ম্যাচের আগে ভারতীয় অলরাউন্ডার ক্রুনাল পান্ডিয়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। স্থগিত করা হয় ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি। ক্রুনালের সংস্পর্শে আসা আট জন ক্রিকেটার তখন আইসোলেশনে। সিরিজ হবে কিনা সেটি নিয়েও ছিলো সংশয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোরগোল ছিলো সিরিজ বাতিল করে দেশে ফিরতে পারে ভারত দল। তবে সব সংশয় ধোয়াশা কাটিয়ে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে খেলতে নামে ভারত।
চার জনের অভিষেক এবং মাত্র পাঁচ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নিয়ে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামে ভারত। দলের আটজন ক্রিকেটার আইসোলেশনে! যার কারণে স্কোয়াডের বাকিদের নিয়েই পরিকল্পনা সাজাতে হয় রাহুল দ্রাবিড়কে। এদিকে বিপাকে পড়ে নেট বোলার হিসেবে আনা বাকিদেরকেও মূল দলে অন্তর্ভুক্ত করে ভারত।
কলম্বোর প্রেমাদাসার স্লো উইকেটে প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৩২ রান সংগ্রহ করে ভারত। পুরো ইনিংসে ভারতীয় কোনো ব্যাটসম্যানই টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিং করতে পারেনি। পরবর্তীতে লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ২ বল বাকি থাকতে চার উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় পায় লঙ্কানরা।
এক ওভার আগে পর্যন্ত ম্যাচে ভারতই ফেবারিট ছিলো। ১৯ তম ওভারে ভূবনেশ্বর কুমারের ফুলটসে চামিকা করুনারত্নের ছক্কাটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। প্রায় হারতে বসা ম্যাচ নিজেদের করে নেয় লঙ্কানরা।
ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ৩৪ বলে ৪০ রানের অপরাজিত ম্যাচজয়ী ইনিংস! এই উইকেটে নি:সন্দেহে সেরা একটা ইনিংস। দলের বিপর্যয়ে ব্যাট হাতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। বাকিরা আসা যাওয়ার মিছিলে থাকলেও চামিরা করুনারত্নেকে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই ব্যাটসম্যান।
শ্রীলঙ্কার জন্য স্বস্তির একটা জয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষ্প্রভ লঙ্কানদের জন্য এটা অবশ্যই বড় প্রাপ্তি। দীর্ঘদিন ২২ গজে সিংহের দাপট দেখা যায় না! না শোনা যায় সিংহের গর্জন। ধুঁকতে থাকা লঙ্কানরা অবশেষে দেখা পেলো অসাধারণ এক জয়ের। অবশ্য এই জয়কে বেশ কষ্টার্জিত জয়ও বলা চলে।
তবে এমন একটা পরিস্থিতিতে ভারত ম্যাচ খেলছে এটাও প্রশংসার দাবিদার। ব্যক্তিগত ভাবে মতামত, অন্যান্য কোনো দল হলে সিরিজ বাতিল করে দিতো! করোনা মহামারীতে এর আগেও দক্ষিণ আফ্রিকা- ইংল্যান্ডের সিরিজ বাতিল হয়েছে। এছাড়া করোনার ভয়ে বেশ কিছু সিরিজ স্থগিত করা হয়।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতের শেষ ওয়ানডেতে পাঁচজনের অভিষেক! এরপর আজকের ম্যাচে চারজনের অভিষেক। রাহুল দ্রাবিড় বিশ্বকাপের আগে ভারতের পুরো বেঞ্চ শক্তি পরখ করে নিলো। সেই সাথে তরুণ খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দারুণভাবে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হয়।
দ্রাবিড়ের এই মনোভাবটা বেশ ইতিবাচক। সিরিজের আগেও ভারতের দ্বিতীয় সারির দলের এই কোচ বলেছিলো চেষ্টা করবে স্কোয়াডের সবাইকে একবার হলেও সুযোগ দেওয়ার। এবং প্রায় সবাই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
ভারতীয় মিডিয়া এবং সমর্থকদের মতে রাহুল দ্রাবিড়ই এখন ভারত জাতীয় দলের কোচ হবার যোগ্য লোক। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে ওপর নির্ভর করবে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে রবি শাস্ত্রীর ভাগ্য!
একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থকরা স্কোয়াডে যথেষ্ট প্লেয়ার থাকা সত্ত্বেও ইনজুরি সহ পারিবারিক সমস্যা বা বিভিন্ন কারণে সিনিয়র ক্রিকেটারদের না থাকায় হায় হুতাশ করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কথাও যদি বলি কোনো সিনিয়র খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়ে টিম গঠন করবে এমন চিন্তা হয়তো তাঁরা কখনোই করে না।
টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে এক্সপেরিমেন্ট ব্যাপারটা তো পরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে পর্যন্ত নয় ব্যাটসম্যান খেলিয়েছে! যেখানে তাঁদের মূল দুই খেলোয়াড় ক্রেইগ আরভিন এবং শন উইলিয়ামস ছিলেন না। ভারতের এই আচরণটা দেশের ক্রিকেটের জন্য শিক্ষণীয় বটে!