একটি জুম মিটিং ও একজন অধিনায়ক বদল

মিরাজ সেই অর্থে দলকে নিয়ে বা কোচকে নিয়ে কাজ করার সময়ও পাচ্ছেন না। ওয়ানডে বাংলাদেশের ‘প্রিয়’ ফরম্যাট। সেখানে ভরাডুবি হলে, যারা মিরাজকে হঠাৎ করে দায়িত্ব দিয়েছে সেই মহলটাই আবার মিরাজ-হটাও আন্দোলনে নেমে যেতে পারে।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে চলছে জমজমাট নাটক। গলে নয়, নাটকের শুরু হয়েছে ঢাকা থেকেই। পেশাদারিত্ব আর খেলোয়াড়দের প্রতি সম্মান—এই নিয়ে যত কথাই হোক না কেন, দেশ থেকে দল শ্রীলঙ্কা রওনা দেওয়ার আগে যা ঘটল তা একেবারেই সার্কাস।

একেবারে হুট করেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ঘোষণা দিল—নাজমুল হোসেন শান্ত আর ওয়ানডে অধিনায়ক নন। আগামী এক বছরের জন্য মেহেদী হাসান মিরাজকে দেওয়া হয়েছে দায়িত্ব। এর অর্থ, আসছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক মিরাজ।

ঘটনাটি ঘটেছে এক জরুরি জুম মিটিংয়ে। সেই বৈঠকে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম শান্তকে ধরে রাখার পক্ষেই ছিলেন। কিন্তু, তিনি বাকিদের রাজি করাতে পারেননি।

হাস্যকার বিষয় হল, যেদিন বিসিবি শান্তর ভাগ্য নিয়ে বৈঠকে বসে, সেদিনই শান্ত উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে। দুই ফরম্যাটের অধিনায়ক হিসেবে দলের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন, এমনকি দীর্ঘমেয়াদী অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার গুরুত্বের কথাও বলেন শান্ত।

অথচ, তিনি নিজে তখনও জানেন না ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে ছেটে ফেলতে চলেছে বিসিবি। তিনি তখনও প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে অধিনায়কের মতো করেই শ্রীলঙ্কা সিরিজ নিয়ে পরিকল্পনা করছিলেন।

ঠিক তখনই নাজমুল আবেদিন ফাহিমের ফোন আসে। শান্তকে জানানো হয়, তিনি আর ওয়ানডে অধিনায়ক নন, মিরাজ হচ্ছেন নতুন নেতা। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা থেকে আচমকা বাদ পড়ে শান্ত তখন কোচ সিমন্সকেও বিষয়টা অবগত করেন।

ঘটনাটা এতটাই আকস্মিক ছিল যে, শান্ত নিজেও প্রচণ্ড হতবাক হয়েছেন। টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকেও সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন—এমন আশঙ্কা গল টেস্ট চলাকালেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সতীর্থরাও বোর্ডের হঠাৎ নেওয়া এই সিদ্ধান্ত ভিষণ অবাক। এমনকি মিরাজ নিজেও দায়িত্ব পেয়ে পড়েছেন আকাশ থেকে।

অধিনায়কত্ব নিয়ে টুকটাক সমালোচনা থাকলেও শান্তর ব্যাটিং পারফরম্যান্স ইতিবাচক। ৪৯ ওয়ানডেতে তাঁর রান ১,৫৬৫, গড় ৩৪.৭৭। তিনটি সেঞ্চুরি আর দশটি হাফসেঞ্চুরি। অধিনায়ক হিসেবে ১৩ ম্যাচে করেছেন ৫৬৪ রান, গড় ৫১.২৭। হয়তো ১৩ ম্যাচে মাত্র চারটিতে জিতেছেন তিনি, তবে নেতৃত্বের যোগ্যতা নিয়ে তেমন কেউ আঙুল তোলেননি।

তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ অসুস্থ হয়েই এসেছেন শ্রীলঙ্কায়। এতটাই জ্বর ছিল যে তিনি বিমানবন্দরে ঠিকঠাক হাঁটতেও পারছিলেন না। টেস্ট দলে থাকলেও এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও মাঠে আসা সম্ভব হয়নি তাঁর। দুই জুলাই শুরু হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে সিরিজ।

এর আগে মিরাজ সেই অর্থে দলকে নিয়ে বা কোচকে নিয়ে কাজ করার সময়ও পাচ্ছেন না। র‌্যাংকিং যাই হোক, ওয়ানডে বাংলাদেশের ‘প্রিয়’ ফরম্যাট। সেখানে ভরাডুবি হলে, যারা মিরাজকে হঠাৎ করে দায়িত্ব দিয়েছে সেই মহলটাই আবার মিরাজ-হটাও আন্দোলনে নেমে যেতে পারে।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link