সাত ম্যাচে ১১ উইকেট। জিম অ্যাফ্রো টি-টেন লিগে তাসকিন আহমেদ বল হাতে পার করেছেন দুর্দান্ত সময়। একেবারে প্রথমবারেই বাজিমাত বলতে যা বোঝায় আরকি। বুলাওয়ে ব্রেভসের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন তিনি। প্রথম বারেরি মত ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেলে আদায় করে নিয়েছেন সকলের ভালবাসা ও প্রশংসা।
গ্রুপ পর্বেই থেমেছে ব্রেভসদের দৌড়। দলকে ফাইনালে তুলতে না পারার আক্ষেপটা রয়েছে তাসকিনের মাঝে। তবে সেসব ছাপিয়ে প্রাপ্তির হিসেবটাই বরং মুখ্য হয়ে উঠেছে তাসকিনের কাছে। দশ ওভারের টুর্নামেন্টে দুই ওভার করে বোলিং করাটা বেশ চাপের। সেই চাপ অভিজ্ঞতাও বাড়িয়েছে নিশ্চয়ই।
তাসকিনও তেমন সুরেই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত ভাবে ভাল একটা অভিজ্ঞতা ছিল, আল্লাহর রহমতে। প্রথমরবারের মত ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেললাম, অভিজ্ঞতা ভালই ছিল, খারাপ ছিল না। যদিও দল হিসেবে আমরা ফাইনাল খেলতে পারিনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি ভালই খেলেছি।’
এর আগে বহুবার, ভিন্ন ভিন্ন সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন টাইগার স্পিডস্টার। তবে অধিকাংশ সময়ে জাতীয় দলের ব্যস্ততা থাকায় তিনি সেই সুযোগগুলো নিতে পারেননি। কিন্তু এবার ব্যাটে-বলে মিলে গেছে। জাতীয় দলের বিরতির সময়ে তিনি উড়ে গেছেন জিম্বাবুয়েতে। সেখানে প্রথবারের মত আয়োজিত হয়েছে জিম অ্যাফ্রো টি-টেন লিগ।
সেই টুর্নামেন্টে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন তাসকিন। তবে বাকিদের তুলনায় ম্যাচ খেলেছেন কম। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেটে মালিন ব্র্যাড ইভান্স। যিনি ১১ ম্যাচে নিয়েছেন ১৪টি উইকেট। অন্যদিকে তাসকিন ম্যাচ খেলেছেন ৭টি, উইকেট শিকার করেছেন ১১টি।
তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় সম্ভবত তার বোলিং ইকোনমি। মাত্র ৭.৮৫ ইকোনমি রেটে তিনি বোলিং করেছেন। রান প্রসবা এক টুর্নামেন্টে এত স্বল্প রান খরচা করাটাও নিঃসন্দেহে বেশ বড় প্রাপ্তি। নিজের বোলিংয়ে দারুণ উন্নতি করেছেন বলেই ধরা দিয়েছে এমন নজরকাড়া সাফল্য।
এমনকি সেই টুর্নামেন্ট খেলতে আসা বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা তাসকিনে হয়েছেন মুগ্ধ। তাইতো, তারা তাসকিনকে তাদের দেশের ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলার আগাম নিমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন। এ নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিদেশি খেলোয়াড়রা সম্ভাব্যতা জিজ্ঞেস করছিল। তাদের লিগের সময় আমি খেলতে পারব কিনা।’
হ্যা এখানটায় একটু হোচট খেতেই হয় তাসকিন আহমেদকে। তিনি বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের অন্যতম সেনানী। তাকে একটু আলাদা যত্নেই রাখতে চায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তাইতো সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলার ছাড়পত্র তিনি পাননা।
এই যেমন জিম অ্যাফ্রো টি-টেন লিগ খেলার পরপরই লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগ খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তাসকিন। ডামবুলা অরা দল এই পেসারকে নিজেদের ডেরায় পেতে চেয়েছিল। কিন্তু সামনেই যেহেতু এশিয়া কাপ, তাই বিসিবি তাসকিনের ওয়ার্কলোডের কথা চিন্তা করে তাকে এলপিএলে না খেলার উপদেশ দিয়েছে। তাসকিনও তাতে সম্মতি দিয়েছেন।
এ নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘সুস্থ থাকলে আরও অনেক লিগ খেলতে পারব। আর তাছাড়া বোর্ড থেকে সিদ্ধান্ত যেহেতু নিয়েছে যে, না আমার এই মুহূর্তে ওয়ার্কলোড বেশি হয়ে যেতে পারে সামনে বড় ইভেন্ট আছে, সেই সাথে তারা ক্ষতিপূরণের কথাও বলেছে। তো সবমিলিয়ে ঠিক আছে, বোর্ড যে সিদ্ধান্তটা নিবে।’
ক্যারিয়ারে বেশ উত্থান আর পতন ইতোমধ্যেই দেখে ফেলেছেন তাসকিন আহমেদ। পারফরমেন্সের অবনতি, সেই সাথে ইনজুরির ভয়াল থাবা। বেশ ক’বারই আঘাত করেছে তার ক্যারিয়ার গ্রাফে। তাইতো তাসকিন নিজের সুস্থতাই প্রার্থণা করেছেন।
এখন তাসকিনের সকল চিন্তাধারা আর পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ। একটু বিশ্রাম নিয়েও হয়ত তিনি মাঠে নেমে যাবেন। সতীর্থদের সাথে করে নিজেও প্রস্তুত হয়ে নেবেন বড় দুই শিরোপা জয়ের আয়োজনে।