এমএস ধোনি, এবার ডাগআউটে?

ইস্পাতদৃঢ় স্নায়ুবিক লড়াইয়ের পর অবশেষে আইপিএল ২০২৩ এর চ্যাম্পিয়ন ধোনির চেন্নাই। ধোনির চেন্নাই? একদম ঠিক তাই! ধোনিরই চেন্নাই। এই দলের হয়েই যে ১৪ টা মৌসুম পার করেছেন ধোনি। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই শুরুর লগ্ন থেকেই।

দীর্ঘ এ পথযাত্রায় তার নেতৃত্বেই ১০ বার ফাইনালে উঠেছে চেন্নাই। গুজরাটকে হারিয়ে পেন্টাজয়ের মাধ্যমে মুম্বাইকে শিরোপাসংখ্যায় ছুঁয়ে ফেলার যাত্রায় দলের প্রধান সেনাপতিও তিনিই ছিলেন।

ধোনির বয়স এখন ৪১ পেরিয়ে ৪২ এর দিকে ছুটছে। ব্যাট, প্যাড জোড়া তবে কি এখনই তুলে রাখার মোক্ষম সময়? এবারের আইপিএলেই এমন প্রশ্নের মুখোমুখি বেশ ক’বার হয়েছেন ধোনি।

ধোনি অবশ্য প্রত্যেকবারই কৌশলে সে সব প্রশ্নে পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন। তবে এবারের ফাইনাল জয়ের পর ঠিকই একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ধোনির সেই মিনিট পাঁচেকের প্রতিক্রিয়ায় ছিল আবেগমিশ্রিত বাক্য, সমর্থকদের প্রতি পরম কৃতজ্ঞতাবোধ।

হার্শা ভোগলের করা ‘ক্যারিয়ারের শেষ’-এর প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবসর নেওয়ার জন্য এটাই তো সেরা সময়। এখন সবচেয়ে সহজ হচ্ছে সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে অবসর নেওয়া। কিন্তু কঠিন কাজটা হচ্ছে, আগামী  ৮/৯ মাস কঠোর পরিশ্রম করে আরেকটা মৌসুম খেলার চেষ্টা করা। যে ভালোবাসা আমি চেন্নাইয়ের সমর্থকদের কাছ থেকে পেয়েছি, আরও এক মৌসুম খেললে তাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা উপহার দেওয়া হবে।’

অর্থাৎ ধোনি আগামী মৌসুমে থাকছেন কি থাকছেন না, তা নির্ভর করছে পরের ছয় সাত মাসে তাঁর শারীরিক অবস্থার উপরে। যদিও ধোনির সাবেক সতীর্থ, চেন্নাই সুপার কিংসের সাবেক একজন ক্রিকেটার মনে করছেন, এটাই শেষ ধোনির।

ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমার মনে হয় ধোনি হয়তো আগামী আইপিএলে খেললেও ব্যাটার হিসেবে খেলবেন না। খেললেও কয়েকটা ম্যাচে। খুব সম্ভবত সে বাইরে থেকেই দলকে সহযোগিতা করবে। তবে ধোনি নিজে যদি স্বস্তিবোধ করেন, খেলতেও পারেন।’

‘চেন্নাইয়ের কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং অবশ্য দারুণ কাজ করেছেন। তিনি ধোনি বিদায়ের আগেই তাঁর জায়গায় একজন উইকেটরক্ষককে প্রস্তুত করেছেন। ডেভন কনওয়ের কথা বলছি আমি। সেই-ই হয়তো ধোনির পরে উইকেটরক্ষক ভূমিকায় চেন্নাইয়ে খেলবে।’, যোগ করেন তিনি।

অবশ্য ফাইনাল ম্যাচে ধোনির প্রশংসা করে এ ক্রিকেটার বলেন, ‘অনেকেই মনে করছে, ধোনি জাদেজার আগে নেমেছিলেন লেফট হ্যান্ড, রাইট হ্যান্ড কম্বিনেশনের জন্য। কিন্তু মূল ব্যাপারটা সেটা নয়। তিনি মূলত ১৫ বল বাকি থাকতে গিয়েছিলেন যাতে, বাইরে জাদেজার মতো ক্রিকেটার শেষ পর্যন্ত রিজার্ভড থাকে। ধোনির আগে জাদেজা আউট হলে দেখা যেত, ধোনির সামনে প্রায় অসাধ্য এক সমীকরণ চলে আসতো। যেটা ধোনির পক্ষে অসম্ভব না হলেও তাঁর বয়সটাও তো বুঝতে হবে। তিনি সেটিতে ক্লিক করতে ব্যর্থও হতে পারতেন।’

ধোনি ব্যাট হাতে শূন্য রানে ফিরেছিলেন। তবে কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং এ ম্যাচ জয়ে ধোনির অবদানও দেখছেন প্রবল ভাবে। কারণ গুজরাটের ইনিংসের সময় শুভমান গিলকে দারুণ এক স্ট্যাম্পিং করেছিলেন তিনি। সে সময় শুভমান গিল ৩৯ রানে ব্যাট করছিলেন। আর গিল পঞ্চাশ পেরোলেই প্রতিপক্ষের উপর কেমন চড়াও হন এবারের আইপিএলে সে ব্যাপারে অনেকেই অভ্যস্ত। কিন্তু গিলের সেই দৌড় তখন থেমেছিল ধোনির ঐ স্ট্যাম্পিংয়েই।

আর ম্যাচের সেই মুহূর্ত টেনে এনেই ফ্লেমিং বলেন, ‘ওটা দুর্দান্ত ছিল। এত কম সময়ে বিচক্ষণতার সাথে স্ট্যাম্পিং ধোনিই করতে পারেন।’

তবে ফ্লেমিংয়ের মুগ্ধতা, বিস্ময় অন্য জায়গায়। এবারের আইপিএলে ধোনি নাকি আলাদাভাবে কিপিং প্র্যাকটিসই করেননি!

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সে এবারে আইপিএলের সময়কালে একবারের জন্য উইকেট কিপিং প্র্যাকটিস করেনি। আসলে উইকেটকিপিংটা ওর জন্য প্রকৃতি প্রদত্ত।’

এবারের আইপিএলে বিজয়ীর বেশেই মাঠ ছেড়েছেন ধোনি। হয়তো এমন বিদায়ই যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য স্বপ্নের মতো বিদায়। তবে ধোনি এখনই ঘটা করে শেষ বলছেন না। অনেক যদি কিন্তুর উপর আটকে আছে ধোনির ক্যারিয়ার।

তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘটা করে বিদায় না নেওয়া ধোনির আদৌ কি জমকালো আয়োজনে বিদায় বলার ইচ্ছা আছে? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। আর এ প্রশ্নের জট খুলতে আরো মাস সাতেকের অপেক্ষা। কে জানে, হঠাতই টুইট করে ক্যারিয়ারে ফুলস্টপ বসিয়ে দিতে পারেন মাহি।

আবার, ‘মাহি’ চিৎকারে পরের আইপিএলও মুখরিত হতে পারে ধোনির পদচারণায়। সম্ভাব্যতা আছে দুটিতেই। তবে প্রথমটি হলে, আহমেদাবাদে ট্রফি হাতে ধোনির ছবিটাই হয়ে থাকবে ক্রিকেটার ধোনির শেষ মুহূর্ত।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link