নব্বই মিনিট, একজন ফুটবল ভক্ত জানে এই নব্বই মিনিটের প্রতিটা মুহূর্ত কতটা মূল্যবান। আবার যদি হয় রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থক তবে তো কথাই নেই। সেকেন্ডের শেষ কাটাটা থেমে না যাওয়া অবধি তো দম ফেলার সুযোগ নেই। ফুটবল মাঠের নব্বই মিনিটের মাহাত্ম্য বহু আগে থেকেই। তবে নতুন করে নব্বই মিনিটের প্রতিটা মুহূর্তের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করেছে ক্রিকেট বিশ্বও।
কেননা সম্প্রতি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি কর্তৃক বেঁধে দেওয়া হয়েছে নব্বই মিনিটের সময়সীমা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বোলিং দলকে তাদের ইনিংস শেষ করতে হবে বেঁধে দেওয়া এই সময়ের মধ্যেই। এর ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। শাস্তি আবার মিলবে মাঠেই। নব্বই মিনিটের পর প্রতিটা বলের জন্য অতিরিক্ত একজন ফিল্ডারকে থাকতে হবে ত্রিশ গজ সীমানার মাঝে। রীতিমত এক মানসিক চাপ।
ক্রিকেটের শেষ দিকে ওভারগুলোতে ব্যাটারদের পায়তারা থাকে দ্রুত রান সংগ্রহ করবার। এমন সময় বাউন্ডারি লাইনের কোন একটা জায়গায় ফিল্ডার কম থাকা মানেই অতিরিক্ত রান খরচ হবার সমূহ সম্ভাবনা। তবে নিয়মের বাইরে তো যাওয়ার সুযোগ নেই। তাইতো নব্বই মিনিটেই বোলিং ইনিংস শেষ করবার নানা রকম ফন্দি-ফিকির করতে শুরু করেছে দলগুলো। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া তো ঘোষণা দিয়েছেই, প্রতিটা ম্যাচেই তাদের ১৫ জন সদস্যই অংশ নেবেন।
সেটা আবার কি করে সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তর ইতোমধ্যেই হয়ত সবার জানা। তাঁরা বাউন্ডারি রেখার বাইরে রেখে দেবেন অতিরিক্ত চার জন খেলোয়াড়। যেন সেসব জায়গা থেকে বল কুড়িয়ে অতি দ্রুতই আবার খেলায় ফিরতে পারে অজি বোলাররা। খানিকটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলাই যায়। কেননা সেখানেও তো খানিকটা সময় ব্যয় হয়। সেটুকু সময় পরিকল্পনা সাজাতে ব্যয় করাই যায়। অস্ট্রেলিয়ার এই পদ্ধতি মনে ধরেছে টাইগার ক্রিকেট ম্যানেজমেন্টেরও।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ। হোবার্টে দিনভর বৃষ্টিপাত হতে পা রে এমন শঙ্কা মাথায় রেখেই খেলতে নামে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস। বৃষ্টি অবশ্য বাঁধা দিয়েছিল। তবে তাতে অবশ্য ডাচদের হার ঠেকানো যায়নি। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুর চাইতেও দুর্দান্ত শুরু হয়েছে বোলিং ইনিংস। শুরুর দুই বলে ডাচদের দুই উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। হল্যান্ডের ব্যাটারদের একেবারে ঠেসে ধরার মোক্ষম সময়।
সেটাই করবার চেষ্টা করল বাংলাদেশের গোটা ১৫ জন। মাঠের এগারো জনের বাইরেও অতিরিক্ত থাকা খেলোয়াড়রা বাউন্ডারি লাইন থেকে খেলায় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। দ্রুতই মাঠে ফেরত পাঠিয়েছেন বল। আগে অবশ্য এই কাজের জন্য বল বয়দের সাহায্য নেওয়া হত। তবে কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে সে সংস্কৃতি হয়েছে বিলীন। তাইতো খেলোয়াড়দেরই এগিয়ে আসতে হচ্ছে নিজেদের দলের স্বার্থে। আর দ্রুতই আবার আরেকটি বল ব্যাটারকে খেলতে বাধ্য করা ব্যাটারের মানসিক চাপ বাড়ায়।
এতে ব্যাটার ভাবার সুযোগটা পান কম। তাছাড়া দ্রুত ওভার শেষ হয়ে গেলেও মানসিক চাপটা আরও বেশি ঘনীভূত হয়। আর সে চাপেই বোলাররা নিজেদের পরিকল্পনা মাফিক কাজটুকু করে যেতে পারেন। আর ফলাফলও মেলে হাতে নাতে। এই যেমন বাংলাদেশ দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের মূল পর্বে জয় তুলে নিল। কষ্টার্জিত জয়, তাইতো বেশ আনন্দদায়ক।
তবে দলের অতিরিক্ত খেলোয়াড়দের এই ব্যবহারটা খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে বাকি দলগুলোর মাঝেও। যেমন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ভারতকেও এই পন্থা অবলম্বন করতে দেখা গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া হয়ত ঘোষণা দিয়ে কাজটি করছে। তবে বাকিরা খানিকটা নিঃশব্দেই কাজটা করে যাচ্ছে। তবে এই বিষয়টা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জয়প্রিয়তাকে আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিতেও পারে। যত বেশি উত্তেজনা তীব্র হবে, ততই তো তা হবে উপভোগ্য।