ভারতের ব্যর্থ একাদশের হতশ্রী রিপোর্ট কার্ড!

শেষ এক দশকে বৈশ্বিক আসরে ৪ বার রানার্সআপ হয়েছে ভারত। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ২৩ জুনে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। এরপর বিভিন্ন ফরম্যাটে আইসিসির নয়টি টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে ভারত। কিন্তু শিরোপা জয়ের জয়োৎসবের উপলক্ষ্য আর তৈরি হয়নি।

সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০৯ রানে হেরে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা খুইয়েছে ভারত। ওভাল টেস্টে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— কোনো ইউনিটে অজিদের কাছে রীতিমত পাত্তাই পায়নি ভারত। ভারতীয় টপ অর্ডারদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত রান আসেনি। পেসারদের কাছ থেকেও আসেনি ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মত স্পেল। সব মিলিয়ে দলগত ব্যর্থতাতেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশপের তীরে এসে তরী ডুবেছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের রণতরীর।

ব্যর্থতার সালতামামিতে অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে দিয়েই শুরু করা যাক। টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে দলের সেরা স্পিনার অশ্বিনকে বাদ দেওয়া, বাজে অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি। প্রথম ইনিংসের ফিরেছিলেন ১৫ রানে। পরের ইনিংসে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৪৩ রানে আউট হন তিনি।

বছর জুড়ে ব্যাট হাতে দারুণ ফর্মে থাকলেও শুভমান গিল ওভাল টেস্টে জ্বলে উঠতে পারেননি। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ রানে তাঁর আউট হওয়া নিয়ে বিতর্ক ছিল। কিন্তু ইনিংসের শুরুতে কিছুটা নড়বড়েই ছিলেন এ ব্যাটার। যেমনটা ছিলেন প্রথম ইনিংসেও। দুই ইনিংসেই তাঁকে ভুগিয়েছেন স্কট বোলান্ড। প্রথম ইনিংসে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ১৮ রান। অর্থাৎ দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৩১ রান করেছেন গিল।

কাউন্টি ক্রিকেটের মাধ্যমে ওভাল টেস্টের জন্য ভালই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন চেতেশ্বর পুজারা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তার ছিটেফোঁটা মিলেছে কমই। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ৪১ রান করেছেন এ ব্যাটার। এমনিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০২ ও ১০২ রানের দুটি ইনিংস বাদ দিলে ২০২১-২৩ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে পুজারার ব্যাট হেসেছে কম বারই।

প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন বিরাট কোহলিও। প্রথম ইনিংসে ১৪ রান করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভালই করেছিলেন। তাঁর ব্যাটে চেপে জয়ের দিকেই চোখ ছিল ভারতের। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ৪৯ রানে ফিরে যান এ ব্যাটার।

লোকেশ রাহুলের চোটে ভাগ্য ফিরেছিল আজিঙ্কা রাহানের। আর সেই সুযোগটাই লুফে নেন এ ব্যাটার। ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে ফাইনালে এই এক ব্যাটারের কাছ থেকেই উভয় ইনিংসে রান এসেছে। আঙুলের চোট নিয়েও লড়াই করেছিলেন প্রথম ইনিংসে। হেঁটেছিলেন সেঞ্চুরির পথেও। কিন্তু ব্যক্তিগত ৮৯ রানে আটকে যান এ ব্যাটার। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও দারুণ ছন্দে ছিলেন। কিন্তু  আগের ইনিংসে সেঞ্চুরি মিস করা রাহানে এবার ধরা দেন ফিফটি পূরণের আগে, ৪৬ রানে।

একমাত্র স্পিনার হিসেবে ওভাল টেস্টে খেলানো হয়েছিল রবীন্দ্র জাদেজা। জাদেজাও খুব একটা খারাপ করেননি। প্রথম ইনিংসে সাবলীল সব শটের মাধ্যমে ৪৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে যদিও শূন্য রানে ফিরেছিলেন। তবে বল হাতে নিয়েছিলেন ৩ টি উইকেট।

ঋষাভ পান্তের অনুপস্থিতি কিঞ্চিৎ পরিমাণেও মেটাতে পারেননি উইকেটরক্ষক শ্রীকর ভরত। প্রথম ইনিংসের ৫ রান করা এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানের বেশি করতে পারেননি।

ফলোয়ন ঠেকাতে ৫১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন শার্দূল ঠাকুর। একই সাথে, ঐ ইনিংসে বল হাতে দুই উইকেট নিয়েছিলেন এ অলরাউন্ডার। তবে দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট আর বল, দুই ক্ষেত্রেই শূন্যে আটকে ছিলেন শার্দূল। বল হাতে উইকেটশূন্য থাকার পর ব্যাট হাতেও শূন্য রানে ফিরেছিলেন এ অলরাউন্ডার।

পেসারদের মধ্যে এক মোহাম্মদ সিরাজ ছাড়া কেউই তেমন উইকেটের ফায়দা তুলতে পারেননি। সবচাইতে বেশি নিষ্প্রভ ছিলেন উমেশ যাদব। আর সদ্য শেষ হওয়া আইপিলে পার্পল ক্যাপ বিজয়ী মোহাম্মদ শামিও ঠিক আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু অজি ব্যাটারদের রানগতিকে আটকাতে পারেননি। দুই ইনিংসের প্রায় ৪ ইকোনমিতে বল করেছেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link