২ মিনিট ১২ সেকেন্ডের ভিডিও। অথচ সেই ভিডিওর প্রায় কোনো অংশেই নেই বাংলাদেশের ছায়া। আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রচারণার অংশ হিসেবে সম্প্রতি আইসিসি’র প্রকাশিত প্রোমো ভিডিও জুড়ে ছিল যেন ভারতের আধিপত্য।
এবারের বিশ্বকাপে সুপার লিগের গণ্ডি পেরিয়েই সব দলকে বিশ্বকাপের মঞ্চে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়েছে। সেখানে তৃতীয় হয়েছিল বাংলাদেশ। তাছাড়া, ওয়ানডে ফরম্যাটে এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে শক্তিশালী দল হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু, আইসিসির এ প্রোমো ভিডিওতে এক প্রকার উপেক্ষিতই ছিল বাংলাদেশ। টাইগারদের যেন অনেকটা দূরে সরিয়ে রেখেই এ ভিডিওর কাজ শেষ করেছে আইসিসি।
একই ভাবে বাছাইপর্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া নেদারল্যান্ডসকেও সেভাবে ভিডিওতে রাখা হয়নি। ২০১১ বিশ্বকাপে জাতীয় সঙ্গীতের একটি ক্লিপ ছাড়া ডাচদের দেখা যায়নি কোনভাবেই।
তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এবারের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হলেও ভিডিওতে বেশ কয়েকবারই জায়গা পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম দুই বিশ্বকাপজয়ী দেশটির কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্লাইভ লয়েডকে সেখানে দেখা গিয়েছে।
এর স্বপক্ষে অবশ্য কিছু যৌক্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে। কেননা, বিশ্বকাপের শুরুর ইতিহাস আনলে তাতে ক্যারিবিয়ানরাই জায়গা পাবে।
কিন্তু দু:খজনকভাবে, পুরো ভিডিওতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এসেছে কেবল দুইবার। ২০১৯ বিশ্বকাপে বাউন্ডারিতে সাইফউদ্দিনের ফিল্ডিং এবং জার্সি পরিহিত এক সমর্থক ছাড়া পুরো ভিডিওতে খুঁজেই পাওয়া যায়নি বাংলাদেশকে।
অথচ গত বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে এক প্রকার ইতিহাসই গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসে ১০০০-এর বেশি রান ও ৩০-এর বেশি উইকেটের কীর্তি রয়েছে সাকিবেরই। কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা এ অলরাউন্ডার আইসিসির এ ভিডিওতে ঠাঁইই পাননি ৷
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বকাপের মঞ্চে মাত্র ২ ম্যাচ খেলা দিনেশ কার্তিক ছিলেন ভিডিওর শুরুর অংশে। যদিও সেখানে তাঁকে দর্শক রূপেই পরিচয় করানো হয়েছে।
আইসিসি এ প্রোমো ভিডিওটা মূলত ভারতকে কেন্দ্র করে নাকি অংশগ্রহণকারী সকল দেশকে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে করেছে, তা এখন বড়সড়ো একটা কোয়েশ্চেন মার্ক তৈরি করছে। কারণ পুরো ভিডিওটা জুড়েই রয়েছে ভারতের সাফল্যের গল্প। এ ছাড়া ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথের ব্যাপারটা বারবার এসেছে ভিডিওতে।
অবশ্য দুটি দেশের কূটনৈতিক বৈরিতা থাকলেও ভিডিওর একটি দৃশ্যে দারুণ সম্প্রীতি দেখানো হয়েছে। সেখানে মূলত প্রতীকী অর্থে, পাকিস্তান হেরে যাওয়ার পর এক হতাশ পাকিস্তানি সমর্থককে ভারতীয় এক সমর্থকের তরফ থেকে স্বান্তনা দেওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়।
এ ছাড়া এ ভিডিওতে দেখা গিয়েছে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন, ভারতের কপিল দেব, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্টি রোডস, আগের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যানকে।
পুরো ভিডিওতে বড় আকর্ষণ ছিলেন বলিউডের সুপারস্টার শাহরুখ খান। পুরোটা সময় শোনা গেছে তাঁর কণ্ঠ। শেষদিকে নিজেও এসেছেন ক্যামেরার সামনে। তাঁর স্বরেই ‘ইট টেকস ওয়ান ডে’ উচ্চারিত হয়ে ভিডিওটি শেষ হয়।
বিশ্বকাপের সাথে শাহরুখ খানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে অবশ্য ব্যাখ্যাও মিলেছে আইসিসির কাছ থেকে। আইসিসির প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালারডাইস বলেন, ‘ক্রিকেট এবং চলচ্চিত্র ভারতের হৃদয়ের সাথে মিশে আছে। আর আমরা এই দুটিকেই একত্র করে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি। ক্রিকেটারের অসাধারণ একটি দলের সাথে বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের উপস্থিতি আমাদের এই দেশের সাথে সংযোগ আরও গভীর করবে। সেই সাথে বিশ্বব্যাপী মনযোগ আকর্ষণেও বেশ সাহায্য করবে।’
বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি আর মাত্র ৭৭ দিন। বাইশগজের মূল লড়াইয়ের আগে মাঠের বাইরের প্রচার প্রচারণাতেই এখন ব্যস্ত থাকবে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা-আইসিসি। সেটাই স্বাভাবিক।
তবে তাদের প্রথম প্রচারণাই মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় ছেয়ে গিয়েছে ক্রিকেটাঙ্গন। সবচাইতে দৃষ্টিকটু হিসেবে ধরা দিয়েছে, পুরো ভিডিওতে বাংলাদেশকে উপেক্ষিত করার বিষয়টা। এখন এটাই অফিশিয়াল প্রোমো ভিডিও কিনা, তা এখনও জানা যায়নি। তবে এই মুহূর্তে দেখার বিষয় হচ্ছে, সমালোচনার মুখে নতুন ভাবে কোনো ভিডিও আইসিসি প্রকাশ করে কিনা।
এর আগে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপে সমালোচনার মুখে থিম সংই পরিবর্তন করে ফেলেছিল আয়োজক দেশ কাতার। ক্রিকেটের মেগা এ ইভেন্টে এখন সেই পরিবর্তন মিলবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।