স্লটের বল, গায়ের পূর্ণ শক্তি দিয়েই ব্যাট চালালেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি। ডিপ মিডউইকেট অঞ্চল দিয়ে হাওয়ায় ভেসে বল চলে গেল সীমানার বাইরে। বিশ্বের যেকোন মাঠে সেটা ছয় হবে। তেমনটা বলাই যায়। ঠিক এই কারণেই তো প্রসিদ্ধ শামীম।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলে বিশ্বকাপ জয়। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের পেশি শক্তির প্রদর্শন। তাতেই তো খানিকটা তড়িঘড়ি করে জাতীয় দলে এসেছিলেন শামিম। কিন্তু প্রত্যাশার চাপে নুইয়ে যেতে বসেছিলেন। চলে গেলেন পর্দার আড়ালে। সেই আড়াল চিড়ে আরও একবার নিজেকে মেলে ধরবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি।
একজন পাওয়ার হিটারের অভাব বহুদিন ধরেই বোধ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট। সেই অভাব পূরণের সম্ভাবনা হয়ে এখনও বেশ প্রবল দাবি রেখে যাচ্ছেন শামিম পাটোয়ারি। তার হাতে জোর আছে বেশ। হাসান মাহমুদের করা বাউন্সারে, আনঅর্থোডক্স শট খেলে তিনি বাউন্ডারি ছাড়া করতে পারেন। আত্মবিশ্বাস আছে তার বেশ। সাথে পেশীর জোর।
এখন কেবল মনসংযোগ আর ব্যাটে বলের যুগলবন্দীই শামিমের মূল অন্তরায়। কেননা তিনি যেমন মিড উইকেট, স্কয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে জানেন। ঠিক তেমনি শট খেলতে গিয়ে মিড অন অঞ্চলে ক্যাচ আউট হওয়ার প্রবণতাও রয়েছে ভীষণ।
তেমনটাই আসলে হয়। ব্যাটে-বলে সংযোগ ঠিকঠাক না হলে ক্যাচ ওঠে ত্রিশ গজ সার্কেলের ভেতরেই। শামীম হয়ত নিজের এই সমস্যার সমাধান করতেই বড্ড বেশি মরিয়া। তিনি নিজেকে একেবারে ষোল আনা হার্ডহিটার ব্যাটার হিসেবে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে চান বিশ্ব ক্রিকেটে। মাঝের সময়টা আলো থেকে দূরে থাকলেও এবার সব আলো নিজের করে পেতে চাইছেন শামীম।
অন্তত এটা বুঝতে আর বাকি থাকে না, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বেশ ভালভাবেই রয়েছেন শামিম হোসেন পাটোয়ারি। তাই তো বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ ও আসন্ন সিরিজগুলোকে সামনে রেখে করা খেলোয়াড়দের পুলে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন শামীম।
টাইগারদের টিম ম্যানেজমেন্ট হয়ত, শামিমকেই আরও একবার সমাধান হিসেবেই দেখতে চাইছে। অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শেষের দিকে দ্রুত রান তুলতে শামীম বরাবরই পছন্দ সই। যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব বেশি সুযোগ তার মেলেনি। দ্রুত সমাধান খুঁজতে গিয়ে আরেকটু পরিপক্কতার অভাবে শামীমকে ক্যারিয়ারের শুরুতেই খেতে হয়েছে ধাক্কা।
সম্ভাবনার গল্পে যুক্ত হয়েছে নিন্দা আর সমালোচনা। তবে শামিম এখন আরও খানিকটা পরিণত। এখন চাইলেই তাকে দলের যেকোন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। অবশ্য তাকে সম্ভবত বলে দেওয়া হয়েছে দলের চাহিদা। তিনি সে মোতাবেক নিজেকে প্রস্তুত করছেন তপ্ত রোদে।
ফাইন লেগ অঞ্চল দিয়ে শট খেলতে চাওয়ার তার প্রবণতা বেড়েছে বহুগুণে। ক্রিকেটীয় ব্যাকরণের বাইরেও কার্যকর সব শট খেলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শামিম পাটোয়ারি। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার প্রয়াসটাই করে যাচ্ছেন তিনি।
তাছাড়া আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলেও যদি জায়গা পেয়ে যান শামিম, তাতেও বোধ হয় অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কেননা সাত নম্বর পজিশন নিয়ে বাংলাদেশ বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সেই চিন্তার সমাধানও হতে পারেন শামীম। তবে সাতে নয়, আটে।
সাতে মেহেদী হাসান মিরাজ ইনিংস মেরামত বা দ্রুত রান তোলার কাজটা শুরু করতে পারবে নির্ভার হয়ে। এরপর আট নম্বরে নেমে রানের গতি আরও বাড়িয়ে দেওয়ার সক্ষমতা তো রয়েছে শামিমের। এখন দেখবার পালা টিম ম্যানেজমেন্টের তেমন পরিকল্পনায় শামিম সেই জায়গা করে নিতে পারে কিনা।