অতি আত্মবিশ্বাসই লিটনের যম

জন্মদিনে নানাভাবে বিব্রত হওয়া যায়। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে ইনিংসের প্রথম বলে গোল্ডন ডাক মেরে ফিরে যাওয়ার মত চরম বিব্রতকর সম্ভবত আর কিছুই হতে পারে না। তেমনই এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হলো লিটন কুমার দাসকে। নান্দনিকতার ঝুড়ি খোলার আগেই লিটনকে বাক্সবন্দী করেন ট্রেন্ট বোল্ট।

বিশ্বকাপের আগে ফর্মহীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ভুগছিলেন লিটন দাস। তবে তিনি অবশ্য মানতে ছিলেন নারাজ। ক্রমশ যত দিন গিয়েছে নিজের বাজে সময়টা যেন চোখে আঙুল দিয়ে লিটনকে বুঝিয়ে দিয়েছে পরিস্থিতি। লিটন বেজায় চেষ্টা করেছেন ফিরে আসার।

বিশ্বকাপে পা রাখার পর প্রথম ইনিংসে সেই চেষ্টার প্রতিফলন ঘটেনি। তুলনামূলক সহজ আর বেশ পরিচিত প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুরুটা পেয়েও ইনিংস লম্বা হয়নি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে আশার প্রদীপ জ্বালালেন লিটন দাস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে হেরেছে দল। সেই ম্যাচে অবশ্য লিটন খেলেছেন ৭৬ রানের ইনিংস।

নিজের ফর্মে ফেরার একটা বার্তাই যেন দিতে চাইলেন। তবে দিন কতক যেতে না যেতেই পুরনো বৃত্তের মাঝে আবারও লিটনের আগমন। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় খেলার ধরণের পরিবর্তন আনতে হয়। আগের দিন যে পরিকল্পনা কার্য্যকর হয়েছে, নতুন দিনে সেই একই পরিকল্পনা কাজে আসবে না। তবে লিটন যেন বেমালুম তা ভুলে গেলেন।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পায়ের ব্যবহারটা করেছিলেন লিটন দারুণভাবে। সেখান থেকেই একটু আত্মবিশ্বাস ফিরে পান তিনি। সেই আত্মবিশ্বাস অতিবিশ্বাসের পরিণত হয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। শুরুতেই আলতো এক ইনসুইং বোল্টের।

এদিনও ডাউন দ্য উইকেটে আসলেন লিটন। পায়ের ব্যবহার করে খেলে ফেলেন এক উচ্চাভিলাষী শট। তাতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যাট হেনরির হাতে সহজ ক্যাচে পরিণত হয়ে নিজের জন্মদিনটাই ধূসর করে দিয়ে গেলেন লিটন কুমার দাস।

বরাবরই লিটনকে বেশ উঁচু মানের ব্যাটার হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত তিনি উঁচু মানের বটে। হ্যান্ড-আই কম্বিনেশন ভাল। মাঝ ব্যাটে খেলতে পারেন অধিকাংশ সময়। বলের উপরে গিয়ে খেলতে পারেন। ব্যাকফুটেও সাবলীল। একটা জায়গায় সম্ভবত সবচেয়ে পিছিয়ে লিটন। সেটা মানসিকতা। গেম অ্যাওয়ারনেস বলতে যা বোঝায় আরকি।

প্রায়শই দেখা যায় লিটন একটা অপ্রয়োজনীয় শট কিংবা হাফ-হার্টেড শট খেলে প্যাভিলনের পথ ধরেছেন। বিশ্বকাপে অন্তত তার আরও একটু সংযত হতেই হতো। বাংলাদেশ একেবারে নতুন এক ওপেনিং জুটি নিয়ে খেলছে এবারের বিশ্বকাপ। সেখানে অভিজ্ঞতায় অনেকটাই এগিয়ে লিটন। স্বাভাবিকভাবেই তার উপর দায়িত্ব থাকে দলকে একটা ভাল শুরু এনে দেওয়ার।

তবে গোটা ২০২৩ জুড়েই তিনি সেই কাজটি করতে হচ্ছেন ব্যর্থ। নিউজিল্যান্ডে বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্যে ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেই ম্যাচেই দলের অভিজ্ঞ ও সবচেয়ে আস্থাভাজন ওপেনার ফিরেছেন শূন্যরানে। এরপর যথারীতি যা হওয়ার তাই হয়েছে।

বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশ যখন বড় কিছুর করার স্বপ্ন দেখছে, তখন লিটনকে আসলে এগিয়ে আসতে হতো। তবে লিটন ব্যর্থতার গোলক ধাঁধায় নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। এই বিষয়টি যেমন টিম ম্যানেজমেন্টকে পীড়া দেয়, তেমনিভাবে পীড়া দেয় সমর্থকদেরও। লিটন ঠিক কবে ধারাবাহিক হবেন সেটা অজানা। তবে অতি-আত্মবিশ্বাস হয়ে সেই ফেরার পথটা লিটনই বরং বন্ধ করে দিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link