ছন্দে ছন্দে কুলদ্বীপ দোলে আনন্দে

বল হাতে দারুণ সময় পার করছেন কুলদ্বীপ যাদব। এবারের এশিয়া কাপকে নিজের করে নিতে যেন তার নেই কোন কমতি। ভারতের বোলিং লাইনআপের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত হয়েছেন তিনি অনেক আগে থেকেই। তবে ঠিক কি কারণে তার গুরুত্ব বাড়ছে দিনকেদিন, সেটাই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছেন কুলদ্বীপ।

এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় তিনি রয়েছেন সবার উপরে। ৯টি উইকেট রয়েছে তার ঝুলিতে। তার সমপরিমাণ উইকেট রয়েছে পাকিস্তানের হারিস রউফ ও শ্রীলঙ্কার নতুন সেনসেশন দুনিথ ওয়েল্লালাগের। তবে বোলিং গড়ের দিক থেকে এদেরকে ছাপিয়ে এক নম্বর স্থানটা নিজের কব্জায় রেখেছেন কুলদ্বীপ।

তিন ইনিংসে বল করেছেন তিনি। তবে এই তিন ইনিংসের দু’টি ম্যাচ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুপার ফোরের দুই ম্যাচেই চমক দেখিয়েছেন বাঁ-হাতি এই স্পিনার। ভারতকে জয় এনে দিতে সম্মুখভাগ থেকেই রেখেছেন ভূমিকা। পাকিস্তানের বিপক্ষে তো তুলে নিয়েছিলেন ফাইফার।

বিশাল এক লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানি ব্যাটারদের কোমড় সোজা করে দাঁড়াতেই দেননি কুলদ্বীপ। পাকিস্তানের তুখোড় সব ব্যাটারদের নিমিষেই নিজের পকেটে পুরেছেন কুলদ্বীপ। তার আঁটসাঁট লাইন আর লেন্থ সেই সাথে স্পিনের ভেলকিতে কুপোকাত না হয়ে যেন উপায় নেই। ফখর জামান, আগা সালমান, ইফতেখার আহমেদরা যেন দিশেহারা।

ঠিক পরদিনই আবার ভারতকে নামতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বৃষ্টিই যত নষ্টের গোড়া। তবে টানা ম্যাচের ধকল ছাপিয়ে আবারও নিজ আলোয় উজ্জ্বল কুলদ্বীপ। এদফা লঙ্কানদের চারখানা উইকেট নিজের করে নেন তিনি। ফর্মে থাকা সাদিরা সামাভিক্রামাকে ফিরিয়েছেন, চারিথ আসালাঙ্কারও রেহাই হয়নি। শেষদিকে কাসুন রাজিথা ও মাথিশা পাথিরানার উইকেট নিয়ে ভারতের জয়কে করেছেন ত্বরান্বিত।

সামনেই বিশ্বকাপ। তাও আবার ভারতের মাটিতে। উপমহাদেশের উইকেট যতই ট্রু উইকেট করবার চেষ্টা করা হোক না কেন, সেখানে স্পিনারদের জন্য বাড়তি সুবিধা থাকবেই। সুতরাং এই সময়েই নিজের ফর্মের তুঙ্গে ফেরাটা কুলদ্বীপের জন্য যেন বাড়তি অনুপ্রেরণা। ভারতের আরও একটি বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নের পথের নতুন জ্বালানি।

উইকেট শিকারি বলেই, অন্যসব রিস্ট স্পিনারদের চাইতে কুলদ্বীপ একটু বেশি প্রাধান্য পান। তাছাড়া চায়নাম্যান বোলারদের বিপক্ষে ব্যাটারদের বেশ ভালই  বিপাকে পড়তে হয়। পাশাপাশি কুলদ্বীপের ঝুলিতে রয়েছে নানান অস্ত্র। সব মিলিয়ে নিশ্চয়ই কুলদ্বীপ বিশ্বকাপের জন্য মুখিয়ে আছেন।

তবে তার আগেই রেকর্ড বইয়ে ঢুকে গেছেন কুলদ্বীপ। স্পিনারদের মধ্যে দ্রুততম ১৫০ উইকেট শিকারি চতুর্থ বোলার এখন কুলদ্বীপ। মাত্র ৮৮ ওয়ানডে ম্যাচেই ১৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছেন বাঁ-হাতি এই রিস্ট স্পিনার। তাছাড়া ভারতীয় বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন কুলদ্বীপ যাদব।

এখানেই থেমে থাকার ব্রত সম্ভবত তিনি নেননি। নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নেওয়ার স্বপ্ন তো সবাই দেখে। তবে পূরণ করবার পথটা বেশ কঠিন। সেই কঠিন পথটা পাড়ি দিতে হবে কুলদ্বীপকে। ধূর্ত এই বোলার নিশ্চয়ই জানেন তার সামর্থ্য় ঠিক কতটুকু। আর ঠিক কতটুকু তার প্রয়োজন রয়েছে নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করবার।

উড়ন্ত এই সময়টাকে সঙ্গী করে শিরোপার চিবুকে উষ্ম চুম্বন এঁকে দেওয়ার এই তো সময়। এবারের এশিয়া কাপেই হতে পারেন তেমন কিছু। শিরোপা উল্লাসের জয়ধ্বনি ছাপিয়ে যেতে পারে কুলদ্বীপের স্পিনজাদু। কুলদ্বীপ প্রতিপক্ষের জন্যে ভয়ংকর। কুলদ্বীপ প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস। নিভৃতে তিনি চালিয়ে যান ধ্বংসলীলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link