আর ৯ দিন পরে ৬৪ পূর্ণ করার কথা ছিল তাঁর। সেটা হয়নি। বলা, উচিৎ সেই সৌভাগ্যই হয়নি। তার আগেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে থেমে গিয়েছিল এক সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটারের জীবন। দিনটা ছিল ২০১৯ সালের ছয় সেপ্টেম্বর তারিখে।
তাঁর নিজের ২২ বছর বয়স থেকে ৩৮ বছর অবধি বিস্তৃত ক্রিকেটজীবন যেমন আচমকাই থেমে যেতে বাধ্য হয়েছিল, প্রায় তেমনই। ১৩ বছরের টেস্ট জীবনে (১৯৭৭ – ১৯৯০) ৬৭ টেস্টে ২৩৬ উইকেট (৫ বার ম্যাচে ১০ উইকেট আর ১৫ বার ইনিংসে ৫ উইকেট) নিয়েছিলেন এই লেগ স্পিনার ক্রিকেটার।
আর ১০ বছরের ‘একদিন’ জীবনে (১৯৮৩ – ১৯৯৩) ১০৪ ম্যাচে ১৩২ উইকেট (২ বার ইনিংসে ৫ উইকেট) ছিল তাঁর। লেগ স্পিন যদি ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিল্প হয়, তাতে আব্দুল কাদির হবেন অবিসংবাদিত এক শিল্পী।
আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ এই বোলিং পরিসংখ্যানই অসাধারণ মনে হয়, যখন ভাবা হয় তাঁর বোলিংয়ের সময় উল্টোদিকে কারা ব্যাট করেছেন!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভিভ রিচার্ডস থেকে ভারতের সুনীল গাভাস্কার, অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান বোর্ডার, ভারতীয় গ্রেট অলরাউন্ডার কপিল দেব থেকে ইংল্যান্ডের ‘ব্যাড বয়’ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম, নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা রিচার্ড হ্যাডলি, ইংল্যান্ডের ডেভিড গাওয়ার থেকে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার বরপুত্র ব্রায়ান লারা, অজিদের দানবীয় অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ, এমনকি প্রথম জীবনের ‘লিটল মাস্টার’ খ্যাত শচীন টেন্ডুলকারকে বল করতে হয়েছিল তাঁকে। বোঝাই যাচ্ছে – ক্রিকেটের কয়েকটা প্রজন্মের সাথে তিনি মিলে একাকার হয়েছেন।
ব্যাটিংও খুব খারাপ ছিলনা তার। ১০২৯ টেস্ট রান আর ৬৪১ ‘একদিন’ রান এসেছিল তার ব্যাট থেকে। যদিও, এগুলো ছাপিয়ে তাকে মনে রেখেছি অন্য আরো দু’টো কারণে।
প্রথমত, তিনি সত্যিটা বলতেন বুক চিতিয়ে। ২০০৪ সালে টিভি টক শো তে তাঁর বলা ‘সব সফল পাক ফাস্ট বোলারই বল করতেন বানানো বলে’ কথাটা প্রচুর বিতর্ক তৈরি করেছিল।
যার জেরে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল পিটিভি তাঁর সঙ্গে চুক্তি রদ করে। ‘বানানো’ বল বলতে ট্যাম্পার্ড বল বুঝিয়েছিলেন তিনি। এই কথাটা পাকিস্তানের বোর্ড বা বাকি সাবেকদের সহজ ভাবে নেওয়ার কথাও নয়।
দ্বিতীয়ত, বিরাট বড় মন ছিল তাঁর। ১৯৮৯ সালে শচীনের প্রথম সিরিজে এক প্রদর্শনী ম্যাচে (বৃষ্টিতে একদিনের ম্যাচ পন্ড হয়ে যাবার পরে ২০ ওভারের প্রদর্শনী ম্যাচ হিসেবে খেলা হয়) ১৮ বলে ৫৩ করার পথে শচীন তার এক ওভারে ৬,০,৪,৬,৬,৬, মোট ২৮ রান নিয়েছিলেন।
তখন ১৬ বছরের শচীনকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন এই বোলার, যাকে তখন বিশ্বের সেরা লেগ স্পিনার মানা হত।এই ওভারের আগেও তিনিই শচীনকে সাহস দিয়ে বলেছিলেন তাকে এক সাধারণ গলি ক্রিকেটের বোলার ভেবে খেলতে।
যত দিন লেগস্পিন বোলিং ক্রিকেটে থাকবে, ততদিন এই কিংবদন্তি আব্দুল কাদিরকে মনে রাখবে ক্রিকেট দুনিয়া। বিশ্ব ক্রিকেটের একটা লম্বা সময় প্রচুর বিনোদন ও একই সঙ্গে সিরিয়াস পারফরম্যান্স দিয়ে চিহ্ণিত করে দিয়েছিলেন আপনি, একার হাতের ঘূর্ণিতে। ভগবত সুব্রামানিয়াম চন্দ্রশেখরের পরে আপনার সময় পর্যন্ত লেগ স্পিনের রূপকথার গল্প আর কেউ শোনাননি আপনার মত করে।