ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে জাতীয় দলে পৌঁছানোর রাস্তাটা সহজ নয়। অনেক রান করার পরই একজন ব্যাটসম্যানকে জায়গা দেওয়া হয় জাতীয় দলে। জাতীয় দলে যারা খেলেন তারা সৌভাগ্যবান, যারা সুযোগ পেয়েই অভিষেক ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে ফেলেন – তাদের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করার তো কোনো সুযোগই নেই। তাঁর সামর্থ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করার অবকাশ নেই।
মানে, ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংস দিয়েই দলে জায়গাটা পাকাপোক্ত হয়ে গেল। এরপর তো আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না। যদিও, এমন অনেকেই আছেন যারা ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি দিয়ে শুরু করার পরও ক্যারিয়ার বড় করতে পারেননি। ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন আক্ষেপের সংখ্যা নেহায়েৎ কম নয়।
- কলিন ইনগ্রাম (দক্ষিণ আফ্রিকা)
আবির্ভাবেই প্রোটিয়া এই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেটা ২০১০ সালের ঘটনা। বড় মঞ্চে খেলা প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি। ‘নেক্সট বিগ থিঙ’ বলা হচ্ছিল কলিন ইনগ্রামকে। যদিও, পরের সময়টা সাদামাটাই ছিল তাঁর।
৩১ ওয়ানডেতে ৩২.৪২ গড়ে করেন ৮৪৩ রান। স্ট্রাইক রেট ৮২.৪। নয় টি-টোয়েন্টিতে করেন ২৬.২৫ গড়ে ২১০ রান। স্ট্রাইক রেট ১৩০-এর মত। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, আর নির্বাচকদের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ ইনগ্রাম পরবর্তীতে কলপ্যাক চুক্তিতে নাম লেখান। এখন তিনি মোটামুটি দাপটের সাথে বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগ খেলে বেড়াচ্ছেন।
- সেলিম এলাহি (পাকিস্তান)
তিনি ইনিংস উদ্বোধনের সুযোগ পেয়েছিলেন স্বয়ং আমির সোহেলের সাথে, অভিষেকেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের ১৯৯৫ সালের সেই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে করেন ১০২ রান। পাকিস্তান জিতে। তবে, সেলিম এলাহী এই দারুণ শুরুর পরও দলে আশা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন।
২০০৩ বিশ্বকাপের পরপরই তাঁর ক্যারিয়ারের ইতি নামে। এই আট-নয় বছরে তিনি ৪৮ টি ওয়ানডে খেলে ১৫৭৯ রান করেন ৩৬.৭২ গড়ে। স্ট্রাইক রেট ৭১.৩২। যদিও, করেন চার সেঞ্চুরি ও নয় হাফ সেঞ্চুরি। তিনি লম্বা সময় বাংলাদেশের ঘরোয় ক্রিকেটেও খেলেন।
টেস্টের অবস্থা আরো যাচ্ছেতাই। ১৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে হাফ সেঞ্চুরি মাত্র একটি। রান করেছেন ১৯-এরও কম গড়ে।
- রব নিকোল (নিউজিল্যান্ড)
অভিষেক ইনিংসে মাত্র দু’জন কিউই সেঞ্চুরি করেন। তাদের একজন হলেন মার্টিন গাপটিল। আরেকজন হলেন রব নিকোল। কিন্তু, গাপটিল পরে যতটা মহীরূহ হয়ে উঠেছেন, রব নিকোল তার ধারের কাছেও যেতে পারেননি।
কোকড়া চুলের এই ব্যাটসম্যান ২০১১ সালে ওয়ানডে অভিষেকে জিম্বাবুয়ের মাটিতে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন। তবে, ধারাবাহিকতার অভাবে তিনি হারিয়ে যান দ্রুতই। আর টপ অর্ডারে কেন উইলিয়ামসন ও টম ল্যাথামদের আগমন তাঁর জন্য পথটা কঠিন করে দেয়।
তিনি ২২ ওয়ানডেতে ৫৮৬ রান করেন ৩০-এর সামান্য ওপরে গড় নিয়ে। আর ২১ টি-টোয়েন্টি করেন ৩২৭ রান। সেখানে গড় ১৭.২১ ও স্ট্রাইক রেট ১১০.৪৭।
- মাইকেল লাম্ব (ইংল্যান্ড)
তার কথা মনে রাখার কথা নয় কারোই। তবে, ক্রিকেটের একটু গভীরে খোঁজ রাখা সহজেই মনে করতে পারবেন তাঁকে। ২০১০ সালে যেবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতলো ইংল্যান্ড – তখন ক্রেইগ কিসওয়েটারের সাথে ওপেন করতেন লাম্ব। সেখানে লাম্বের ভূমিকাও নেহায়েৎ কম নয়।
লাম্ব মূলত টি-টোয়েন্টির বিস্ফোরক ইনিংসের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তবে, ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের সুবাদে ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাঁর ওয়ানডে অভিষেক হয়। অভিষেকেই করেন ১০৬ রান, আস্থাভাজন হন নির্বাচকদের।
তবে, ২০১৫ বিশ্বকাপের পরবর্তী ‘বদলে দেওয়া’র পরিস্থিতিতে তিনি দল থেকে জায়গা হারান। তিনি তিন ওয়ানডেতে করেন ১৬৫ রান। গড় ৫৫, স্ট্রাইক রেট ৮১.২৮। আরেকটু সুযোগ পাওয়ার দাবিদার ছিলেন। তিনি ২৭ টি-টোয়েন্টিতে করেন ৫৫২ রান। গড় ২১.২৪, স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৬৬।
- আবিদ আলী (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের ব্যাটিং ক’দিন হল ভোগাচ্ছে পাকিস্তানকে। বিশেষ করে টপ অর্ডার, তবে সেখানে দারুণ একটা সম্পদ হতে পারতেন আবিদ আলী। ওয়ানডেতে তাঁর অভিষেক হয় ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, প্রথম দিনই ৯৪.১১ স্ট্রাইক রেটে করেন ১১২ রান। যদিও, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেই ম্যাচ হারে পাকিস্তান।
সেই ইনিংসের সুবাদে বিশ্বকাপ দলেও জায়গা হয়। তবে, সেটা পরিকল্পনা মাফিক হয়নি। এখন অবধি ছয় ওয়ানডেতে ২৩৪ রান করেন তিনি ৩৯ গড়ে। বরং টেস্টে তিনি তুলনামূলক বেশি কার্যকর। ছয় টেস্টে ৫৭.৫ গড়ে করেছেন ৪৬০ রান। এর মধ্যে সেরা ইনিংসটা ১৭৪ রানের।