আবারো শেষ ওভারের রোমাঞ্চ! আবারো রিঙ্কু তাণ্ডব! তবে শেষ পর্যন্ত ইডেন গার্ডেনে ‘রিঙ্কু ঝড়ও’ কলকাতার পরাজয় এড়াতে পারেনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ১ রানে হারিয়ে প্লে-অফ নিশ্চিত করলো লখনৌ সুপারজায়ান্টস।
তবে টসে হেরে এ দিন প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি লখনৌর। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই হার্শিত রানার বলে শার্দুল ঠাকুরের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান করণ শর্মা।
এরপর কুইন্টন ডি কক আর প্রেরক মানকাড় জুটিতে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় লখনৌ। তবে দলীয় ৫৫ রানে মানকাড়ের বিদায়ের পর আবারো ধাক্কা খায় তাঁরা। বৈভব অরোরার বোলিং তোপে কোনো রান যোগ না করেই এরপর ফিরে যান মার্কাস স্টয়নিস।
এর কিছুক্ষণ বাদে স্টয়নিসের পথ ধরেন অধিনায়ক ক্রুনাল পান্ডিয়াও। ফলত, ১৬ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে লখনৌ। বিপত্তি আরো বেড়ে যায়, যখন উইকেটে থিতু থাকা ব্যাটার ডি ককও ফিরে যান।
অবশ্য, আয়ুষ বাদোনি আর নিকোলাস পুরানের ব্যাটিংয়ে সাময়িক বিপদ কাটিয়ে ওঠে লখনৌ। এ দুই ব্যাটার মিলে গড়ে তোলেন ৮৬ রানের জুটি। আয়ুষ বাদোনি ২১ বলে ২৫ রানে ফিরে গেলেও ব্যক্তিগত অর্ধ-শতক তুলে নিতে ভুল করেননি নিকোলাস পুরান।
৪ চার আর ৫ ছক্কায় ৩০ বলে এ ক্যারিবিয়ান ব্যাটার তাঁর ইনিংস সাজান ৫৮ রানে। আর তাঁর ব্যাটিং তাণ্ডবেই নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ১৭৬ রান জমা করেন লখনৌ সুপারজায়ান্টস।
লখনৌর দেয়া ১৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে শুরুতেই আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন কলকাতার দুই ওপেনার জেসন রয় আর ভেঙ্কটেশ আইয়ার। এ দুই ব্যাটারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে প্রথম ৬ ওভারে ৬১ রানের উড়ন্ত সূচনা পায় কলকাতা। তবে পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরই লখনৌর স্পিনারদের স্পিন ঘূর্ণিতে ধাক্কা খায় কলকাতার টপঅর্ডার ব্যাটাররা।
শুরুটা হয় ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে দিয়ে। এরপর একে ফিরে যান নিতিশ রানা আর ফিফটি পূরণের পথে থাকা জেসন রয়। ক্রুনাল পান্ডিয়ার বলে বোল্ড আউট হওয়ার আগে এ ইংলিশ ব্যাটার ৭ চার আর ১ ছক্কায় ৪৫ রানের ইনিংস সাজান।
জেসন রয়ের পর রহমানুল্লাহ গুরবাজও এ দিন কলকাতার সমর্থকদের হতাশ করেন। ১৫ বলে ১০ রান করে ফেরেন আফগান এ ব্যাটার। হঠাতই ব্যাটারদের এমন ছন্দপতনে কলকাতার ম্যাচ হারের শঙ্কাও ক্রমেই বাড়ছিল। আস্কিং রেট বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ১২ তে।
তবে তখনো উইকেটে ছিলেন রিঙ্কু সিং আর আন্দ্রে রাসেল। ম্যাচের এমন পরিস্থিতিতে তাই এ দুই ব্যাটারের উপরেই তাঁকিয়েছিল কলকাতা। তবে কলকাতার সেই আশা মেটাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন আন্দ্রে রাসেল। ১৬ তম ওভারে রবি বিষ্ণয়কে ছক্কা মারলেও পরেই বলেই বোল্ড হয়ে ফিরে যান এ ক্যারিবিয়ান পাওয়ার হিটার।
রাসেল ফিরে যাওয়ার পর কার্যত সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তবে নিঃসঙ্গ লড়াই চালিয়েছিলেন রিঙ্কু সিং। শেষ ২ ওভারে ৪১ রানের সমীকরণের সামনে নাভিন উল হকের করা ১৯ তম ওভারে ২০ রান তুলে নেন এ বাঁ-হাতি ব্যাটার। ম্যাচ জমে ওঠে সেখানেই।
ইয়াশ দয়ালকে শেষ ৫ বলে ৫ ছক্কা মেরে চলতি আসরেই গুজরাটের বিপক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে কলকাতাকে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন রিঙ্কু সিং। লখনৌর বিপক্ষে শেষ ওভারে এবার ২১ রানের চ্যালেঞ্জ। কাকতালীয়ভাবে বোলিং প্রান্তে এবার আরেক ‘ইয়াশ’, ইয়াশ ঠাকুর!
তবে এবার এই ইয়াশের সাথে আর পেরে ওঠেননি রিঙ্কু সিং। যদিও নিজের ব্যাটিং আগ্রাসনে এই ইয়াশকেও প্রায় পরাভূতই করে ফেলেছিলেন তিনি। শেষ ৩ বলে ৩ ছক্কার সমীকরণে দুটি ছক্কাও মেরেছিলেন। তবে মাঝের বলে চার হওয়ায় লক্ষ্য থেকে ২ রানে দূরে থেমে যায় কলকাতার ইনিংস। আর তাই দিনশেষে ৩৩ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলেও রিঙ্কুর ঠাঁই হয় বিজীতদের শিবিরে।
১ রানের এ জয়ে তৃতীয় দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত করলো লখনৌ। আর এ পরাজয়ে চতুর্থ দল হিসেবে এবারের আসরে বিদায় নিশ্চিত হলো কলকাতা নাইট রাইডার্সের।