেবল ব্যাটিং কিংবা উইকেট সামলানো নয়, দলের প্রয়োজনে পার্টটাইমার হিসেবে বল হাতেও দারুণ কার্যকরী এই তারকা।

তবে বাকি ক্যারিবীয় তারকাদের সাথে পুরানের পার্থক্য হলো জাতীয় দলের খেলার সাথে কখনো আপোষ করেননি। ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের শত ব্যস্ততা থাকলেও জাতীয় দলের ডাকে সব সময়েই ছুটে গেছেন।

মাঝে তো সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অধিনায়কত্বও করেছেন বেশ কিছুদিন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাজে পারফর্ম করায় সরে দাঁড়ান সেই দায়িত্ব থেকে। 

২০২১ আইপিএলে রীতিমতো ভুলে যাবার মতো এক মৌসুম কাটান পুরান। সেবারে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে ১২ ম্যাচে মাত্র ৮৫ রান করেন এই তারকা। গোটা মৌসুমজুড়ে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন মাত্র পাঁচটি। পরের মৌসুমে তাই বদলে ঠিকানা হয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ।

হায়দ্রাবাদের হয়ে মিডল অর্ডারে মন্দ করেননি, প্রায় দেড়শো স্ট্রাইকরেটে ৩০৬ রান করেন এই তারকা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এবারের মৌসুমের শুরুতে পুরানকে ছেড়ে দেয় দলটি।

এতে অবশ্য আখেরে লাভ হয়েছে পুরানেরই। নিলামের টেবিলে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তাঁকে ঘিরে। শেষ পর্যন্ত ১৬ কোটি রুপির বিশাল অংকের বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় লখনৌ সুপার জায়ান্টস। দলটি যে পুরানের উপর বাজি ধরে ভুল করেনি, সেটা মাঠের পারফরম্যান্সেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন এই তারকা।

মার্কাস স্টয়নিস এবং ক্রুনাল পান্ডিয়ার অফফর্ম মোটেও টের পেতে দিচ্ছেন না এই তারকা। মৌসুমের শুরু থেকেই আছেন দুর্দান্ত ফর্মে, লখনৌর মিডল অর্ডারকে টানছেন একা হাতে।

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৯ বলে ৬২ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। এবারের নিজের পুরনো দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষেও ধরে রাখলেন ছন্দটা। 

রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে পুরান যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, তখনো জয় থেকে বেশ দূরে লখনৌ। কিন্তু নেমেই যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন এই ক্যারিবিয়ান তারকা, অভিষেক শর্মার তিনটি বলকেই পাঠালেন গ্যালারীতে। মুহুর্তেই বদলে গেল ম্যাচের চিত্রনাট্য, ২৭ বলে ৫৬ লক্ষ্যটা নামিয়ে আনলেন শেষ চার ওভারে ৩৮ রানে।

এরপরও থামেনি পুরান ঝড়, তাঁর বিশাল সব ছক্কাগুলো যেন বুকে শেল বিঁধছিল স্বাগতিক সমর্থকদের। শেষপর্যন্ত তিন চার এবং চার ছক্কায় ১৩ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েই ফিরেছেন এই তারকা। 

বছরের শেষভাগে ভারতের মাটিতেই বসবে বিশ্বকাপের আসর। আইপিএলের ফর্মটা তাই জাতীয় দলের জার্সিতেও টেনে আনতে চাইবেন পুরান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link