টিকে থাকার নাছোড়বান্দা লড়াই

টিমে আসা, বাদ যাওয়া, আবার টিমে আসা, আবার বাদ যাওয়া, যেন যে কোন সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পটাই তার ক্রিকেট কেরিয়ার জুড়ে। আসলে ১৮ বছর ধরে ওই টিঁকে থাকার নাছোড়বান্দা লড়াইটাই তিনি। এই লড়াইয়ের মানেটাই তো জীবন, এই লড়াইয়ের নামই তো দীনেশ কার্তিক।

ভারতের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ সেরা তিনি, বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, জোহানেসবার্গে। তারিখটা ছিল ১ ডিসেম্বর, ২০০৬। তিনি কৃষ্ণশঙ্কর দীনেশ কার্তিক।

তাঁর জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল ওডিআই, লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তারিখটা ছিল ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৪। সেই ম্যাচে মাইকেল ভনকে তার স্ট্যাম্প করার ছবিটি এখন ইতিহাসে ঢুকে গেছে।

কিন্তু এর বাইরে না বলা থেকে যায় অনেক কিছুই। দীনেশের মাঠের লড়াই, মোটামুটি সাফল্য আর অতলস্পর্শী ব্যর্থতা। এবং জীবনের লড়াই, ভেঙ্গে যাওয়া আর উঠে দাঁড়ানো। পরেরটা সবটাই সবার জানা।তাই প্রথমটাতে অল্প ঢুকছি আজ।

মাঠের লড়াই, মোটামুটি সাফল্য আর অতলস্পর্শী ব্যর্থতা।এর সবটাই তার ক্রিকেট স্ট্যাটসে ধরা আছে। ধারাবাহিক না থাকার ধারাবাহিকতায় তিনি ঢেকে গেছেন বারবার। ২৬টি টেস্ট খেলে ৪২ ইনিংসে ২৫.০০ গড়ে ১টি শতরান আর ৭টি অর্ধ-শতরানের জোরে ১০২৫ রান (সর্বোচ্চ ১২৯ বনাম বাংলাদেশ, ২০০৭, ঢাকাতে, ৪র্থ ছবি) আর ৫৭টি ক্যাচ ও ৬টি স্ট্যাম্পিং আছে দীনেশ কার্তিকের।

আর ৯৪টি ওডিআইতে ৭৯ ইনিংসে ৩০.২১ গড়ে (স্ট্রাইক রেট ৭৩.২৪) ৯টি অর্ধশতরানসহ ১৭৫২ রান ( সর্বোচ্চ ৭৯ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১০) করা ছাড়াও ৬৪টি ক্যাচ ও ৭টি স্ট্যাম্পিং আছে তার কিটিতে। প্রায় একই রকম তার টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পারফরমেন্সও।

৬০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৪৮ ইনিংসে ২৬.৩৮ গড়ে (স্ট্রাইক রেট ১৪২.৬১) ১টি অর্ধ-শতরানসহ ৬৮৬ রান ( সর্বোচ্চ রাজকোটে ২৭ বলে ৫৫ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০২২, রেকর্ড ৩৭ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে করা অর্ধশতরান, ৫ম ছবি) করা ছাড়াও ৩০টি ক্যাচ নিয়েছেন ও ৮টি স্ট্যাম্পিং করেছেন তিনি।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার পারফরমেন্স ছিল বুক বাজিয়ে বলার মত। ১৬৭টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচের ২৫৪টি ইনিংস সে কথাই বলে, যা খচিত ছিল ২৮টি শতরান আর ৪৩টি অর্ধ-শতরানের মালায় গাঁথা ৯৬২০ রানে।

এবার মনে রাখুন যে এমন একটা সময়ে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট সার্কিটে উইকেটরক্ষক ছিলেন যার অধিকাংশ সময়েই তিনি ঢাকা ছিলেন এম এস ধোনির লম্বা ছায়ায়। এটা মনে রাখলে দেখবেন দীনেশ কার্তিকের এই স্ট্যাটসটাই অনেক বড় লাগছে।

দু’টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে ছিলেন, ২০০৭ আর ২০১৯, টিমে ফিরেছিলেন ১২ বছর পরে।২০১৯ এ সেমিফাইনালে কিউয়িদের কাছে পরাজিত প্রথম একাদশেও ছিলেন। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ১৫ জনের টিমেও সদস্য ছিলেন তিনি।

১৪ বছর, ১৫ বছর আর ১৬ বছর হলো তার টেস্ট (২০১৮তে শেষ খেলেছেন), ওডিআই (২০১৯ সালে শেষ খেলেছেন) আর টি২০ (২০২২য়ে শেষ খেলেছেন) খেলার স্প্যান। ৮৭ ম্যাচের পরে তিনি টেস্ট টিমে ফিরেছেন।টি২০তে এক ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৩৬২.৫০ (১৮ মার্চ ২০১৮ শ্রীলঙ্কাতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৮ বলে ২৯, ২টি ৪ আর ৩টি ৬ সহ)।

আবার ৮ ডিসেম্বর ২০০৭-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু টেস্টে ১টি টেস্ট ইনিংসে ৩৫টি বাই রান দেবার দুঃসহ রেকর্ডও গড়া হয়েছিল তাঁর হাতেই। আইপিএলের প্রতিটি এডিশনে খেলা তার রেকর্ডবুকও ঈর্ষণীয় – ২৪২ ম্যাচে ২২১ ইনিংসে ৪৫১৬ রান, ২০টি অর্ধ- শতরান, ১৩২.৭১ স্ট্রাইকরেট, ১৪১টি ক্যাচ, ৩৬টি স্ট্যাম্পিং।

টিমে আসা, বাদ যাওয়া, আবার টিমে আসা, আবার বাদ যাওয়া, যেন যে কোন সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পটাই তার ক্রিকেট কেরিয়ার জুড়ে। আসলে ১৮ বছর ধরে ওই টিকে থাকার নাছোড়বান্দা লড়াইটাই তিনি। এই লড়াইয়ের মানেটাই তো জীবন, এই লড়াইয়ের নামই তো দীনেশ কার্তিক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...