চিরসবুজ শহীদ আফ্রিদির জয়োধ্বনি

ক্যারিয়ারের মধ্যগগণ। এরপর গোধূলি লগ্নে অন্তিম প্রস্থান। বাইশ গজের ক্যারিয়ারে সব চক্রই শেষ করেছেন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি। কিন্তু গোধূলি লগ্নের সোনালি আভা বলে তো একটা ব্যাপার আছে। ৪৭ এ পা দেওয়া শহীদ আফ্রিদি এখনও ক্রিকেট মাঠে শুভ্রতা ছড়ানোর লক্ষ্যেই রয়েছেন। 

কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে টরেন্টো ন্যাশনালসের হয়ে খেলছেন পাকিস্তানের প্রথিতযশা এ ক্রিকেটার। না। টুর্নামেন্টটি মোটেই অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটারদের নিয়ে নয়।

এ টুর্নামেন্টে খেলছেন সাকিব, লিটনদের মতো ক্রিকেটার। একই সাথে কার্লোস ব্রাফেট, ক্রিস লিন, অ্যালেক্স হেলসের মতো টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালাও রয়েছেন। তবে এত কিছুর মধ্যেও নজর কেড়েছেন ৪৭ বছর বয়সী আফ্রিদি। 

হ্যাঁ। বয়সটাই যেখানে বিস্ময় জুগিয়েছে। যে বয়সে ক্রিকেট পাঠ চুকিয়ে কোচিং কিংবা অবসর জীবনে প্রবেশের হাতছানি থাকে, সেখানে এখনও দিব্যি খেলে যাচ্ছেন আফ্রিদি।

শুধুই খেলছেন? মোটেই নয়। নিজের উপস্থিতি প্রমাণ করছেন ব্যাটি, বোলিং- দুই দিয়েই। লেগ স্পিনের চিরায়ত কারিশমা ঠিকই ধরে রেখেছেন। সঙ্গে ব্যাটিংটাও করছেন সাবলীলভাবে। 

অনেক সময়ই এ ধরনের টুর্নামেন্ট গুলোর মনোযোগ আকর্ষণে আফ্রিদির মতো বয়স্ক ক্রিকেটারদের যুক্ত করা হয়। কিন্তু শহীন আফ্রিদি রয়ে গিয়েছেন অপরিবর্তনীয়ই। মাঠে সরব উপস্থিতি, চনমনে মনে সতীর্থদের সাথে দারুণ মেলবন্ধনেই সময় কাটাচ্ছেন তিনি।

আর ফিটনেস? দেখে বোঝার উপায় নেই, মানুষটা জীবনের ইনিংসে আর বছর তিনেক পরই হাফ সেঞ্চুরি মারবেন। দেখে মনে হচ্ছে কৈশোরের উদ্দীপ্ত মন যেন মিশে গিয়েছে আফ্রিদির ভিতরে। 

অথচ, ক্রিকেট থেকে অবসরের পর আফ্রিদি পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচক হয়েছেন। করোনার সময়ে নিজ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অসহায় লোকদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, এ সময়ের মধ্যে তিনি শ্বশুর পরিচিতিও পেয়েছেন। নিজ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আরেক আফ্রিদির সাথে, শাহীন শাহ আফ্রিদি!

এত কিছুর পর শহীন আফ্রিদির ক্রিকেট সত্ত্বাটা এখন অটুট, সজীবতায় সমৃদ্ধ। আর তাতে এই বয়সে এসেও নতুন এক তারুণ্যের খেল দেখাচ্ছেন তিনি। বয়স যে শুধু একটি সংখ্যা মাত্র— এটিই যেন প্রমাণ করছেন পাকিস্তানের সাবেক এ অধিনায়ক। 

গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি অনেকটা শখের বসেই খেলছেন শহীদ আফ্রিদি। ব্যাপারটা এমন নয় যে, এর পর থেকে নিয়মিতই তাঁকে দেখা যাবে বাইশ গজের প্রাঙ্গনে। কিন্তু যে সময়টায় এসে তিনি আধিপত্য দেখাচ্ছেন তা বিরলই বটে। 

সময়টা কেমন? আজ প্রায় ২৭ বছর আগে লঙ্কানদের বিপক্ষে ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করে যে ক্রিকেট বিশ্বে যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তখন পৃথিবীতে আলোর মুখই দেখেননি ফজল হক ফারুকি। সে সময়ের অনাগত ফজল হকের সাথেই এখন এক সাথে এক দলে খেলছেন শহীদ আফ্রিদি। 

নব্বই দশক। এরপর একবিংশ শতাব্দীর টানা তিন দশক। চার চারটা দশকে ক্রিকেট মাঠে নিজের পদচ্ছাপ সমুন্নত রেখেছেন আফ্রিদি। এতেও কি বিস্ময় বাড়ে না? হয়তো বাড়েই। ক্রিকেট ইতিহাসে দর্শক নন্দিত ক্রিকেটারদের সারিতে যে আফ্রিদি প্রথম কাতারেরই একজন। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link