নায়ক সবসময় জয়ের হয় না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নায়ক হতে পারেন দুইজনও। এই যেমন ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর। ম্যানচেস্টার টেস্টে এরাই তো ভারতের নায়ক। ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের শঙ্কা উড়িয়ে, ম্যাচটাকে বাঁচালেন দুই অলরাউন্ডার মিলে। দু’জনেই তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। অবিশ্বাস্য বললেও, খুব একটা হয়না বাড়াবাড়ি।
ম্যানচেস্টার টেস্টের প্রথম ইনিংস শেষে ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল ৩১১ রানে। চতুর্থ দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগের মুহূর্তে ভারত এলো ব্যাটিংয়ে। শূন্য রানে নেই দুই উইকেট। ঠিক সেই সময় ইংল্যান্ডের পক্ষে জয়ের সকল সমীকরণ মেলাতে শুরু করেছিলেন সকলে মিলে।
তবে লোকেশ রাহুল আর শুভমান গিল, দুই জনে গড়ে তুললেন প্রতিরোধ। আর যাই হোক, পরাজয় মেনে নেওয়া যাবে না। কিন্তু তারাও বেশিক্ষণ স্থায়ী হলেন না পঞ্চম দিনে। শুভমান গিল শতক করলেন। লোকেশ রাহুল আউট হলেন তারও বহু আগে। ভারতের তখন সকল কিছু নির্ভর করছিল জাদেজা আর সুন্দরের উপর।
তারা নিরাশ করলেন না। গড়ে ফেললেন এক ম্যারাথন জুটি। ৫৫ ওভার ধরে তারা ইংলিশ বোলাদের চোখে চোখ রেখে লড়াইটা করে গেলেন। ঋষাভ পান্ত প্রয়োজনের মুহূর্তে ব্যাটিং করতে নামবেন, তবে তার শারীরিক অবস্থার উপর ভরসা করার উপায় খুব একটা ছিল না।
ম্যাচ থেকে ছিটকে যাবে ভারত, সিরিজ যাবে হাত থেকে ফসকে। এতসব সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে পাহাড়সম দৃঢ়তা দেখালেন জাদেজা-সুন্দর জুটি। ২০৩ রানের এক অটুট বন্ধন। যেই বন্ধনে টিকে রইল ভারতের সমস্ত সম্ভাবনার গল্প।
প্রথমে রবীন্দ্র জাদেজা তুলে নিলেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। এরপর তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ফিগার ছুঁয়ে দেখলেন সুন্দরও। কিন্তু জাদেজার চাইতেও তার জন্যে এই সেঞ্চুরি ছিল বড্ড বেশি ‘স্পেশাল’। কেননা এমন কঠিন মুহূর্তে যে তিনি নিজের ব্যাটিং সক্ষমতার প্রদর্শন ঘটিয়েছেন। ম্যাচ বাঁচিয়েছেন, দলের মান বাঁচিয়েছেন।
টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্মৃতি এর থেকে বর্ণিল হওয়ার উপায় কি আর আছে? তাইতো ১০১ রানে অপরাজিত থেকে তৃপ্তির চওড়া হাসি নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ওয়াশিনটন সুন্দর। অন্যদিকে জাদেজার ১০৭ রানের অপরাজিত ইনিংসটিও ভারতের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে একটা ‘স্টাডিকেস’ হয়ে রইবে।
টেস্টের পঞ্চম দিনে দাঁড়িয়ে এমন ইনিংস খেলা যে প্রশংসার উর্ধ্বে। ইংলিশ বোলারদের সকল পরিকল্পনার ছকে পানি ঢেলে দিয়েছেন দুইজনে মিলে। মস্তিষ্ক জুড়ে নানান শঙ্কার হিসেব-নিকেশ। ধমনীতে দুশ্চিন্তার ছোটাছুটি। এসবকিছু সামলে দূর্দান্ত জুটি গড়া মোটাও চাট্টিখানি কথা নয়। এই মহাকাব্যিক জুটি অমলিন হয়ে রইবে বহুকাল।