বড় মঞ্চের বড় তারকা

গতবারের আইপিএল মৌসুমটা বোধহয় স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলতে পারলেই বাঁচেন রবীন্দ্র জাদেজা। মৌসুমের মাঝপথে নেতৃত্ব হারিয়েছেন, পরে তো ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন গোটা মৌসুমের জন্য। তবে এবারের মৌসুমে ফিরেছেন পুরনো ছন্দে, ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করে দলকে তুলেছেন ফাইনালের মঞ্চে।  

অথচ গতবারের মৌসুমটা ছিল জাদেজার জন্য ক্যারিয়ারকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবার। প্রায় দেড় যুগে বাদে মহেন্দ্র সিং ধোনি চেন্নাই সুপার কিংসের নেতৃত্ব ছাড়ার পর নতুন অধিনায়ক হিসেবে তাকেই বেছে নিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু সেই চাপেই কিনা নিজের স্বাভাবিক খেলাই ভুলতে বসেছিলেন এই অলরাউন্ডার, কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে আইপিএল মৌসুম। 

অধিনায়কত্ব হারালেন, এরপর তো ইনজুরিতে মাঠের বাইরে ছিটকে গেলেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। প্রায় পাঁচ মাস খেলার বাইরে ছিলেন এই তারকা, সবাই ভেবেছিলেন ফেরার অপেক্ষাটা বুঝি আরো বাড়বে এই জাদেজার। 

দুঃসময় আরো বাজে আকার ধারণ করে যখন চেন্নাই টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে তাঁর ঝামেলার খবর বেরোয় সংবাদ মাধ্যমে। এক পর্যায়ে তো মনে হচ্ছিল চেন্নাইয়ের ঘরের ছেলে বনে যাওয়া জাদেজা এবারে দল ছাড়বেন। বেশ কয়েকটি দল অবশ্য মুখিয়ে ছিল এই তারকাকে দলে ভেড়াতে, কিন্তু ধোনির মধ্যস্থতায় শেষ পর্যন্ত রয়ে যান পুরনো ডেরাতেই। 

লাল বলের ক্রিকেটে জাতীয় দলে ফিরেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কি আর আইপিএলের দুঃখ মেটে, এবারের আইপিএল শুরুর আগে তাই বেশ চাপে ছিলেন জাদেজা। জানতেন ব্যাটে বলে পারফর্ম করেই জবাব দিতে হবে সকল সমালোচনার। 

কিন্তু এবারের আইপিএলে সেই সুযোগটাই পাচ্ছিলেন না জাদেজা। টপ অর্ডারের দুরন্ত ফর্মের কারণে মৌসুমের বেশিরভাগ ম্যাচেই ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি। বল হাতে অবশ্য ধারাবাহিক ছিলেন। নিয়মিত উইকেট না পেলেও মাঝের ওভারগুলোতে ছিলেন দারুণ কার্যকরী। একপ্রান্তে রান আটকে রেখে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন বারবার। 

সেই কারণেই কিনা পুরনো জাদেজাকে ফিরে পাবার একটা অতৃপ্তি রয়েই গিয়েছিল। তবে বড় তারকারা বোধহয় নিজেদের জানান দিতে বেছে নেন বড় মঞ্চকেই। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে তাই মিডল অর্ডারের হঠাৎ ধ্বসে চেন্নাই যখন দিশাহারা, ঠিক তখনি ব্যাট হাতে ঝলক দেখালেন এই অলরাউন্ডার। 

শেষদিকে নেমে কার্যকরী এক ইনিংসে দলকে পার করান বিপদসীমা, দলকে এনে দেন লড়াকু এক সংগ্রহ। দুই চারে তাঁর ১৬ বলে ২২ রানের ইনিংস পরিসংখ্যানের বিচারে হয়তো আহামরি নয়, কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় অনবদ্য। 

তবে জাদেজা এদিন আসল জাদু দেখিয়েছেন বল হাতে। তাঁর বাঁ-হাতি স্পিনে রান করতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছেন গুজরাটের ব্যাটাররা। তাঁর ইকোনমিক্যাল বোলিং বারবার চাপে ফেলেছে শুভমান গিল-বিজয় শঙ্করদের। শেষ পর্যন্ত চার ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে শিকার করেন দুই উইকেট। তাঁর অলরাউন্ড নৈপুণ্যেই এবারের আসরের প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে উঠেছে চেন্নাই সুপার কিংস।   

একমাত্র শিরোপা জয়ই পারে জাদেজার গত মৌসুমের দুঃস্বপ্ন ভুলিয়ে দিতে। জাদেজা তাই চাইবেন ফর্মটা ফাইনালেও ধরে রাখতে।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link