টি-টোয়েন্টির যুগেও দিপুর টেস্ট টেম্পারমেন্ট

২০২০ সালের অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী বেশ ক’জন ক্রিকেটার ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছেন জাতীয় দলে। আরো বেশ ক’জন আছেন জাতীয় দলের আশে পাশেই। কিন্তু এই বড় তালিকাটাতেও নেই শাহাদাত হোসেন দিপু।

যদিও সেই বয়সভিত্তিক দল থেকে টেম্পারমেন্টের জন্য বেশ সুনাম আছে দিপুর। সেই টেম্পারমেন্ট দিয়েই আবারো আলোচনায় এসেছেন দিপু। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের বিপক্ষে চারদিনের ম্যাচে দুটো ইনিংস দিয়েই নিজ সামর্থ্যের জানানটা দিয়ে দিয়েছেন তিনি।

প্রথম ইনিংসে ১২৪ বলে ৭৩ রানের ইনিংস কিংবা দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৮ বলে ৫০ রানের ইনিংস বোঝাতে পারবে না সিলেটে দিপুর বীরত্ব। ক্যারিবিয়ান পেসারদের গতি আর সুইংয়ে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বাকিরা যখন কুপোকাত তখন বুক চিতিয়ে লড়েছেন দিপু। টেস্ট ক্রিকেটে বল ছেড়ে দেয়া যে একটা শিল্প সেটিই যেন বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।

ব্যাটিং করার জন্য মোটেও সহজ ছিল না সিলেটের উইকেট। ক্যারিবিয়ান পেসারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের তরুণদের পরখ করে দেখতেই কিনা সিলেটের উইকেটে রাখা হয়েছিল প্রায় ছয় মিলিমিটার ঘাস। কন্ডিশনটাও ছিল পুরোপুরি পেসারদের জন্য উপযোগী। মেঘ ভরা আকাশ আর বাতাস মিলিয়ে ব্যাটারদের জন্য এক অগ্নি পরীক্ষাই ছিল বটে।

সেই পরীক্ষায় লেটার মার্কস পেয়েই উতরে গেছেন দিপু। প্রথম ইনিংসে ১২৪ বলে ১০ চার ও দুই ছক্কায় করেন ৭৩ রান। তবে দিপুর ৭৩ রান ছাপিয়ে সবার নজরে এসেছে দিপুর গোছানো ব্যাটিং। ১২৪ বলের ইনিংসে কখনোই মনে হয়নি যে ক্যারিবিয়ান পেসাররা তাকে ভরকে দিতে পেরেছেন। পেসারদের গতি আর সুইং সামলেছেন অসাধারণ দক্ষতায়।

লাল বলের ক্রিকেটে ব্যাটারদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যেটি সেই ‘কম্প্যাক্ট ডিফেন্স’ এর দারুণ প্রদর্শনী ছিল দিপুর ব্যাটিংয়ে৷ এছাড়াও বুক সমান উচ্চতায় ধেয়ে আসা ১৪০ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি গতি বাউন্সার গুলো দিপু যে দারুণ দক্ষতায় ছেড়ে দিয়েছেন, তাতে কে বলবে তাঁর বয়স সবে ২১ পেড়িয়েছে।

দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটটা কিছুটা সহজ হয় ব্যাটারদের জন্য। আর তাতেই নিজের মেজাজ বদলান দিপু। মাত্র ৬৬ বলে তুলে নেন ফিফটি।পেসার জন্য সহায়ক উইকেটে ব্যাটারদের ব্যাকফুটে হতে হয় সাবলীল। স্কয়ার কাট কিংবা পুল শটে হতে হয় দক্ষ। শাহাদাত হোসেন দিপু জানান দিলেন এমন উইকেটে খেলার জন্য যথেষ্ট ভালো স্কিল সেট আছে তাঁর।

মাত্র দুই বছর আগে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় দিপু। এখন পর্যন্ত ১৮ ম্যাচের ৩৩ ইনিংসে করেছেন ১১১৯ রান। প্রায় ৩৫ ছুঁই ছুঁই গড়টা ২১ বছর বয়সের একজন ব্যাটারের জন্য দারুণই বলতে হবে। এরই মধ্যে করেছেন দুটি সেঞ্চুরি ও আটটি হাফ সেঞ্চুরি।

১৫৯ রানের একটি ইনিংস খেলে জানান দিয়েছেন বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্যের কথাটা। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও দিপুর পথচলার শুরুটা ভালো হয়েছে। দুই বছরের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। গড়টাও ৩৭ এর বেশি।

সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের পরে বাংলাদেশের জন্য জাত মিডল অর্ডার ব্যাটার হবার সব সামর্থ্যই আছে দিপুর মধ্যে। লাল বলের ক্রিকেটে দিপু দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত বলেও মনে করেন অনেকেই। এরই মধ্যে নির্বাচকদের মনও কেড়ে নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসের পর দিপুর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক রাজ। এবার দিপুর ব্যাটিংয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনও।

সুমন বলেন, ‘তাকে অনেক অরগানাইজড মনে হয়েছে। লঙ্গার ভার্শনে যে রকম ব্যাটিং করতে হয় দিপুকে দেখে ওরকমই মনে হয়েছে। খুবই অরগানাইজড। টেকনিকও বেশ ভাল। ওর ব্যাটিং বেশ মুগ্ধকর।’

নিশ্চিতভাবেই একজন ব্যাটারের একটা বা দুইটা ইনিংস দেখে তাকে ভবিষ্যতের তারকা বলে দেবার সুযোগ নেই। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই যুগেও দিপু যেভাবে তাঁর ব্যাটিংয়ে ‘টেম্পারমেন্ট’ ও ‘কম্প্যাক্টনেস’ এর দারুণ প্রদর্শনী দেখালেন তাতে বাহবা না জানিয়ে উপায় নেই। নিঃসন্দেহে দিপুর উন্নতি করার জায়গা আছে প্রচুর। কিন্তু এই টেম্পারমেন্টটা দিপু ধরে রাখতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য দিপু যে সম্পদ হবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link