টি-টোয়েন্টিতে ভারতের পালাবদল

এবারের আইপিএল যেন ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য পালাবদলের হাওয়া বইয়ে নিয়ে এসেছে। দারুণ পারফর্ম করে তরুণ তারকারা বুঝিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টির চ্যালেঞ্জটা নিতে তাঁরা প্রস্তুত। 

রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু বনাম গুজরাট টাইটান্সের ম্যাচের কথাই ধরুন না! ৬১ বলে ১০১ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলে ইনিংসের মাঝ বিরতিতে কোহলি বলেন, ‘অনেকে ভাবেন আমার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষের পথে। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। স্ট্রাইকরেট নির্ভর করে আপনি কোন পরিস্থিতিতে ব্যাট করছেন তার উপর। আমি বরং ফিল্ডিংয়ের গ্যাপ খুঁজে বাউন্ডারি বের করতেই পছন্দ করি।’ 

কিন্তু কোহলির এই ফিরে আসা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। ব্যাঙ্গালুরুর দেয়া লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুভমান গিল দেখিয়ে দেন আধুনিক টি- টোয়েন্টিটা কিভাবে খেলতে হয়। তাঁর ৫২ বলে ১০৪ রানের ইনিংসে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঘণ্টা বাজে কোহলির দলের। 

গ্যাপ খুঁজে বাউন্ডারি নয়, বরং শুভমান মনোযোগী ছিলেন সময়ের চাহিদা মেনে বলকে গ্যালারীতে পাঠানোতে। মজার ব্যাপার হলো, মাত্র কয়েক মাস আগেই কোহলি নিজেই শুভমানকে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকা আখ্যায়িত করেন। 

এবারের আইপিএলের আসরে বেশ কয়েকবারই তরুণ তারকারা বুঝিয়ে দিয়েছেন টি-টোয়েন্টিটা আসলে তাঁদেরই ফরম্যাট, পূর্বসূরিদের  রেখে যাওয়া জায়গা নিতে তাঁরা প্রস্তুত। গোটা মৌসুমজুড়েই ধারাবাহিকভাবে ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন উঠতি প্রতিভারা। রিঙ্কু সিং, যশস্বী জয়সওয়াল, জিতেশ শর্মা, শুভমান গিল কিংবা রাহুল তেওয়াতিয়া সকলেই জানান দিয়েছেন নিজের প্রতিভার। 

টি-টোয়েন্টিতে ভারতের টপ অর্ডারে অবশ্য অভিজ্ঞ তারকার কমতি নেই। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা কিংবা লোকেশ রাহুলরা রান করছেন নিয়মিতই। কিন্তু সমস্যাটা বাঁধছে তাঁরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ম্যাচে ইম্প্যাক্ট রাখতে পারছেন না, ধারাবাহিকতা যেন হারিয়ে ফেলেছেন। 

গুজরাটের বিপক্ষে কোহলি গোটা ইনিংসে কেবল একটা ছক্কা হাঁকিয়েছেন। হতে পারে সেটা দলের প্রয়োজনেই, ব্যাঙ্গালুরুর দুর্বল মিডল অর্ডারের কারণে একপ্রান্ত আগলে ব্যাট করতে হয়েছে তাঁকে। মারমুখী ব্যাটিংয়ের চাইতে তিনি বরং নজর দিয়েছেন ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থাকার।

কিন্তু সমস্যাটা হলো আজকের দিনে ১২০ বলের খেলায় অ্যাংকরের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। এখন বড় ইনিংস নয়, বরং দলকে শিরোপা জেতায় ইমপ্যাক্টফুল সব ইনিংস। 

আজকের দিনের প্রজন্ম সেই অনুপাতে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে ভীষণভাবে। তাঁরা টি-টোয়েন্টিটা ভালো বোঝেন, বুঝে গেছেন সময়ের চাহিদা। কোহলি কিংবা রাহুলরাই বোধহয় অ্যাংকর রোলের দায়িত্ব পালন করা শেষ প্রজন্ম। 

শুভমান গিল কিংবা যশস্বী জয়সওয়াল বিগত বছর খানেক ধরেই নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছেন, নিজের টেকনিকে উন্নতির পাশাপাশি শটের সংখ্যা বাড়িয়েছেন। আজকের দিনের ব্যাটিং ড্রিল, ফিটনেস রুটিন, টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি ব্যাপার নিয়ে ভাবনাগুলো একযুগ আগেও ছিল অকল্পনীয়।

ভারতের বয়সভিত্তিক দলের কোচ থাকার সময় রাহুল দ্রাবিড় একবার বলেছিলেন জুনিয়র তারকাদের ছক্কা হাঁকানোর দক্ষতা দেখে তিনি অভিভূত। এই সময়ের হয়তো প্রজন্মের সেই পালাবদলের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট। 

পরিসংখ্যান হয়তো বলবে কোহলি টি-টোয়েন্টিতে এখনো দারুণ কার্যকরী একজন ব্যাটার। কিন্তু সত্যিটা হলো রোহিত, কোহলি, ধাওয়ানদের যুগ টি-টোয়েন্টিতে ফুরিয়েছে সেই ২০১৬ সালেই। তাঁর হয়তো মাঝে মধ্যে অতিমানবীয় ইনিংসে ম্যাচ জেতাবেন। কিন্তু বড় টুর্নামেন্টগুলো আক্ষেপের নাম হয়ে থাকবে ভারতের জন্য। গত দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দেখা গেছে তাঁর প্রতিফলন। 

আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে দল সাজানো তাই সময়ের দাবি। হার্দিক পান্ডিয়াকে কয়েকটি সিরিজে নেতৃত্ব দিয়ে হয়তো সেই পথে পা বাড়িয়েছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তাই ভারতীয় ক্রিকেট তাঁর তরুণ তারকাদের উপর ভরসা রাখতেই পারে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link