‘অবাক হওয়ার মত কিছু লাগে নাই’ – স্মিত এক হাসি দিয়ে এভাবেই নিজের প্রথম জাতীয় দলে যুক্ত হওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করেন শাহাদাত হোসেন দিপু। অবাক তিনি হননি বটে। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই ছিলেন বড্ড বেশি মনোযগী। তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে পুরো দলের অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করেছেন। পরিস্থিতি নিজের মাথায় এঁটে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
আবার বড় ভাই মেহেদী হাসান মিরাজের কথা শুনেছেন কান খাড়া করে। যেন অভিজ্ঞার খানিকটা আরোহণ করবার আপ্রাণ চেষ্টা। শেখার তীব্র এক আগ্রহ জাতীয় দলের প্রথম দিন থেকেই। মাত্র ২১ বছর বয়স, এরই মধ্যে ক্রিকেটের বনেদী ফরম্যাটে খেলার হাতছানি। একাদশে সুযোগ পাওয়া হয়ত বেশ দূরের বিষয়। কিন্তু শিখতে তো মানা নেই।
শেখার এই চাহিদাই তো দিপুকে আজ হাজির করেছেন আলো ঝলমলে এক নতুন পৃথিবীতে। তবে প্রস্তুতিটা সেরে এসেছেন দিপু। স্বল্প সময়ের মাঝেই নিজেকে প্রমাণ করে তবেই তিনি জাতীয় দলের খুব সন্নিকটে। অন্তত তার করা সলিড ডিফেন্সিভ শটগুলো সেটাই প্রমাণ করে। সেটাই যেন তার দৃঢ় মানসিকতার পরিচয়।
তাছাড়া ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে হালকা ফ্লিকে গ্যাপে বল ঠেলে দেওয়ার অনুশীলন তার আত্মবিশ্বাসের সাফাই গাইবে নিশ্চয়ই। বয়সটা বেশ কম। তবে এই অল্প বয়সেই টেস্ট টেম্পারমেন্টের প্রদর্শন ঘটিয়ে আজ তিনি জাতীয় দলের স্কোয়াডে। এই তো কিছুদিন আগেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দলের বিপক্ষে শক্ত হাতেই প্রতিপক্ষ পেসারদের দমন করেছেন।
গতির আগ্রাসনের বিপক্ষে মানসিক দৃঢ়তায় লড়াই করেছেন চোখে চোখ রেখে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দলের পেসাররা রীতিমত নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ এ দলের ব্যাটারদের। তেমন এক পরিস্থিতি থেকেও এক ম্যাচে দুইটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছেন দিপু।
এমনকি পেশাদারিত্বের ছাপও রয়েছে দিপুর মাঝে। তপ্ত গরমে ব্যাটিং অনুশীলনের মাঝে দৌড়ে গিয়ে তৃষ্ণা মিটিয়েছেন মেহেদি মিরাজ। এতটাই কাবু করে দিচ্ছে এবারের উত্তপ্ত গ্রীষ্ম। এমন পরিস্থিতিতে অনুশীলন করা নি:সন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। তবে দিপু মনে করেন এটাই তাদের কাজ।
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের কাজ, আমাদের কাজ তো করতেই হবে। যেমনই পরিস্থিতি থাকুক, রোদ পড়ুক কিংবা বৃষ্টি পড়ুক। আমাদের কাজ আমাদেরকেই সম্পন্ন করতে হবে। এখানে খেলতে হলে নিজেকে মানসিকভাবে দৃঢ় হতেই হবে। চ্যালেঞ্জিং বলতে ওরকম কিছু নাই।’
সদ্য যুক্ত হওয়া একজন সদস্যের এমন দৃঢ় মন্তব্য নিশ্চয়ই ভরসা দেয়। বেশ পরিপক্ক হয়েই জাতীয় দলের স্কোয়াডে এসেছেন দিপু তেমনটাই তো ইঙ্গিত মিলছে। সক্ষমতার পাশাপাশি মানসিক দৃঢ়তা নজর কাড়ার মতই। অথচ একটা সময় দিপু হয়ত চিন্তাও করেননি তিনি স্বপ্নের এতটা কাছে চলে আসবেন।
তার বয়স যখন প্রায় দশ, ঠিক তখনই তিনি হারিয়েছিলেন নিজের বাবাকে। সেখান থেকে বেশ কঠিন একটা পথই পাড়ি দিতে হয়েছে দিপুকে। মানসিক দৃঢ়তা সম্ভবত পারিবারিক সেই বন্ধুর পথে হেটেই অর্জন করেছেন দিপু। তাছাড়া তার বড় ভাইয়ের কল্যাণে তিনি এসেছে এতটা পথ।
আর এখান থেকে নিজের শেখার স্পৃহা করবে তাঁকে বিশ্বসেরা। তেমনটাই তো হবার কথা। জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার পর নিজের মা-কে প্রথম জানিয়েছিলেন সে কথা। প্রতিজ্ঞাও নিশ্চয়ই করেছেন গর্বে জননীর শির উঁচু করবার। কালের স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার মিছিল থেকে অন্তত নিজেকে দূরে রাখবেন দিপু।