‘যে দলে সাকিব আছে, সেখানে অধিনায়ক অন্য কাউকে ভাবার প্রশ্নই ওঠে না’ – সাফ কথাটা বলে দিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। সুজনের এই কথাটাই এখন বাস্তবতা। সাকিবের চেয়ে যোগ্য কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) হাতে ছিল না। বোর্ডও তাই সাকিবের সম্মতি পাওয়ার পর দ্বিতীয় বার ভাবেনি।
বোর্ড সভাতেও সবার ভোট সাকিবের পক্ষেই গেছে। আলোচনায় যদিও লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ ছিল, বার বার সাকিব আল হাসানের নামটাই কেন আসছিল? পরিসংখ্যান কি বলে?
ওয়ানডেতে সাকিব বাংলাদেশের ইতিহাসেরই সেরা অধিনায়কদের একজন। ৫০ টি ওয়ানডে ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ৪৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে সাকিবের। এরপর মাশরাফির অবর্তমানে আরও তিনটি ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন। অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাই কোনো সন্দেহ নেই।
এই ৫০ টি ম্যাচের মধ্যে দল জিতেছে ২৩ টি ম্যাচে। অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তাঁর চেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছেন কেবল দুজন – মাশরাফি বিন মুর্জতাও হাবিবুল বাশার সুমন। তাঁরা জিতেছেন যথাক্রমে ৫০ ও ২৯ টি ম্যাচ।
২০১১ সালের বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করেন। ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার পাশে সহ-অধিনায়ক ছিলেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। এর মধ্যে তিনটি জয় ও চারটিতে হেরেছে বাংলাদেশ।
বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চে বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার তিনি। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ৬০৬ রান এবং ১১ উইকেট নিয়ে অনন্য রেকর্ড গড়েন সাকিব। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ১৫ তম ওয়ানডে অধিনায়কের আবারও সিংহাসনে ফেরার মঞ্চ প্রস্তুত।
হ্যাঁ, সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্বের অন্ধকার অধ্যায়ও আছে। ২০১১ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত নেতৃত্ব পান তিনি। সেবার দেশের মাটিতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। তবে, সেই স্বপ্নের ভরাডুবি হয়।
বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের বাঁধাই টপকাতে পারেনি। তিনটা ম্যাচ জিতেছিল অবশ্য দল। এর মধ্যে একটা জয় এসেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। বাকি দু’টো জয় আসে আরও দু’টি ল্যান্ডের বিপক্ষে – আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। তবে, সেই বিশ্বকাপটা নিশ্চিতই ভুলে যেতে চাইবেন সাকিব।
কারণ, সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ দল। বিশ্বকাপে আর কখনওই সাকিব পূর্ণ মেয়াদে অধিনায়কত্ব পাননি। এবার পেয়েছেন। এবার নিশ্চয়ই আগের বাজে সময়টা সাকিব ভুলিয়ে দিতে চাইবেন স্মরণীয় সাফল্য দিয়ে।
ক্যারিয়ারের শেষটা রঙিন করে রাখার এর চেয়ে ভাল কোনো মঞ্চ সাকিবের নিশ্চয়ই আর পাওয়ার উপায় ছিল না! আর এই মঞ্চে সাকিব সফল হলে লাভটাও তো বাংলাদেশেরই।