ঠিক যেমন জয় চেয়েছিল সবাই

এশিয়া কাপের ওয়ানডে সংস্করণে তিনবার বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান। দুইবারই বড় ব্যবধানে জিতেছে তাঁরা, বাংলাদেশ একবার জিতলেও সেটাতে ছিল না দাপুটে ভাব। সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনাতেও পিছিয়ে ছিল টাইগাররা, তাই তো ডু অর ডাই ম্যাচে রশিদ খানদের বিপক্ষে ফেভারিট হয়ে নামতে পারেনি বাংলাদেশ।

কিন্তু তাতে কি, মাঠের খেলায় ঠিকই দুই দলের শক্তির পার্থক্য বুঝিয়ে দিয়েছে টিম বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েই সুপার ফোরে খেলা নিশ্চিত করেছে সাকিব আল হাসানের দল।

ডু অর ডাই ম্যাচে তিন পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ, অভিষেক হয়েছিল শামীম হোসেনের। টিম ম্যানেজম্যান্টের এসব সাহসী পদক্ষেপেই জয় ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের হাতে। আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়ে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের স্বস্তি এনে দিল শান্ত, মিরাজরা।

টসে জিতে এদিনও আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সিদ্ধান্ত একই থাকলেও সাকিব চমক দেখান ওপেনিং জুটিতে; নাইম শেখের সঙ্গে মেক শিফট ওপেনার হিসেবে ইনিংস উদ্বোধন করতে পাঠান মেহেদি মিরাজকে। সেই সিদ্ধান্ত দারুণভাবে কাজে দিয়েছে, আফগান ভীতি কাটিয়ে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তুলেছিল ৬০ রান।

পাওয়ার প্লের শেষ বলে অবশ্য ২৮ রান করা নাইম শেখ আউট হন; তিন নম্বরে সুযোগ পাওয়া হৃদয় পারেননি রানের খাতা খুলতে। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়া বাংলাদেশের হাল ধরেন নাজমুল শান্ত আর মেহেদি মিরাজ। দুইজনের অনবদ্য ১৯৪ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পায় টিম টাইগার্স।

আঙুলের ইনজুরির কারণে ১১২ রানের মাথায় রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান মিরাজ। সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি শান্তও। তবে ইনিংস শেষ করার দায়িত্ব ভাল ভাবে পালন করেন দুই অভিজ্ঞ মুশফিক আর সাকিব। দুজনের ক্যামিওতে ভর করে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে ৩৩৪ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ।

সুপার ফোর নিশ্চিত করতে জিততে হবে বড় ব্যবধানে। ফলে টার্গেট বড় হলেও কাজটা কঠিন ছিল তাসকিন, শরিফুলদের। যদিও শুরুতেই রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন শরিফুল। কিন্তু এরপরই অভিজ্ঞ রহমত শাহকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন ইনফর্ম ইব্রাহিম জাদরান।

এই দুই ডানহাতির জুটিতে যখন অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল আফগানিস্তান; তখনি ত্রাতা হয়ে আসেন তাসকিন। রহমতকে সরাসরি বোল্ড করে ভাঙেন ৭৮ রানের পার্টনারশিপ। তবে হাল ছাড়েননি ইব্রাহিম, অধিনায়ক শহীদিকে নিয়ে আবার শুরু করেন লড়াই।

কিন্তু এবার তিনি নিজেই কাটা পড়েন হাসান মাহমুদের বলে। মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচের বদৌলতে ৭৫ রান করা এই ব্যাটারকে ফেরাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। তাতে যেন তেতে ওঠেন দলপতি হাসমতউল্লাহ, আস্কিং রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন তিনি।

কিন্তু ৩৭ ও ৩৮তম ওভারে নাজিবুল্লাহ জাদরান আর হাসমতউল্লাহ শহিদী বিদায় নিলে ম্যাচের লাগাম চলে আসে বাংলাদেশের দিকে। তখনও অবশ্য সুপার ফোর নিশ্চিতের লড়াই বাকি ছিল বাংলাদেশের। তাই তো উত্তেজনা কমেনি এক ফোঁটাও, কখনো আফগান ব্যাটারদের বাউন্ডারিতে শঙ্কা জেগেছে বাংলাদেশীদের মনে আবার আউট হলেই উল্লাসে ভেসেছে সবাই।

যদিও লাল-সবুজের পেসারদের দাপটে সেই উত্তেজনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শরিফুল, তাসকিনদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি আফগান লোয়ার মিডল অর্ডার। রশিদ খানের ঝড় কিছুটা ব্যবধান কমালেও শেষমেশ ২৪৫ এই থেমে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস।

টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে জিততেই হবে; শুধু জিতলেই হবে না, আবার মেলাতে হবে নানান সমীকরণ। এমন ম্যাচে যদিও শুরুটা হয় দারুণ, তখন বাকি কাজ একটু হলেও সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশের সাথেও তেমনটাই ঘটেছে আজ; উড়ন্ত সূচনা পাওয়ার পর জয়ের হাসিও হাসতে পেরেছে টাইগাররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link