এক সময় ভারত জাতীয় দলের ভবিষ্যত ওপেনার ভাবা হতো তাঁকে। কিন্তু বাজে ফর্মের সুবাদে জাতীয় দলের বাইরে আছেন বহুদিন। এবারের আইপিএলে ধারাবাহিকভাবে রান না পেলেও ঝড়ো ইনিংসে বুঝিয়ে দিয়েছেন এখনো পুরনো ছন্দে ফেরার সামর্থ্য রাখেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল।
ছোটদের বিশ্বকাপে ভারত বরাবরই সফল হলেও ২০১০ বিশ্বকাপে ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ভারত ফাইনালের আগে বিদায় নিলেও ব্যাট হাতে মায়াঙ্ক আগারওয়াল ছিলেন অনবদ্য। গোটা টুর্নামেন্টে দলকে টেনেছেন একা হাতে। সবাই ভেবে নিয়েছিলেন জাতীয় দলে সুযোগ পেতেও বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না তাঁকে।
কিন্তু এরপরেও যেন ক্যারিয়ার থমকে যায় আগারওয়ালের জন্য। জাতীয় দল তো দূর, ঘরোয়া ক্রিকেটে কর্ণাটকের স্কোয়াডে নিয়মিত হতেই সময় লেগে যায় প্রায় পাঁচ বছর। আগারওয়াল অবশ্য হাল ছাড়েননি, নিজের ছোটবেলার কোচ আর মুরালিধরনের সাথে কাজ করেছেন নিজের ব্যাটিং নিয়ে।
ব্যাটিং টেকনিকে বদল এনেছেন, পেশিশক্তিতে নির্ভর না করে বরং নজর দিয়েছেন শটের সংখ্যা বাড়াতে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছিলেন পেসের বিপক্ষে দারুণ সাবলীল। ক্রমেই সুইপ কিংবা রিভার্স সুইপের মতো অপ্রচলিত সব শট আয়ত্ত্বে এনে স্পিনারদের বিপক্ষে দুর্বলতা কাটিয়ে তোলেন।
ঘরোয়া ক্রিকেটে এমনই রান বন্যা বইয়ে দেন যে তাঁকে উপেক্ষা করার সুযোগ ছিল না জাতীয় দলের নির্বাচকদের। ঘরোয়া ক্রিকেটে হাজার রানের কোটা পার করা যেন ছিল তাঁর জন্য ছেলেখেলা। ২০১৭ মৌসুমে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সংগ্রহ করেন ২,১৪১ রান। ফলে ভারতের তারকাবহুল টপ অর্ডার সত্ত্বেও টেস্টে সুযোগ পেয়ে যান দ্রুতই।
জাতীয় দলে শুরুর দিকে ভালো করলেও গত বছর থেকেই হুট করে যেন ছন্দ হারিয়ে ফেলেন আগারওয়াল। আইপিএলে কাটান বাজে এক মৌসুম, ফলশ্রুতিতে বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকেই। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ছিল না ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি। বরং আগারওয়াল ছিলেন নিজের ছায়া হয়েই।
এবারের আইপিএলের আগে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল পুরনো দল পাঞ্জাব কিংসও। প্রতিভাবান পরিচিতির সুবাদে অবশ্য নতুন দল খুঁজে পেতে বেগ পোহাতে হয়নি। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ তাঁকে দলে ভেড়ায় সাড়ে আট কোটি রুপির বড় অংকের বিনিময়েই।
কিন্তু এবারের আইপিএলের শুরতেও আগারওয়াল ছিলেন নিজের ছায়া হয়েই। কোনো ম্যাচেই রান পাননি, বরং স্বভাববিরুদ্ধ ধীরগতির ব্যাটিংয়ে বিপদে ফেলছিলেন দলকে। ফলে দ্রুতই জায়গা হারান একাদশ থেকে। সবাই ভেবেছিলেন আগারওয়াল এবারে হারিয়েই যাবেন বিস্মৃতির আড়ালে।
কিন্তু শেষ ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে সুযোগ পেয়ে এই তারকা যেন বুঝিয়ে দিলেন এভাবেও ফিরে আসা যায়। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই ছিলেন আগ্রাসী, শট খেলেছেন উইকেটের চারপাশে।
বিশেষ করে ফর্মে থাকা পিযুষ চাওলাকে বেশ কয়েকবারই পাঠিয়েছেন সোজা গ্যালারীতে। ফিফটি ছোঁয়ার পরও থামেননি, বরং মনোযোগী হয়েছেন ইনিংস বড় করায়। শেষ পর্যন্ত আট চার এবং চার ছক্কায় ৪৬ বলে ৮৩ রানে থামে আগারওয়ালের ঝড়ো ইনিংস।
জাতীয় দলের টপ অর্ডারে এখন তরুণ তারকার ছড়াছড়ি। আগারওয়াল জানেন তাঁর জন্য কাজটা কঠিন বটে, অসম্ভব নয় মোটেই।