বাবার জন্যই মহসিনের এই পারফরম্যান্স

শেষ ওভারে প্রয়োজন ১১ রান। ক্রিজে তখন ব্যাট করছেন ডেথ ওভারে বোলারদের জন্য আতঙ্ক হয়ে ওঠা টিম ডেভিড ও ক্যামেরন গ্রিন। সবকিছুই তাই ছিল লখনৌর হয়ে শেষ ওভারে বল করতে আসা পেসার মহসিন খানের প্রতিকূলে।

কিন্তু শেষ ওভারটায় মহসিন খান দিলেন মাত্র পাঁচ রান। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ইস্পাত কঠিন মনোবলের প্রমাণ রেখে দারুণ ছয়টি ডেলিভারি করলেন। ইয়োর্কার, স্লোয়ারের এমন নিখুঁত প্রয়োগ ইনিংসের শেষ ওভারে শেষ কবে দেখা গেছে তা বের করতে নিশ্চিতভাবেই স্মৃতি হাতরাতে হবে।

তবে মহসিন খান প্রথম নজরে আসেন আইপিএলের গত আসরেই। লখনৌর হয়ে আইপিএলে শুরুটাও হয় দুর্দান্ত। তবে ইনজুরির কারণে আইপিএলের পরে আর তেমন কোথাও খেলার সুযোগ পাননি মহসিন। কাঁধে অস্ত্রোপাচারও করতে হয়েছিল এই বোলারের। এবারের আসরেরও প্রথম অংশটা কেটেছে সুস্থ হবার প্রক্রিয়া শেষ করতেই।

ইনজুরির পুরো সময়টায় মহসিনের পাশেই ছিল লখনৌ সুপার জায়ান্টস। ইনজুরি আর রিহ্যাবের সময় পেরিয়ে যখন মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মহসিন তখনই তাঁর জীবনে হানা দেয় আরো একটি বিপর্যয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মহসিনের বাবাকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। বাবাকে হাসপাতালে রেখেই আইপিএলে মাঠে নেমেছিলেন মহসিন খান।

ধীরে ধীরে মহসিনের বাবার অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। গত ১০ দিন ধরে আইসিইউতে ভর্তি আছেন মহসিনের বাবা। মহসিনের এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নিশ্চই একটা প্রশান্তির পরশ বয়ে যাবে তাঁর বাবার মধ্যে।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ম্যাচে মার্কাস স্টয়নিসের ঝড়ে বেশ বড় সংগ্রহই পেয়েছিল লখনৌ। তবে উদ্বোধনী জুটিতে রোহিত শর্মা ও ইশান কিষানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে থাকে লখনৌ। এই দুই ব্যাটার আউট হলেও শেষ দিকে ঝড় তোলেন টিম ডেভিড। চলতি টুর্নামেন্টের আরো অনেক ম্যাচের মতই ডেভিড মুম্বাইয়ে জিতিয়ে মাঠ ছাড়বেন সেটিই তখন প্রত্যাশিত।

কিন্তু পাশার দান উল্টে দিলেন মহসিন। দুর্দান্ত শেষ ওভারে পাঁচ রানের বেশি নিতে দিলেন না মুম্বাইকে। লখনৌর জয়ের নায়ক হয়ে নিজের ফিরে আসাটা জানান দিলেন তিনি। স্লোয়ার, ইয়োর্কারের এমন নিখুঁত প্রয়োগের কারণে কাল বিশ্বজুড়েই এখন প্রশংসিত হচ্ছেন এই বাঁ-হাতি পেসার।

ম্যাচ শেষে মহসিন জানান, তাঁর এই পারফরম্যান্স আইসিইউতে থাকা বাবার জন্য। মহসিন বলেন, ‘এক বছর পরে খেলছি। চোট পেয়েছিলাম। আমার জন্য ওটা অত্যন্ত কঠিন সময় ছিল। গতবছর যেভাবে বোলিং করেছিলাম, আজ মনে হচ্ছে যে সেভাবেই (বোলিং) করতে পেরেছি। তাই আমি অত্যন্ত খুশি। সম্প্রতি আমার বাবাও আইসিইউতে ছিল। কালই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। আমি বাবার জন্যও এই ম্যাচটা খেলেছিলাম। বাবা হয়ত টিভিতে ম্যাচটা দেখছে। বাবার জন্য খেলছিলাম আমি। গত ১০ দিন ধরে আমার বাবা আইসিইউতে ছিল। বাবা অত্যন্ত আনন্দিত হবে নিশ্চয়ই।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link