পোক্ত নয় বাঘের লেজ

বেশ একটা প্রতিকূল পরিবেশেই বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। চেমসফোর্ডের ছোট্ট মাঠে ২৭৫ রান ডিফেন্ড যেমন করেছে তেমনি প্রচণ্ড ঠান্ডার মাঝেও ৪৫ ওভারে ৩২০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছে। সুতরাং সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য দাবিদার টিম টাইগার্স।

চেমসফোর্ডের সেই মাঠের প্রতি ইনিংসের গড় সংগ্রহ ২৮৫ এর আশে পাশে। তেমন মাঠে বোলারদের দক্ষতায় ম্যাচ বেড়িয়ে এসেছে। একটা পর্যায় হার নিশ্চিতই ছিল। সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর ব্যাটারদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই রান পাচ্ছে। যদিও ইনিংসগুলো বড় করতে পারেনি। কেবল শান্ত ছাড়া আর কোন ব্যাটারই তিন অংকের দেখা পায়নি।

বোলারদের মধ্যে হাসান মাহমুদ ছিলেন একেবারে টপনচ। প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ না পাওয়া মুস্তাফিজুর রহমানও শেষ ম্যাচে নিজের ঝলকানি দেখিয়েছেন। আর ফিল্ডিং ডিপার্টমেন্টে চোখে লেগে থাকার মতই উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ প্রশংসার যোগ্য। তবুও একটু দুশ্চিন্তা থেকেই যায়।

মূলত দুশ্চিন্তা ব্যাটিং ইউনিটের লোয়ার অর্ডার নিয়ে। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট বেশ একটা সাহসী সিদ্ধান্তই নিয়েছে বলা চলে। দলের স্বীকৃত সাতজন ব্যাটার নিয়ে তারা প্রতিটি ম্যাচে নেমেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। খানিক উদ্রেক ঘটাচ্ছে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের লেজের দিকের ব্যাটারদের সক্ষমতা।

আয়ারল্যান্ড সফরের আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ক্যাম্প করেছিল টাইগাররা। সেখানে দ্বিতীয় দিনের ক্যাম্পে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটিংয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল সব থেকে বেশি। বাংলাদেশের প্রতিটা বোলার সেদিন ব্যাট হাতে নেট অনুশীলনে ঘাম ঝড়িয়েছে। সেখান থেকেই আন্দাজ করে নেওয়া গেছে, যে বাংলাদেশ চাইছে তাদের লেজটা শক্ত করতে।

সেটাও আবার দীর্ঘ মেয়াদি একটা প্রক্রিয়া। খুব সহসাই ফলাফল মিলে যাবে তেমনটা ভাবা আর বোকার স্বর্গে বাস করা প্রায় একই বিষয়। কেননা আয়ারল্যান্ড সিরিজেই আরও একবার টাইগারদের লোয়ার অর্ডারকে খাবি খেতে দেখা গেছে। শেষ ম্যাচটা সামগ্রিক একটা চিত্র দাঁড় করানোর জন্য যথেষ্ট।

শেষ ম্যাচে ৩০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার ছিল। ২৬১ রানে মুশফিকুর রহিম আউট হয়ে যাওয়ার পর রীতিমত তাসের ঘরে পরিণত হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। পরবর্তী ১৩ রান তুলতেই সাজ ঘরে টাইগারদের পুরো ব্যাটিং অর্ডার। এক্ষেত্রে খানিকটা দায় চাপিয়ে দেওয়া যায় মুশফিক ও মেহেদী হাসান মিরাজের উপর।

তারা নিজেদের ইনিংসগুলো বড় করতে পারলেই হয়ত বাংলাদেশ ৩০০ রান পেরিয়ে যেত। তবে পরিস্থিতি বিচারে চালিয়ে খেলতে চেয়েছেন দুইজনই। ভরসা রাখতে চেয়েছিলেন টেলএন্ডারদের প্রতি। কিন্তু সে ভরসার স্তম্ভ হতে পারেনি হাসান, মুস্তাফিজ, এবাদত হোসেনরা।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার ম্যাচে অবশ্য টুকটাক রান করেছিলেন শেষের চার ব্যাটার। মোট ৩৫ রান করেছিলেন তাইজুল ইসলাম, শরিফুল ইসলামরা। এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের লেজের দিকের ব্যাটারদের এখনও ভরসার স্তম্ভ হয়ে ওঠার মত সক্ষমতা হয়নি।

বিশ্বকাপের মঞ্চে তাই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট স্বীকৃত সাত ব্যাটার নিয়েই খেলার সাহস দেখাবে কি-না সেটাই বড় এক প্রশ্ন। যদিও বিশ্বকাপ দলে তাসকিন আহমেদ ফিরলে খানিকটা ভরসা পাবে বাংলাদেশ। কেননা তাসকিন নিজের বোলিং সক্ষমতায় ধার দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাটিং নিয়েও কাজ করেছেন।

তবে তার অবর্তমানে একজন অতিরিক্ত ব্যাটার নিয়ে বাংলাদেশকে খেলতে হতে পারে। সেখানেই মূলত একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাবটা আবারও জোড়ালো হয়। কিন্তু দেশের ক্রিকেট মহলের আবহাওয়া বলছে ভিন্ন কথা। বরং তারা অভিজ্ঞতার প্রধান্য দিয়ে আট ব্যাটার নিয়েই খেলার পরিকল্পনা চালাচ্ছে।

সেক্ষেত্রে সাকিব আল হাসানের উপর বোলিংয়ের দায়িত্বটা বেড়ে যাবে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটার সাকিবকেই বেশি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে হয়ত বাংলাদেশ। তবে দীর্ঘ মেয়াদি কোন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিশ্চয়ই লোয়ার অর্ডারের সামর্থ্য বাড়ানোর কাজটা চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সেটাই তো প্রত্যাশিত।

Bangladesh’s Mehidy Hasan Miraz celebrates after scoring a century (100 runs) during the second one-day international (ODI) cricket match between Bangladesh and India at the Sher-e-Bangla National Cricket Stadium in Dhaka on December 7, 2022. (Photo by Munir uz ZAMAN / AFP) (Photo by MUNIR UZ ZAMAN/AFP via Getty Images)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link