শুরুতেই সমালোচনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখতে না রাখতেই পুরো দেশ যেন চলে গেল বিপক্ষে। না পুরো দেশ নয়, অর্ধেক। তিনি হয়ত সেই সমালোচনায় মুষড়ে পড়তেন। সেই পথই সম্ভবত ধরেছিলেন। কিন্তু বিষন্নতার ধূসর রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার আগে তাকে ফেরানো হলো। তানজিম হাসান সাকিবের জায়গা হলো বিশ্বকাপ স্কোয়াডে।
তিনি নিজে নিশ্চিতভাবেই বিস্মিত হয়েছেন। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বিস্তৃতি তো খুব বেশি নয়। তবুও একেবারেই আনকোড়া একজন কেন-ই বা নিল দল! এমন প্রশ্ন সাকিবের মাথায় ঘুরপাক খায়নি, সেটা নিশ্চিত নয়। তবে দল যে তার উপর একটুখানি হলেও ভরসা করেছে সে নিয়ে নেই কোন সংশয়।
তানজিম হাসান সাকিব, ঐ যে ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়। সেই স্কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যই ছিলেন সাকিব। নিজের পেস বোলিংয়ে কুপকাত করেছিলেন যুবা ক্রিকেটারদের। এবার তার সামনে সুযোগ ক্রিকেটে দুনিয়ার তাবড় তাবড় সব ব্যাটারদের নিজের ঝুলিতে পুরে নেওয়ার।
ঠিক কি করে তানজিম সাকিব এলেন এই দলে। সেটাও এক বিস্ময়ই বটে! ভাগ্যের চরম সহয়তাও বলা চলে। বাংলাদেশ দলের পাইপলাইনে তিনি বহুদিন ধরেই আছেন। এইচপি, বাংলা টাইগার্স কিংবা ‘এ’ দল, সবখানেই ছিল তার বিচরণ।
তবুও আসলে বাংলাদেশের বর্তমান পেস আক্রমণে তার জায়গা পাওয়ার কথা নয়। কেননা বছরের একেবারে শুরুতেই সম্ভবত বাংলাদেশ নিজেদের পেস আক্রমণের পাঁচ সেনানী ঠিক করেই ফেলেছিল। কিন্তু নিয়তির কাছে ধরাশায়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট ও এবাদত হোসেন। হুট করে আসা ইনজুরি এবাদতকে ছিটকে দেয় জাতীয় দল এবং বিশ্বকাপ থেকে।
তখন সবচেয়ে ভাল বিকল্পই ছিল তানজিম হাসান সাকিব। ভাল এবং সহজ। দীর্ঘদিন ধরেই পাইপলাইনে ছিলেন তিনি। তাছাড়া এশিয়া কাপের আগে হওয়া ইমার্জিং এশিয়া কাপেও বল হাতে দেখিয়েছিলেন ঝলক। তিন ম্যাচে তার ঝুলিতে গিয়েছিল ৯ উইকেট। ঠিক সে কারণেই এশিয়া কাপের স্কোয়াডেও যুক্ত করা হয় তাকে।
সেখানে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তার। তবে ভারতের বিপক্ষে নিজের প্রতিশ্রুতির একটা গান শুনিয়েছেন তিনি। রোহিত শর্মার উইকেটটি বাগিয়েছিলেন। সাথে যুব বিশ্বকাপের প্রতিপক্ষ তিলক ভার্মাকেও অসাধারণ এক ইনসুইংয়ে পরাস্ত করেছিলেন।
একটা সময় সাকিবের গতি নিয়ে সংশয় ছিল। তিনি দ্রুতগতির বোলার ছিলেন না। তবে সুইংটা হতো তার ঠিকঠাক। তা আবার সমীহ আদায় করে নেওয়ার মতই। তবে গতির কারণে সেসব সুইং দেখে শুনে খেলে ফেলতে পারতেন ব্যাটাররা। সাকিব তার দূর্বলতা নিয়ে কাজ করেছেন।
তিনি জানতেই বাংলাদেশের এই দুর্ধর্ষ পেস অ্যাটাকে সঙ্গী হতে তাকে বাড়তি কিছুই করতে হবে। বাড়তি অবশ্য তার মধ্যে শুরু থেকেই ছিল। ব্যাটটা দারুণ চালাতে জানেন। বাংলাদেশের বহু চিন্তার মাঝে একটি প্রবল দুশ্চিন্তা লোয়ার অর্ডারের ব্যাটিং। সেই লোয়ার অর্ডারে দারুণ ব্যাটিং করবার সক্ষমতাও রয়েছে সাকিবের।
ভারতের বিপক্ষে সেই প্রমাণও রেখেছিলেন তিনি। এসব কারণেই আসলে তাকে দলে নিয়ে আসা। তাছাড়া বিশ্ব জেতার ক্ষুধাও রয়েছে তার। সেই ক্ষুধাই তো বড্ড বেশি দরকার। যদিও বাংলাদেশের বর্তমান সেটআপে সাকিবের একাদশে জায়গা হওয়া নিয়ে রয়েছে সংশয়।
তবে সকল সংশয়ের মেঘ ঠেলে যেদিন সূর্য হবে উজ্জ্বল, সেদিনটা নিশ্চয়ই তানজিম হাসান সাকিব নিজের করে নেবেন। ক্রিকেটীয় কোন সমালোচনার জবাব তাকে অন্তত দিতে হচ্ছে না। তবুও অক্রিকেটীয় সমালোচনার প্রবল স্রোতে হারিয়ে যেতে পারেন তিনি যেকোন সময়। স্রেফ পারফরমেন্সই হতে পারে তার সম্বল। সেই সাথে সাকিব নামের ওজনটাও রক্ষা করতে হবে তাকে।