বাজবল ক্রিকেটের কুশল ভার্সন

যতটুকু প্রতিভা আর সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন কুশল মেন্ডিস তার অনেকটুকুই বাইশ গজে অদৃশ্য রয়ে গিয়েছিল। অধারাবাহিকতার সমর্থক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তবে ভারত বিশ্বকাপে নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছেন এই ব্যাটার, যেন পণ করেছেন নিজেকে নতুন করে চেনানোর।

পাকিস্তানের বিপক্ষে এবারের বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে মেন্ডিস করেছেন ৭৭ বলে ১২২ রান। অতিমানবীয় এই ইনিংস খেলার পথে ১৪টা চারের পাশাপাশি ছয়টি বিশাল ছয় হাঁকিয়েছেন তিনি – আর তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫৮.৪৪। আউট হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কাকে বড় সংগ্রহের বড় সংগ্রহের রাস্তা একেবারে পরিষ্কার করে দিয়েছেন এই ডানহাতি।

প্রতিপক্ষ দলে আছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি, নতুন বলে যাকে বিশ্বসেরাদের একজন ভাবা হয়; আছেন হারিস রউফের মত এক্সপ্রেস পেসার। কিন্তু এসবে থোড়াই কেয়ার লঙ্কান তারকার, পুরোটা সময় জুড়ে এসব নামী দামি বোলারদের ওপর তান্ডব চালিয়েছেন তিনি।

শুরুতে অবশ্য ওয়ানডে মেজাজেই ব্যাট করেছিলেন এই ব্যাটার। পাওয়ার প্লে শেষে তাঁর রান ছিল ২২ বলে ২৪। কিন্তু এরপরই খুনে আগ্রাসন চেপে বসে তাঁর ভিতর, মাত্র ৪০ বলে তুলে নেন অর্ধ-শতক। পরের ২১ বলে তিনি করেন আরো ৪২ রান। খানিকটা পরে বিশাল একটা ছয়, আর সেই সাথে ৬৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মেন্ডিস।

এরই মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান বনে যান এই ক্রিকেটার। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কান হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্ব মঞ্চে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের রেকর্ডও গড়েন তিনি।

শেষ পর্যন্ত ৭৭ বলে ১২২ রান করে থামেন কুশল মেন্ডিস। হাসান আলীর বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজ ঘরে, ততক্ষণে অবশ্য কাজের কাজটা হয়ে গিয়েছে।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও এমন ঝড়ো ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। সেদিন মাত্র ৪২ বলে ৭৬ রানের ক্যামিও এসেছিল তাঁর কাছ থেকে। ৪২৯ রানের বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে দল ১০২ রানে হারলেও মেন্ডিসের ব্যাটিং মুগ্ধ করেছিল সবাইকে।

প্রস্তুতি পর্ব থেকেই অবশ্য লঙ্কান ব্যাটার রান মেশিনে পরিণত হয়েছিলেন। তিন নম্বরে নেমে সেই ম্যাচে খেলেছিলেন ১৫৮ রানের দুর্দান্ত একটা ইনিংস, আর এতে মাত্র ৮৭ বল লেগেছিল তাঁর।

সবকিছু মিলিয়ে একটা বার্তা স্পষ্ট – বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের বাজবল এপ্রোচ অনুসরণ করছেন কুশল মেন্ডিস। এখন পর্যন্ত তাতে সফলও হয়েছেন তিনি, আর এভাবে ধারাবাহিক হতে পারলে যেকোনো বোলিং লাইনআপের জন্য ভয়ের কারণ হতে পারেন এই ব্যাটার – পুরো শ্রীলঙ্কাবাসী অবশ্য সেটাই দেখতে চায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link