‘প্রথমত ও দূর্দান্ত ছেলে’ – তাওহীদ হৃদয়কে বর্ণনায় এই কথাটাই বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ, নিক পোথাস। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব পেয়েছেন খুব বেশিদিন হয়নি। তবে ইতোমধ্যেই বেশ বিমোহিত তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে।
তাওহীদ হৃদয়ও তো খুব বেশি সময় কাটিয়েছেন জাতীয় দলে তা কিন্তু নয়। এইতো সেদিন জাতীয় দলের দরজা খুলে গেল তার। একটা সময় ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হৃদয়, পৌঁছে গেছেন স্বপ্নের স্থানে। গায়ে জড়িয়েছেন লাল-সবুজের জার্সি। সবকিছু ঠিক থাকলে বিশ্বকাপ দলেও তার জায়গা পাকাপোক্ত।
জাতীয় দলে এসেই এমন আলো ছড়ানো খেলোয়াড়ের তালিকাটা খুব ছোট নয়। তাইতো হৃদয়কে নিয়েও কৌতুহল জাগে মনে, মাথায় ঘুরপাক খায় নানান প্রশ্ন। নতুন এক দৃষ্টিকোণ থেকে হৃদয়ের বিষয়ে জানতেই নিক পোথাসের কাছে জানতে চাওয়া। আর পোথাস তো সম্ভাবনার পালে দিয়েছেন প্রবল হাওয়া।
হৃদয়কে নিয়ে পোথাস বলেন, ‘কাজের নীতি অবিশ্বাস্য ও সফল হওয়ার তাড়না রয়েছে তার। সেই সাথে প্রচণ্ড দক্ষ। আমি বিশ্বাস করি তার যতটুকু দক্ষতা রয়েছে তাতে সে বেশ উপরে যেতে পারবে।’
নিক পোথাস তার খেলোয়াড়ী জীবনে ছিলেন একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তাইতো বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্যাটারদের উন্নতিতে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন দায়িত্বকাল শুরু হওয়ার একেবারে প্রথম থেকে। এই স্বল্প সময়েই হৃদয়ের প্রতিভা মেপে ফেলেছেন পোথাস। তার মতে, হৃদয় বেশ সুদক্ষ।
হৃদয় একজন দক্ষ ব্যাটার সেটা হয়ত সবাই জানে। এখন যখন কোচরাও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন নিশ্চয়ই দ্বিধা থাকে না। তবে হৃদয়ের মনে ক্ষুধা থেকেই যায়। নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষুধা। নিজের সকল দূর্বলতাগুলো ঘামের প্রতিটা কণায় দূর করে দেওয়ার তাড়না।
হৃদয়ের ব্যাটিং স্কিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বর্তমান যুগের সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলের মেরিট বুঝে যেমন শট খেলতে পারেন, ঠিক তেমনি সময়ের চাহিদা মিটিয়েও ব্যাট করতে জানেন। ক্রিকেটীয় ব্যাকরণের দারুণ সব শটও তার আয়ত্ব করা। তবে সবাই তো আর শতভাগ নির্ভুল হয় না। হৃদয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সত্য।
তার দূর্বলতা পুল শট। অদ্ভুত ধরণের এক পুল শট খেলে তিনি অভ্যস্ত। তাতে অবশ্য ক্যাচ আউট হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে ব্যাটে-বলে সংযোগ ঠিকঠাক না হলে। আবার ব্যাটের খোচা লেগে বাইশ গজের আশেপাশেও ক্যাচ উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
নিজের সেই দূর্বলতা যেন শুধরে নিতে উঠে-পড়ে লেগেছেন হৃদয়। সিলেট ক্যাম্পে গ্রানাইটের স্ল্যাপে তিনি অনুশীলন চালিয়েছেন। আবার মিরপুর ইনডোর লাগোয়া মাঠেও তাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় পুল শটের দূর্বলতা দূরীকরণে অনুশীলন চালিয়ে যেতে।
তিনি যেন বদ্ধপরিকর। নিজের ভেতর থাকা দূর্বলতা আগে ছেঁটে ফেলতে চাইছেন। এরপর ব্যাকরণে যতটুকু ভুলত্রুটি বা দৃষ্টিকটু বিষয় রয়েছে, তা ঠিক করার পথে হাঁটবেন হৃদয়। অন্তত তার গতিবিধি তাই বলে। সেক্ষেত্রে দলের সাথে থাকা প্রতিটি মানুষের সহয়তা প্রয়োজন হবে তার।
নিক পোথাস অবশ্য সেই সহয়তার দরজা খোলা হৃদয়ের জন্য, সে কথাও জানিয়েছেন, তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার দায়িত্ব থাকবে তার সর্বোচ্চটুকু উজাড় করে দিতে তাকে সহয়তা করা।’ সবার সহযোগিতায় আর নিজের অদম্য ইচ্ছেতেই একদিন হৃদয় হয়ে উঠবেন অপ্রতিরোধ্য। তেমন আশা যেন বুক বেঁধেছে এ বাংলার সব ক্রিকেট ভক্ত।