৪, ৬, ৪, ৬, ৬, ৪ – এক ওভারে ৩০ রান। না, টি-টোয়েন্টি যুগে এই পরিসংখ্যান হয়তো আপনার চোখ কপালে তুলবে না। কিন্তু, সেটা যদি হয় ম্যাচ নির্ধারণীর সুপার ওভারে, তাহলে?
আর যদি বলি, এই ঘটনাট ঘটিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের লোগান ভ্যান বিক নামের একজন ‘প্রায়’ অপরিচিত ক্রিকেটার, সেটাও আবার এক সময়কার পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে – তাহলে নিশ্চয়ই আপনি অবাক হতে বাধ্য।
আক্ষরিক অর্থেই ডাচ বীরত্বে অভাবনীয় এক ম্যাচের দেখা মিলেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে। ক্যারিবিয়ানদের ছয় উইকেটে করা ৩৭৪ রানের জবাবে নেদারল্যান্ডস নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও রানের চাকা সচল রেখে নয় উইকেটে করতে পারে ৩৭৪ রান।
ফল নির্ধারণ হয় সুপার ওভারে। সেখানে ডাচদের ৩০ রানের জবাবে উইন্ডিজ করে দুই উইকেটে মোটে আট রান। প্রথমবারের মত কোনো বিশ্বকাপ না খেলার দুয়ারে দাঁড়ানো হতশ্রী ক্যারিবিয়ানদের চেয়ে এই মুহূর্তে বেশি আলোচনা হচ্ছে কমলা বিপ্লব নিয়েই।
টাকাশিঙ্গা স্পোর্টস ক্লাবে এদিন রেকর্ডবুকে হয়ে গেল একাধিক কাটাছেড়া। দু’দল মিলে ৭৪৮ রান করেছে। কোনো টাই ম্যাচে এর আগে এত রান দেখাই যায়নি। এমনকি ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসেই এর চেয়ে বেশি রান হয়েছে কেবল পাঁচ বার।
এই ৩৭৪-ই ওয়ানডেতে ডাচদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আর রান তাড়া করতে নেমে এর চেয়ে বেশি সংগ্রহ আছে কেবল তিনটি।
হারলেও রেকর্ড বইয়ে নাম উঠেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরানের। নিজের দলের হয়ে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তিন অংকের ঘরে তিনি পৌঁছান ৬৩ টি ডেলিভারি খেলে।
যদিও, পুরানকে ছাপিয়ে নায়ক এদিন ভ্যান বিক-ই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে সুপার ওভারে সর্বোচ্চ রান তুলেছেন তিনি। এর আগের কীর্তিটা আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। ২০০৮ সালে টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫ রান করে তাঁরা। ২০২২ সালে একই কীর্তি উইন্ডিজ নারী দলেরও ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
তবে, সব কিছুকে অতীত করে জিম্বাবুয়েতে এদিন ভ্যান বিকদের উত্থান হয়েছে। ভ্যান বিক তো বলেই দিলেন, ‘কি থেকে কি হয়ে গেল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।’
সত্যিই তাই। এই ম্যাচের কোনো ব্যাখ্যা নেই। ৩৭৫ রান তাড়া করা কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই সহজ না। তার ওপর একটা সময় মাত্র ১২৫ ডেলিভারি থেকে ২০৫ রান করতে হত নেদারল্যান্ডসের। সেখান থেকে ম্যাচটাকে তাঁরা নিয়ে গেল সুপার ওভারে।
বাকিটা ইতিহাস! যদিও, ইতিহাস গড়েও এবারের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে নেদারল্যান্ডসের। তারপরও ক্রিকেটের বুকে ঐতিহাসিক এই ম্যাচ হয়ে টিকে রইবে এই ম্যাচ। আর এমন একটা দলকে বিশ্বকাপে সুযোগ দিতে না পারাটাকে খোদ আইসিসির ব্যর্থতা বলেই স্বীকৃত হয়ে থাকবে।