কেনিয়ার ক্রিকেট এখন মৃতপ্রায়; আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নেপালের মত উদীয়মান ক্রিকেট শক্তির ভিড়ে দেশটিকে খুঁজে পাওয়াই ভার। তবে একটা সময় ছিল যখন কেনিয়া চোখে চোখ রেখে বড় দলগুলোর বিপক্ষে লড়তো। আর সেই সোনালী সময়ের কিংবদন্তি এক ব্যাটসম্যান রবীন্দু ধীরাজলাল শাহ।
উইকেটের দুই দিকেই ধীরাজলাল শাহয়ের সমান পারদর্শিতা ছিল। কোকা কোলা ট্রাই সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন তিনি। টেকনিক্যালি সলিড এই ব্যাটসম্যানের অবশ্য নিজেকে প্রমাণে সময় লাগেনি একটুও, প্রথম ম্যাচে ছয় নম্বরে নেমে তুলে নিয়েছিলেন অর্ধ-শতক।
সেই ম্যাচে কেনিয়ার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন তিনি, হিতেশ মোদির সঙ্গে তাঁর গড়া জুটিতে ভর করেই সে ম্যাচে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছিল আফ্রিকান দলটি।
ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচেই ধীরাজলাল শাহকে প্রমোশন দিয়ে ওপেনিংয়ে পাঠায় টিম ম্যানেজম্যান্ট। সেবারও ভরসার প্রতিদান দিয়েছিলেন তিনি, ৭৩ বলে ৬২ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস খেলে কেনিয়ার জয়ে অবদান রাখেন এই ডান-হাতি। পরের ম্যাচে আরও ক্ষুরধার হয়ে ওঠে শাহয়ের ব্যাট; ১০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ৭০ রান করেন তিনি। আর তাতে ভর করে ভারতকে হারিয়ে দেয় কেনিয়া।
এভাবেই সম্ভাবনাময়ী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন রবীন্দু শাহ। কেনিয়ার ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন এমনই একজন ভাবা হতো তাঁকে। বিশ্বকাপেও প্রায় প্রতি দলকে ভাল শুরু এনে দিতেন এই ওপেনার, তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তেমন একটা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ তাই স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি কেনিয়ার জন্য।
পরের বিশ্ব আসরে অবশ্য সবাইকে চমকে দিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল কেনিয়া। একটি হাফ-সেঞ্চুরি সহ একাধিক ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ রান করে অসাধ্য সাধনে বড় অবদান রেখেছিলেন ধীরাজলাল।
কিন্তু এরপরই ইনজুরি হানা দেয় প্রতিভাবান এই ক্রিকেটারের জীবনে। অনেকে তো ভেবে নিয়েছিল এই বুঝি থেমে গিয়েছেন, তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিলেন তিনি।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি, চোটের কারণে অতৃপ্তি নিয়েই ক্যারিয়ারে সমাপ্তি রেখা টেনে দিয়েছিলেন রবীন্দু শাহ। তবে চোটের চেয়ে তাঁকে বেশি কষ্ট দিয়েছে খুব বেশি ম্যাচ খেলতে না পারা; তাঁর বয়সী ক্রিকেটাররা যেখানে দুইশতের বেশি ম্যাচ খেলতে পায় সেখানে তিনি মাঠে নেমেছেন মাত্র ৬০ বার।
অবশ্য এসব অতৃপ্তি থাকলেও অর্জনে কমতি নেই তাঁর। কেনিয়া ক্রিকেটের অন্যতম বড় নাম হিসেবে এখনও তাঁকে মনে রেখেছে ক্রিকেট; টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর বাইরে সবচেয়ে ধারাবাহিক ওপেনারদের বেছে নিতে হলে রবীন্দু ধীরাজলাল শাহকে স্মরণ করতে হবেই।