এক গ্যারেজে দুই অধিনায়কের বিদায়

সময়টা ২০২২ সালের ৩১ মে। এ দিন বাংলাদেশের টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মুমিনুল হক। সে সময় থেকে প্রায় ১৪ মাস বাদে, এবার আরো একজন অধিনায়ক সরে দাঁড়ালেন। ওয়ানডের নেতৃত্ব ছেড়ে দিলেন তামিম ইকবাল। 

তামিম আর মুমিনুল, দুজনই বাঁ-হাতি ব্যাটার। এমন সাদৃশ্যতা নিয়ে আলাদা আলাপের কিছু নেই৷ তবে কাকতালীয়ভাবে, এ দুই ‘সাবেক’ অধিনায়কেরই নেতৃত্ব থেকে প্রস্থানের মঞ্চটা হলো একই স্থানে, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের গুলশানের বাসভবনের গ্যারেজে। 

ক্রিকেট পাড়ায় তামিমকে নিয়ে অস্বস্তি মাস খানেক ধরেই। আচমকা অবসরের ঠিক পরদিন আবার প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফেরা। এরপর কবে ফিরবেন, ফিরলেও অধিনায়ক হয়ে ফিরবেন কিনা, এমন নানা প্রশ্নে গুঞ্জনের মাত্রা বাড়ছিল। 

তামিম অবশ্য নিজেই গুঞ্জনটাকে থামিয়ে দিলেন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের সাথে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন। তামিমের ভাষ্যমতে, সেই আলোচনার সামান্য অংশে মুঠোফোনে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। 

ঘন্টা দেড়েকের সেই আলোচনার পর তামিম, পাপন আর জালাল ইউনুস আসলেন সাংবাদিকদের সামনে। মঞ্চটা সেই গ্যারেজ। যেখানে এক বছর আগে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন মুমিনুল হক। 

তামিমও সেই মুমিনুলের পথেই হাঁটলেন। কোনো রকম রাখঢাক না রেখেই জানিয়ে দিলেন, তাঁর নামের পাশে অধিনায়ক তকমাটা এখন শুধুই অতীত। বাংলাদেশকে আর নেতৃত্ব দিচ্ছেন না তিনি। 

তামিমের এ ঘোষণা বাংলাদেশের ক্রিকেট আর্কাইভে বন্দী থাকা গত বছরের মে মাসেই ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। যেখানে এই গ্যারেজেই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন মুমিনুল হক। 

মুমিনুল অবশ্য বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের বাজে একটা সময়েই নেতৃত্ব পেয়েছিলেন। আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় সাকিব যখন দলের বাইরে তখন টেস্ট কাপ্তানির দায়িত্ব পান মুমিনুল। সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু সাফল্য ছাড়া গোটা সময়টাতেই মুমিনুল ছিলেন সমালোচনার তীরে বিদ্ধ। 

একই সাথে নেতৃত্বের চাপে নিজেকেও ঠিক হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাট হাতে ছিলেন রান খরায়। তাই সেই চাপ থেকে বেরিয়ে আসতেই গত বছরের ৩১ মে তে টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরে দাঁড়ান মুমিনুল। 

তামিম অবশ্য অজানা কোনো চাপের মুখে নেতৃত্ব ছাড়লেন কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকছে। তবে তাঁর নেতৃত্ব ছাড়ার পিছনে মূল হোতা হয়ে রইল ইনজুরিই। এ কারণে তাঁকে এশিয়া কাপেও দেখা যাবে না বাংলাদেশ শিবিরে। 

তবে মুমিনুল, তামিমের নেতৃত্ব ছাড়ার মধ্যে মিল রয়েছে অনেক। অধিনায়ক থাকাকালীন মুমিনুলের মতো অফ ফর্মে না থাকলেও, তামিম ঠিক এ সময়কালে তামিমের মতো ছিলেন না। তাছাড়া, ক্রমেই তাঁর ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল বারবার।

মোদ্দাকথা, অধিনায়ক হিসেবে যে সহজাত প্রতাপটা থাকা প্রয়োজন, সেটিই বোধহয় হারিয়ে ফেলছিলেন তামিম। কোথাও গিয়ে যেন দলটার উপর নিয়ন্ত্রণও হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। যদিও সবটাই হয়তো অনুমান নির্ভর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তামিমের বেশ কিছু সাক্ষাৎকার সেটিই ইঙ্গিত করে। 

তামিমের মতো মুমিনুল নেতৃত্বে সফলতা পাননি। স্বাভাবিক ভাবেই সমালোচনার আক্রমণ তাঁকেও সইতে হয়েছে। তবে তামিমের মতো ইনজুরি নয়, অফ ফর্মের মুমিনুলই অধিনায়ক মুমিনুলকে ‘নেতৃত্ব’ থেকে ছেঁটে ফেলার মতো অসম চাপ তৈরি করেছিল। আর সেই চাপেই নুয়ে পড়েছিলেন মুমিনুল। 

এক বছরের ব্যবধানে, বাংলাদেশের দুই জন অধিনায়ক ‘সাবেক’ হয়ে গেলেন। মঞ্চটা সেই একই গ্যারেজ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ দুই ঘোষণার সাক্ষী হয়ে রইল পাপনের গুলশান বাসভবনের এই গ্যারেজ।

মুমিনুল টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর সেই দায়িত্ব গিয়েছিল সাকিবের কাঁধে। কাকতালীয় ভাবে, এবারও কি তামিমের ছেড়ে দেওয়া দায়িত্বটা নেবেন সাকিব? এ প্রশ্নের উত্তরটা পেতে আরো দিন চারেকের অপেক্ষা। তবে পাপনের গুলশান ভবনের গ্যারেজে আর কত অধিনায়কের বিদায়ের মঞ্চ হয়, সেটাও এখন থেকে আর কম আগ্রহের বিষয় নেই।  

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link